কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে ফের সুস্থ হয়েছেন সিরিয়ার বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার ও বিশ্বব্যাপী সমাদৃত পবিত্র কোরআনের লিপিকার উসমান তোহা। সস্ত্রীক করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ১৩ দিন চিকিৎসা গ্রহণের পর এখন ঘরে অবস্থান করছেন। তাঁর স্ত্রী ফাতিমা উম্মে নুর বলেন, হাসপাতালে থাকাকালে তিনি বক্ষব্যাধিতে আক্রান্ত ছিলেন। হাসপাতালের আগে পাঁচ মাস বাসায় অবস্থান করেন তিনি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি এখন বিশ্রামে আছেন। করোনাকালে বাসায় অবস্থান করেও নিজের শিল্পচর্চা অব্যাহত রেখেছেন এই গুণী ক্যালিগ্রাফার। সৌদি আরবের মদিনায় অবস্থিত কোরআনের বিখ্যাত মুদ্রণপ্রতিষ্ঠান কিং ফাহাদ কমপ্লেক্সের প্রসিদ্ধ ক্যালিগ্রাফার উসমান তোহা। কিং ফাহাদ কোরআন কমপ্লেক্সে দীর্ঘকাল কোরআনের লিপিকর্মে সম্পৃক্ত। সৌদি আরবের বিতরণকৃত কোরআনের ক্যালিগ্রাফার তিনি।
১৯৩৪ সালে সিরিয়ার হালব নগরে জম্মগ্রহণ করেন উসমান তোহা। তাঁর পিতা শায়খ আবদুহু হোসাইন তোহা স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম, খতিব ও সুদক্ষ ক্যালিগ্রাফার ছিলেন। ছোটবেলায় লিপি শিল্পের মৌলিক শিক্ষা পিতার কাছ থেকেই গ্রহণ করেন। সিরিয়ার বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফারদের কাছ থেকে হাতে-কলমে শিক্ষা অর্জন করেন তিনি। আরবি লিপিকলার প্রসিদ্ধ ‘খাত্তুর রুকআ’ রীতিতে দক্ষ ছিলেন তাঁর বাবা। সিরিয়ার ক্যালিগ্রাফার মুহাম্মাদ মাওলায়ি, মুহাম্মাদ আল খাতিব, হুসাইন তুর্কি ও ইবরাহিম রিফায়ির কাছে তিনি ক্যালিগ্রাফি শেখেন।
১৯৬৪ সালে দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী শরিয়া বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ১৯৬৫ সালে শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ে ডিপ্লোমা করেন। শামের বিখ্যাত লিপিকার উসতাজ মুহাম্মাদ বাদাবি দিরানির কাছে দীর্ঘ সাত বছর পর্যন্ত ফারসি লিপি শেখেন। ১৯৭০ সালে সিরিয়ার আওকাফ মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রথমবারের মতো পবিত্র কোরআনের অনুলিপি তৈরি করেন। ১৯৮৮ সালে সৌদি আরবের কিং ফাহাদ কমপ্লেক্সে কোরআন অনুলিপির কাজে যুক্ত হন। এ সময় তিনি ‘মাসহাফ উসামান’ রীতিতে কোরআন লিখতেন। কিং ফাহাদ কমপ্লেক্সে এসে তিনি কোরআনের চারটি অনুলিপি তৈরি করেন। তাঁর অনুলিপি করা কোরআনের কোটি কোটি কপি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিতরণ করা হয়। উসমান তোহা প্রায় ১৩ বারের মতো পুরো কোরআনের অনুলিপি তৈরি করেন। তাঁর কোরআন লিপির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, পৃষ্ঠা শেষ হলে আয়াতও শেষ হয়। অর্থাৎ আয়াতের খণ্ডিত অংশ অন্য পৃষ্ঠায় যায় না।
অজু করে নির্ধারিত কলম দিয়ে কোরআন অনুলিপি করেন উসমান তোহা। গভীর মনোযোগ ও ধ্যানের সঙ্গে কাজ করেন তিনি। নিজের একটি ঘটনা বর্ণনা দিয়ে উসমান তোহা বলেন, কিং ফাহাদ কমপ্লেক্সের ভেতর একবার তিনি নির্ধারিত কলম দিয়ে লেখা শুরু করেন। কিন্তু অনেক চেষ্টার পরও কলম লিখছিল না। তখন তাঁর মনে পড়ল, তিনি অজু অবস্থায় নেই। অজু করে এসে ফের লিখতে বসেন। তখন কলম লিখতে শুরু করে।
পিতার নির্দেশনা মেনেই আরবের বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার হন উসমান তোহা। পিতার স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, “বাবা ছোটবেলায় আমাকে বলেছিল, ‘পুত্র, আমার কথা শোনো। তুমি খুবই মেধাবী। ক্যালিগ্রাফির মধ্যে বেশি সময় ব্যয় করবে না। আগে ইলম অর্জন করো। সময় নষ্ট কোরো না। নতুবা তুমি মূর্খ ক্যালিগ্রাফার হবে। তাই ভালো করে পড়ো। তাহলে তুমি বড় আলেম হবে এবং ক্যালিগ্রাফারও হবে।’” সাধারণত ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত সবাইকে লেখার সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু উসমান তোহা ৮৬ বছয় বয়সেও একাধারে লিখে চলছেন। তিনি বলেন, ‘এ বয়সে এসেও আমি ক্লান্ত হই না। আমার ইচ্ছা, অন্যান্য বর্ণনা মতেও পুরো কোরআনের অনুলিপি করব আমি। আমি কখনো ক্লান্তিবোধ করি না। এখনো আমি লিখে যাচ্ছি। আল্লাহ যেন আমাকে অন্য বর্ণনার পুরো কোরআন অনুলিপি করার সুযোগ করে দেন।’
সূত্র : আরব নিউজ, কিং ফাহাদ কোরআন কমপ্লেক্স ওয়েবসাইট