আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তির জন্য ইসলামের সৌন্দর্য হচ্ছে, সে অর্থহীন কথা ও কাজ পরিহার করবে। ’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৩১৮)
উল্লিখিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) সব ধরনের অর্থহীন কথা ও কাজ পরিহার করতে বলেছেন। আমাদের সমাজে বহু মানুষ এমন আছে, যারা দিন-রাতের একটি উল্লেখযোগ্য সময় গালগল্পে কাটিয়ে দেয়। অথচ এই সময়ে বহু ইবাদত করা সম্ভব ছিল।
আল্লাহর হুঁশিয়ারি : মানুষের উদ্দেশ্যহীন কথাবার্তা বেশির ভাগ সময় মিথ্যা, গিবত, অপবাদ ও অশ্লীলতার চর্চা ইত্যাদি পাপের কারণ হয়। আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) এই বিষয়ে মানুষকে সতর্ক করেছেন। ওমর ইবনুল আবদুল আজিজ (রহ.) বলতেন, মানুষ পরস্পর যে বিষয়ে আলোচনা করে তার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আল্লাহ কোনো মঙ্গল রাখেননি। তিনি নিম্নোক্ত আয়াতকে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করতেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাদের বেশির ভাগ গোপন পরামর্শে কোনো কল্যাণ নেই, তবে কল্যাণ আছে যে নির্দেশ দেয় দান-খয়রাত, সৎকাজ ও মানুষের মধ্যে শান্তি স্থাপনের। ’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১১৪; জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম : ১৪/৭)
গালগল্প নিন্দনীয় কেন? : হাসান ইবনে আলী (রা.) বলেন, ‘অনর্থক কথা ও কাজে নিয়োজিত হওয়া বান্দার জন্য আল্লাহ থেকে বিমুখ হওয়ার নিদর্শন। ’ (জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম : ১৪/১০)
মারুফ কারকি (রহ.) বলেন, ‘বান্দার অনর্থক কথা আল্লাহকে পরিত্যাগ করার শামিল। ’ (জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম : ১৪/১০)
কিভাবে বুঝব অনর্থক কথা-কাজে লিপ্ত : অনর্থক কথা কাজ মানুষের শক্তি খর্ব করে এবং তার জীবনে নানা ধরনের ব্যর্থতা ঢেকে নিয়ে আসে। মালিক ইবনে দিনার (রহ.) বলেন, ‘যখন তোমার অন্তরে কাঠিন্য উপলব্ধি করবে, তোমার শরীরে দুর্বলতা দেখা দেবে এবং তোমার রিজিকে বঞ্চনা দেখা দেবে, তখন জেনে নিয়ো তুমি অনর্থক কথার মধ্যে লিপ্ত। ’ (ফয়জুল কাদির : ২/৩৩৫)
গালগল্প পরিহারে উপকার : অর্থহীন গালগল্পে সময় কাটানোর প্রবণতা পরিহার করলে আল্লাহ তাদের জ্ঞানের আলোয় প্রদীপ্ত করেন। কথিত আছে, লোকমান হাকিম (রহ.)-কে বলা হলো, ‘আমরা যা (জ্ঞানের প্রখরতা) দেখছি তা আপনি কিভাবে অর্জন করেছেন? তিনি বললেন, ‘সত্য কথা, আমানত রক্ষা ও অনর্থক কথা-কাজ পরিহার করার দ্বারা। ’ (আল ইসতিজকার : ৮/২৭৬)
অর্থহীন গল্পের প্রবণতা যেভাবে কাটবে : মনীষীরা অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকার কিছু উপায় বর্ণনা করেছেন। যেমন—
১. মৃত্যুর স্মরণ : ইমাম গাজ্জালি (রহ.) বলেন, ‘অনর্থক বিষয় ছেড়ে দেওয়ার উপায় হলো, জেনে নেওয়া যে নিশ্চয়ই মৃত্যু অতি নিকটে। আর সে যেসব কথা বলেছে, সে বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। তার সম্পদের মধ্যে মূল্যবান সম্পদ হলো তার নিঃশ্বাস বা জীবন। নিশ্চয়ই তার জিহ্বা জালের মতো যা তাকে শিকার ধরতে সক্ষম করে দেবে অর্থাৎ তা দিয়ে সে হুরুল-ইন শিকার করবে। কাজেই জীবনের প্রতি অবহেলা করা এবং অনর্থক কাজে তা নষ্ট করা সুস্পষ্টভাবে ক্ষতিকর। ’ (ইহইয়া উলুমুদ্দিন : ৩/১১৪)
২. আল্লাহর স্মরণ : কোনো কোনো আল্লাহপ্রেমী আলেম বলেছেন, ‘যখন কথা বলো, তখন স্মরণ রাখবে আল্লাহ তোমার কথা শুনছেন আর যখন চুপ থাকো তখন মনে রাখবে আল্লাহ তোমাকে দেখছেন। ’ (জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম : ১/১১৪)
৩. কথাকে আমল মনে করা : ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার কথাকে আমল হিসেবে গণ্য করে তার কথা কমে যাবে, সে শুধু তাই বলবে, যা তার উপকারে আসবে। ’ (জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম : ১৪/৭)
আল্লাহ সবাইকে অর্থহীন গল্প-গুজব থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দিন। আমিন