Friday, July 26, 2024
spot_img
Homeধর্মখাওলা (রা.): সাহসিকতায় যে নারী ছিলেন খালিদের সমতুল্য

খাওলা (রা.): সাহসিকতায় যে নারী ছিলেন খালিদের সমতুল্য

খাওলা বিনতে আজওয়ার (রা.) ছিলেন একজন প্রতিভাবান কবি ও সাহসী যোদ্ধা। সাহসিকতা ও বীরত্বে যাকে খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.)-এর সঙ্গে তুলনা করা হয়। উসমান ইবনে আফফান (রা.)-এর শাসনামলের শেষ ভাগে তিনি ইন্তেকাল করেন। বনু আসাদ গোত্রের এই কন্যারূপে ও গুণে, জ্ঞান ও বিচক্ষণতায় ছিলেন অদ্বিতীয়।

খাওলা (রা.) ছিলেন আরবের ধনাঢ্য ও নেতৃস্থানীয় পরিবারের সন্তান। বীরত্ব ও সাহসিকতায় যুগ যুগ ধরে তাঁর পরিবারের সুখ্যাতি ছিল। ফলে পারিবারিক পরিমণ্ডলেই তিনি জ্ঞান ও সমরবিদ্যা চর্চার সুযোগ পান। ইসলাম গ্রহণের পর তার পুরো পরিবার ইসলামের জন্য নিজেদের জীবন ও সম্পদ উৎসর্গ করে।

বীরত্বের নানা উপাখ্যান : খাওলা বিনতে আজওয়ার (রা.)-এর ভাই দিরার (রা.) বৃহত্তর শাম তথা বর্তমান সিরিয়া, জর্দান ও ফিলিস্তিন অঞ্চল জয়ে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। ভাইয়ের সঙ্গে তিনিও বহু যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। ৬৩৬ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত বাইজানটাইন সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে সংঘটিত ইয়ারমুকের যুদ্ধ তার একটি। এই যুদ্ধের চতুর্থ দিনে বাইজানটাইন বাহিনীর বিরুদ্ধে তিনি একদল নারীর নেতৃত্ব দেন এবং এ যুদ্ধেই তিনি এক গ্রিক যোদ্ধার সঙ্গে লড়াই করে বাইজানটাইন সৈন্যদের মনে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেন।

৬৩৪ সালে ‘সানিতা-উল-উকাব’ (দামেস্কাস ঘেরাওয়ের সময় সংঘটিত যুদ্ধ) যুদ্ধে তিনি প্রথম প্রতিভার পরিচয় দেন। এই যুদ্ধে তাঁর ভাই দিরার মুসলিম বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। একপর্যায়ে তিনি আহত হন এবং বাইজানটাইন বাহিনীর দ্বারা বন্দি হন। এ সময় খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.) তাঁর বিশেষ টহল দল দিরারকে উদ্ধারের জন্য প্রস্তুত হন। কিন্তু তার আগেই খাওলা (রা.) মুসলিম বাহিনীকে সংঘবদ্ধ করে পাল্টা আক্রমণ করেন। সেদিন তিনি এমন বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন যে যতক্ষণ না খালিদ (রা.) এসে উপস্থিত হয়, ততক্ষণ বহু মুসলিম সৈন্য খাওলা (রা.)-কেই খালিদ ভাবছিলেন। অবশেষে শত্রু বাহিনী পরাজিত এবং পালিয়ে যায়। তিনি তাঁর ভাইকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন। যুদ্ধশেষে খালিদ খাওলাকে রক্তাক্ত অবস্থায় খুঁজে পান এবং তাঁর পরিচয় জানতে চান। প্রথমে অসম্মতি জানালেও শেষ পর্যন্ত তিনি নিজের পরিচয় প্রকাশ করেন। সেনাপতি শুরাহবিল ইবনে হাসানা খাওলা (রা.) সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘এই যোদ্ধা খালিদ বিন ওয়ালিদের মতোই যুদ্ধ করে; কিন্তু আমি নিশ্চিত যে সে খালিদ নয়। ’

অন্য একটি যুদ্ধে খাওলা (রা.) রোমানদের হাতে বন্দি হন। তাঁকে অন্য বন্দিদের সঙ্গে শত্রুদের তাঁবুতে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর তাঁকে রোমান সেনাপতির তাঁবুতে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। তখন তিনি অন্য বন্দি নারীদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ করেন। নারী বন্দিরা তাঁবুর খুঁটিগুলো অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে রোমান সৈন্যদের ওপর আক্রমণ করলেন। আল ওয়াকিদির মতে, তাঁরা ৩০ জন রোমান সেনাকে হত্যা করেন। এক খ্রিস্টান অধিনায়ক খাওলা (রা.)-কে বন্দি অবস্থায় বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। তিনি তাকেসহ মোট পাঁচজন সেনাকে একাই হত্যা করেন।

উল্লেখ্য, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ২৮ জন নারী সাহাবির নাম ছিল খাওলা। ফলে খাওলা বিনতে আজওয়ার (রা.)-এর পরিচয় নির্ণয়ে ঐতিহাসিকদের ভেতর কিছুটা মতভিন্নতা আছে। কিন্তু গবেষক আইমান জাগুল আল্লামা ওয়াকেদি, আল্লামা ইবনে কাসির ও আল্লামা জারকানি (রহ.)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে দাবি করেছেন, বীরাঙ্গনা সাহাবি খাওলা বিনতে আজওয়ার ছিলেন সেনাপতি দিরার বিন আজওয়ার (রা.)-এর বোন। আর তিনিই তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে একাধিক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন।

তথ্যসূত্র : আল-মারয়াতুল আরাবিয়্যা ফি জাহিলিয়্যাতিহা ওয়া ইসলামিহা, পৃষ্ঠা ৯৬; মাউদু ডটকম ও উইকিপিডিয়া

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments