এ আদেশ শুনে আমি নিরাশ হয়ে গেলাম। মনে মনে ভাবলাম, এই সামান্য দুধ দ্বারা সুফফাবাসীদের কী হবে? এ সামান্য দুধ আমার জন্যই যথেষ্ট হতো। এটা পান করে আমার শরীরে শক্তি আসত। যখন তাঁরা এসে গেলেন, তখন তিনি আমাকে আদেশ দিলেন, আমিই যেন তাঁদেরকে দিই। আর আমার আশা রইল না যে এ দুধ থেকে আমি কিছু পাব। কিন্তু আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশ না মেনে কোনো উপায় নেই। তাই তাঁদের কাছে গিয়ে তাঁদেরকে ডেকে আনলাম। তাঁরা এসে ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি চাইলে তিনি অনুমতি দিলেন। তাঁরা এসে আসন গ্রহণ করলেন।
তিনি বললেন, হে আবু হির! আমি বললাম, আমি উপস্থিত হে আল্লাহর রাসুল, তিনি বললেন, তুমি পেয়ালাটি নাও আর তাদেরকে দাও। আমি পেয়ালা নিয়ে একজনকে দিলাম। তিনি তা তৃপ্ত হয়ে পান করে পেয়ালাটি আমাকে ফিরিয়ে দিলেন। আমি আরেকজনকে পেয়ালাটি দিলাম। তিনিও তৃপ্ত হয়ে পান করে পেয়ালাটি আমাকে ফিরিয়ে দিলেন। এমনকি আমি এভাবে দিতে দিতে শেষতক নবী (সা.) পর্যন্ত পৌঁছলাম। তাঁরা সবাই তৃপ্ত হলেন।
তারপর নবী (সা.) পেয়ালাটি নিজ হাতে নিয়ে মৃদু হাসলেন। আর বললেন, হে আবু হির! আমি বললাম, আমি হাজির হে আল্লাহর রাসুল, তিনি বলেন, এখন তো আমি আছি আর তুমি আছ। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি ঠিক বলেছেন। তিনি বললেন, এখন তুমি বসো এবং পান করো। তখন আমি বসে পান করলাম। তিনি বলেন, তুমি আরো পান করো। আমি আরো পান করলাম।
তিনি আমাকে পান করার নির্দেশ দিতেই থাকলেন। এমনকি আমি বললাম যে আর না। যে সত্তা আপনাকে সত্য দ্বিনসহ পাঠিয়েছেন, তাঁর কসম। আমার পেটে আর জায়গা পাচ্ছি না। তিনি বললেন, তাহলে আমাকে দাও। আমি পেয়ালাটি তাঁকে দিলাম। তিনি আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং বিসমিল্লাহ বলে বাকিটুকু পান করলেন। (বুখারি, হাদিস : ৬৪৫২)
সহিহ বুখারির বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল বারিতে আল্লামা ইবনে হাজার (রহ.) উল্লিখিত হাদিস থেকে মুমিনের জীবনঘনিষ্ঠ ১৫টি বিধান ও শিক্ষা উল্লেখ করেছেন। নিম্নে ধারাবাহিক উল্লেখ করা হলো :
(১) বসে পান করা মুস্তাহাব।
(২) মেহমানদের কিছু পান করানোর সময় খাদেম নিজে পরিবেশন না করে পাত্র তাদের হাতে এভাবে ছেড়ে দেওয়া যে একজনের পান করা শেষ হলে সে তার পাশের সাথিকে পান করতে দেবে, এটা উচিত নয়। কেননা এটা মেহমানকে অসম্মানের শামিল।
(৩) এ ঘটনায় নবীজির বিরাট মুজিজা নিহিত রয়েছে।
(৪) অভাব-অনটনের কথা প্রকাশ করা ও ঘোষণা দেওয়া থেকে তা গোপন রাখা বা এর ইঙ্গিত দেওয়া শ্রেষ্ঠতর।
(৫) রাসুল (সা.)-এর উদারতা ও তাঁর নিজের, তাঁর খাদেমের ও তাঁর পরিবার-পরিজনের স্বার্থ ত্যাগ।
(৬) নবী (সা.)-এর যুগে কিছু সাহাবির অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল সংকটময়।
(৭) আহলে সুফফার মর্যাদা সুপ্রমাণিত।
(৮) আমন্ত্রিত ব্যক্তি আমন্ত্রণকারীর বাড়িতে এসে বিনা অনুমতিতে যেন প্রবেশ না করে।
(৯) আবু বকর (রা.) ও ওমর (রা.) নবী (সা.)-এর সব সময়ের সহযোগী এর প্রমাণ বহন করে।
(১০) বড়রা তাদের খাদেমের উপনাম ধরে ডাকতে পারে।
(১১) কাউকে ডাকার সময় নাম সংক্ষিপ্ত করা যায়। যেমন- আবু হুরায়রাহ (রা.)-কে রাসুল (সা.) ইয়া আবা হির বলে ডাকতেন ।
(১২) নবী (সা.) হাদিয়া বা উপঢৌকন গ্রহণ করতেন এবং খেতেন। কিন্তু সাদকা খেতেন না, বরং তা হকদারদের মধ্যে বণ্টন করে দিতেন।
(১৩) আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দিতে সম্বোধিত ব্যক্তি ‘লাব্বাইকা’ বলতে পারে।
(১৪) খাদেমকে মালিকের ঘরে প্রবেশকালে অনুমতি নিতে হবে।
(১৫) পরিবেশনকারী শেষে পান করবে আর বাড়ির মালিক তার পরে পান করবে। (ফাতহুল বারি ১১/২৮৮)