Thursday, June 8, 2023
spot_img
Homeধর্মখেয়ালখুশির অনুসরণ সত্য গ্রহণে বড় বাধা

খেয়ালখুশির অনুসরণ সত্য গ্রহণে বড় বাধা

মানুষ নিজের বুঝের ওপর অটল থাকতে চায়। সে যা ভালো মনে করে, তা-ই করে। তার এই গোঁড়ামি তার জন্য সত্য অনুধাবন ও গ্রহণে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। নবী করিম (সা.) কোনো বিষয়ে গোঁড়ামি তথা বাড়াবাড়ি পছন্দ করতেন না।

তিনি বলেন, ‘অতিরঞ্জনকারীরা ধ্বংস হয়েছে। ’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬৭০)

এমনকি মহানবী (সা.) তাঁর নিজের ব্যাপারেও বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, তোমরা আমাকে নিয়ে বাড়াবাড়ি কোরো না, যেমন খ্রিস্টানরা ঈসা ইবনে মারিয়াম (আ.)-কে নিয়ে করেছে। আমি তো আল্লাহর বান্দা। সুতরাং তোমরা আমাকে আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসুলই বোলো। (বুখারি, হাদিস : ৩৪৪৫)

তিনি আরো বলেন, আমার উম্মতের দুই শ্রেণির লোক আমার সুপারিশ লাভ করতে পারবে না। অত্যাচারী রাষ্ট্রনেতা এবং প্রত্যেক বিপথগামী অতিরঞ্জনকারী। ’ (তাবারানি, সহিহুল জামে, হাদিস : ৩৭৯৮)

আর গোঁড়া ব্যক্তি কখনো পরিপূর্ণ ঈমানের অধিকারী হতে পারে না। মন যা চায়, বাছ-বিচার ছাড়া তা করা যাবে না। কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিচ্যুত করে দেয়। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘এ বিষয়ে প্রবৃত্তির অনুসরণ কোরো না। তাহলে তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয়, তাদের জন্য আছে কঠোর শাস্তি। এ কারণে যে তারা বিচার দিবসকে ভুলে গেছে। ’ (সুরা সোয়াদ, আয়াত : ২৬)

অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর যদি তারা তোমার কথায় সাড়া না দেয় তবে জানবে যে তারা শুধু তাদের খেয়ালখুশির অনুসরণ করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর হিদায়াত অগ্রাহ্য করে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তার চাইতে বেশি পথভ্রষ্ট আর কে আছে? নিশ্চয়ই আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে সুপথ প্রদর্শন করেন না। ’

(সুরা : কাসাস, আয়াত : ৫০)

সুতরাং খেয়ালখুশির অনুসরণের মাধ্যমে মানুষ সত্য পথ থেকে বিচ্যুত হয়। এমন লোকেরা হিদায়াত না পেয়ে পথভ্রান্ত হয়। তারা জাহান্নামের পথে ধাবিত হয়। আল্লাহ বলেন, ‘তাদের পরে এলো তাদের অপদার্থ উত্তরসূরিরা। তারা সালাত বিনষ্ট করল ও প্রবৃত্তির অনুসরণ করল। ফলে তারা অচিরেই জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। ’ (সুরা : মারিয়াম, আয়াত : ৫৯)

হুজায়ফা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, মানুষের মনে ফিতনা বা ভ্রষ্টতা এমনভাবে ঢেলে দেওয়া হয় যেভাবে খেজুরের মাদুর বা পাটি বুনতে একটা একটা করে পাতা ব্যবহার করা হয়। যে মনে ওই ফিতনা অনুপ্রবেশ করে তাতে একটা কালো দাগ পড়ে যায়। আর যে মন তা প্রত্যাখ্যান করে তাতে একটা সাদা দাগ পড়ে। এভাবে মনগুলো দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। এক. মসৃণ পাথরের মতো সাদা মন, যাতে কোনো ফিতনা বা পাপাচার আসমান-জমিন বিদ্যমান থাকা অবধি কোনোরূপ বিরূপ ক্রিয়া করতে পারবে না। দুই. কয়লার মতো কালো মন, যা উপুড় করা পাত্রের মতো, না সে কোনো ন্যায়কে বোঝে, না অন্যায়কে স্বীকার করে। তার প্রবৃত্তি বা কামনা-বাসনা তাকে যেভাবে পরিচালনা করে সেভাবেই শুধু সে পরিচালিত হয়। (মুসলিম, হাদিস : ১৪৪)

ওয়াহহাব ইবনু মুনাব্বিহ (রহ.) বলেন, দ্বিনের ওপর চলতে চরিত্রের যে গুণটি সবচেয়ে বড় সহায়ক তা হলো দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি বা নির্লোভ জীবন যাপন। আর যে দোষটি মানুষকে দ্রুত ধ্বংসের দিকে টেনে নেয় তা হলো প্রবৃত্তির অনুসরণ। প্রবৃত্তির অনুসরণের একটি হলো দুনিয়ার প্রতি আসক্তি। আর দুনিয়ার প্রতি আসক্তির মধ্যে আছে সম্পদ ও সম্মানের প্রতি মোহ। আর সম্পদ ও সম্মানের মোহে মানুষ হারামকে হালাল করে নেয়। এভাবে যখন হারামকে হালাল করে নেওয়া হয় তখন আল্লাহ তাআলা ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন। আর আল্লাহর ক্রোধ এমন রোগ, যার ওষুধ একমাত্র আল্লাহর সন্তোষ। আল্লাহর সন্তোষ এমন ওষুধ, যে তা পেলে কোনো রোগই ক্ষতি করতে পারবে না। আর যে তার রবকে খুশি করতে চায় তার নিজের মনকে নাখোশ করতে হয়। কিন্তু যে নিজের মনকে নাখোশ করতে রাজি নয় সে তার রবকে খুশি করতে পারে না। কোনো মানুষের ওপর দ্বিনের কোনো বিষয় ভারী মনে হলে সে যদি তা বর্জন করে তাহলে এমন একটা সময় আসবে যখন তার কাছে দ্বিনের কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। (মুসান্নাফ ইবনু আবি শায়বাহ, হাদিস : ৩৫১৬৮)

সুতরাং নিজের খেয়ালখুশির অন্ধ অনুসরণ পরিহার করতে হবে। হেয়ালিপনা ছেড়ে দিতে হবে। আত্মমুগ্ধ ও আত্মপূজারি হওয়া যাবে না। কেননা কুপ্রবৃত্তিপরায়ণ মানুষ নিজে যেমন সত্য পথ থেকে বিচ্যুত হয়, তেমনি সে অন্যকেও পথভ্রষ্ট করে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments