Sunday, October 1, 2023
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামখেলার মাঠে থানা নয়

খেলার মাঠে থানা নয়

তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা করুন

রাজধানীর কলাবাগানে সাধারণের ব্যবহার্য তেঁতুলতলা মাঠে থানা ভবন নির্মাণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায় সাংস্কৃতিক কর্মী সৈয়দা রত্না ও তার ছেলেকে বিনা ওয়ারেন্টে তুলে নিয়ে থানা হাজতে টানা ১৩ ঘণ্টা আটকে রাখার ঘটনায় জনমনে স্বভাবতই ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

তাদের ‘মাঠ রক্ষার আন্দোলনে আর শামিল হব না’ মর্মে অঙ্গীকারযুক্ত মুচলেকায় সই করিয়ে ছেড়ে দেওয়া হলেও এ ঘটনা জন্ম দিয়েছে নানা প্রশ্নের। প্রথমত, এ নগরীতে মাঠের সংখ্যা কমে আসার প্রেক্ষাপটে যেখানে প্রতিটি ওয়ার্ডে অন্তত একটি করে খেলার মাঠ বা পার্ক তৈরির কথা বলেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী, সেখানে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কীভাবে একটি মাঠকে থানা ভবন নির্মাণের জন্য বেছে নিল?

দ্বিতীয়ত, এ নির্মাণকাজ কি তারা আইনসংগতভাবে শুরু করেছে? উল্লেখ্য, রাজউকের অধিক্ষেত্র এলাকায় যে কোনো ধরনের স্থাপনা বা ইমারত নির্মাণ করতে হলে এ প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নিতে হয়। এছাড়া স্থাপনার নকশা অনুমোদনের আগে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র নিতে হয়। তেঁতুলতলা মাঠে স্থাপনা নির্মাণের আগে পুলিশ কি তা নিয়েছিল? যদি তা না নিয়ে থাকে, তাহলে প্রশ্ন ওঠে-আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বেআইনি কাজ করলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পাবে কী করে? পুলিশ তো আইনের ঊর্ধ্বে নয়।

তেঁতুলতলা মাঠে থানা ভবন নির্মাণের বিষয়টি সামনে আসে ২০২০ সালের আগস্টে। সেসময় ঢাকা জেলা প্রশাসনের এক নোটিশে জমিটিকে পতিত হিসাবে দেখানো হয়। এরপর কলাবাগান থানার নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য অধিগ্রহণের প্রস্তাবের কথা জানায় জেলা প্রশাসন। এ সংক্রান্ত নোটিশের পর থেকেই স্থানীয়রা জায়গাটিকে মাঠ হিসাবে রাখার দাবি জানিয়ে আসছে। গত জানুয়ারিতে তেঁতুলতলা মাঠে খেলতে যাওয়া কয়েকটি শিশুর কান ধরে ওঠবস করায় পুলিশ। এ ঘটনাও তখন ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। আমরা মনে করি, খেলার মাঠ রক্ষার দাবি জানানো নাগরিকদের সামাজিক দায়িত্ব। সেক্ষেত্রে তেঁতুলতলা মাঠে থানা ভবন নির্মাণ নিয়ে পুলিশ যে আচরণ করছে, তা নিন্দনীয় এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের শামিল।

পুলিশের নিজস্ব থানা ভবনের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করেই আমরা বলতে চাই-খেলার মাঠ বা পার্কে নয়, বিকল্প স্থান খুঁজে বের করে থানা ভবন নির্মাণ করা যেতে পারে। স্বাধীনতার পর থেকে তেঁতুলতলা মাঠে শিশু-কিশোরেরা খেলা করে এসেছে। পাশাপাশি সেখানে ঈদের নামাজ, জানাজাসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান হয়। মাঠটি সংরক্ষণ করা এলাকাবাসীর নাগরিক অধিকার।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিবের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, ‘তেঁতুলতলা মাঠটি সংরক্ষণের জন্য নির্মাণকাজ দ্রুত বন্ধ করতে হবে। এছাড়া মাঠটি রক্ষায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও রাজউককে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। পাশাপাশি সৈয়দা রত্না, তার পরিবার এবং আন্দোলনে যুক্ত এলাকাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’ আমরা আশা করব, মাঠটি রক্ষার বিষয়ে পুলিশের বোধোদয় হবে এবং অবিলম্বে সেখানে সব ধরনের নির্মাণকাজ বন্ধ করা হবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments