Sunday, March 26, 2023
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামগাইবান্ধা উপনির্বাচনের বার্তা, ভোটকেন্দ্রে অনিয়ম দূর করা বেশি জরুরি

গাইবান্ধা উপনির্বাচনের বার্তা, ভোটকেন্দ্রে অনিয়ম দূর করা বেশি জরুরি

অনিয়মের অভিযোগে গাইবান্ধা-৫ সংসদীয় আসনের পুরো উপনির্বাচন বাতিলের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি), এমনটি নিকট অতীতে আর ঘটেনি। সেদিক থেকে এ ঘটনা নজিরবিহীন হলেও অনিয়মের বিরুদ্ধে ইসির দ্রুত ও কঠোর পদক্ষেপ ইতিবাচক।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করা ইসির সাংবিধানিক দায়িত্ব-এই উপলব্ধি থেকে ইসি ভোট বাতিল করে থাকলে তা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।

উল্লেখ্য, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বি মিয়ার মৃত্যুতে গাইবান্ধা-৫ আসন শূন্য হওয়ায় বুধবার এ উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ভোটগ্রহণ শুরুর পর থেকেই বেশিরভাগ কেন্দ্রে ব্যাপক অনিয়ম এবং একতরফা প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠতে থাকে।

ভোটকেন্দ্রে স্থাপিত সিসি ক্যামেরার লাইভ ফুটেজে এসব অনিয়ম ধরা পড়ে। সিসি ক্যামেরায় একজনের ভোট আরেকজনকে দিতে এবং নির্বাচন কর্মকর্তাদের পক্ষপাতমূলক আচরণ করতে দেখা গেছে। সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তাদের ইভিএমে ভোট দিতে দেখা গেছে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে বিকালে রিটার্নিং অফিসারকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সিসি ক্যামেরায় সরাসরি তদারকিতে অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রের ভোটগ্রহণ কার্যক্রমে ব্যাপক অনিয়ম ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থতায় গাইবান্ধা-৫ আসনের নির্বাচনের সব ভোটকেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, ‘আমাদের কাছে মনে হয়েছে ভোটগ্রহণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।’

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে সঠিক ও আইনানুগ বলেই মনে করি আমরা। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর ৯১ অনুচ্ছেদে সঠিক ও স্বচ্ছভাবে ভোট না হলে নির্বাচন কার্যক্রম বন্ধ করার ক্ষমতা ইসিকে দেওয়া হয়েছে। সেদিক থেকে নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম দেখে ভোট বাতিল করে ইসি একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বলা যায়। এটি কিছুটা হলেও ইসির আস্থা পুনরুদ্ধারে সহায়ক হতে পারে। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার দায়িত্ব কেবল ইসির নয়।

ইসি, জেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দল-সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই একটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে পারে। গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে এই সম্মিলিত প্রয়াস দেখা যায়নি। যাদের কারণে নির্বাচনটি পণ্ড হয়েছে এবং যারা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে, এখন তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।

গাইবান্ধা-৫ আসনে উপনির্বাচন পণ্ড হওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছে, একটি আসনে ভোটগ্রহণে এমন অবস্থা সৃষ্টি হলে ৩০০ আসনে ভোটের সময় পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে? ইসি কীভাবে তা সামাল দেবে? ৩০০ আসনের ভোটগ্রহণ সিসি ক্যামেরায় তদারকি করা ইসির পক্ষে আদৌ সম্ভব কিনা?

নির্বাচন কমিশনের উচিত এসব বিষয় খতিয়ে দেখে যথাযথ করণীয় নির্ধারণ করা এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া। মনে রাখতে হবে, ভোটগ্রহণের পর অনিয়মের অভিযোগে নির্বাচন বাতিল করার চেয়ে ভোটকেন্দ্রে অনিয়ম দূর করা বেশি জরুরি। আর এক্ষেত্রে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্তদের যথাযথ দায়িত্ব পালনে বাধ্য করা যে কত জরুরি, এই উপনির্বাচন তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সবাইকে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments