Friday, July 26, 2024
spot_img
Homeধর্মকেমন হবে পরকালের হিসাব-নিকাশ

কেমন হবে পরকালের হিসাব-নিকাশ

পরকালে পৃথিবীর সব মানুষকে তার ভালো ও মন্দ কাজের হিসাব দিয়েই অগ্রসর হতে হবে। কোনো মানুষ কৃতকর্মের হিসাব এড়িয়ে যেতে পারবে না। তবে যারা আল্লাহর নিকটতম বান্দা, তাদের হিসাব সহজ হবে এবং যারা আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত তাদের হিসাব হবে কঠিন। প্রকৃতপক্ষে মৃত্যুর পরই মানুষের হিসাব শুরু হয়ে যায়।

এ জন্য পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের হিসাব-নিকাশের সময় আসন্ন, কিন্তু তারা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে আছে। ’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ১)

নিম্নে পরকালীন হিসাব-নিকাশের কিছু বর্ণনা কোরআন-হাদিসের আলোকে তুলে ধরা হলো—

১. হিসাব এড়ানোর উপায় নেই : কিয়ামতের দিন কোনো ব্যক্তি তার কৃতকর্মের হিসাব এড়িয়ে যেতে পারবে না। ভালো ও মন্দ কাজ যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন, পরকালে তার হিসাব দিতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘কিয়ামতের দিন আমি স্থাপন করব ন্যায়বিচারের মানদণ্ড। সুতরাং কারো প্রতি কোনো অবিচার করা হবে না এবং কাজ যদি তিল পরিমাণ ওজনেরও হয়, তবু তা আমি উপস্থিত করব। হিসাব গ্রহণকারী হিসেবে আমিই যথেষ্ট। ’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৪৭)

২. আত্মগোপনের সুযোগ থাকবে না : ইহকালে মানুষ অপরাধ করার পর আত্মগোপন করে থাকে, কিন্তু পরকালে মানুষ আত্মগোপন করে থাকার সুযোগ পাবে না। সেদিন বলা হবে, ‘হে অপরাধীরা! তোমরা আজ পৃথক হয়ে যাও। ’ (সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ৫৯)

৩. সাক্ষ্য দেবে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ : মহাহিসাবের দিন মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি আজ তাদের মুখ মোহর করে দেব, তাদের হাত কথা বলবে আমার সঙ্গে এবং তাদের চরণ সাক্ষ্য দেবে তাদের কৃতকর্মের। ’ (সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ৬৫)

৪. সব আমল উপস্থিত করা হবে : পরকালে হিসাবের সময় মানুষের পূর্বাপর সব আমল উপস্থিত করা হবে। আল্লাহ বলেন, ‘সেদিন মানুষকে অবহিত করা হবে সে কী আগে পাঠিয়েছে এবং কী পেছনে রেখে গেছে। ’ (সুরা : কিয়ামা, আয়াত : ১৩)

৫. হিসাব নয়, অনুগ্রহে মুক্তি : পরকালে কেউ নিজের আমলের হিসাব দিয়ে মুক্তি পাবে না। মানুষের মুক্তি মিলবে আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কিয়ামতের দিন যার হিসাব নেওয়া হবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৫৩৭)

৬. মুমিনের হিসাব হবে সহজ : তবে আল্লাহ তাঁর মুমিন বান্দাদের হিসাব সহজ করবেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যাকে তার আমলনামা তার ডান হাতে দেওয়া হবে, তার হিসাব-নিকাশ সহজেই নেওয়া হবে। ’ (সুরা : ইনশিকাক, আয়াত : ৭-৮)

৭. অবিশ্বাসীর হিসাব হবে কঠিন : বিপরীতে যারা অবিশ্বাসী ও অবাধ্য হবে, তাদের হিসাব হবে অত্যন্ত কঠিন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘এবং যাকে তার আমলনামা তার পৃষ্ঠের পেছন দিক থেকে দেওয়া হবে, সে অবশ্যই তার ধ্বংস কামনা করবে এবং জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে। ’ (সুরা : ইনশিকাক, আয়াত : ১০-১২)

৮. হিসাব থেকে রেহাই পাবে কেউ কেউ : আল্লাহ তাঁর কতিপয় বান্দার প্রতি বিশেষ অনুগ্রহ করবেন। ফলে তিনি তাদের হিসাব থেকে মুক্তি দেবেন। তিনি তাদের বলবেন, ‘নিশ্চয়ই আমি দুনিয়ায় তোমার অপরাধ আড়াল করেছিলাম, আজ আমি তোমার সে অপরাধ ক্ষমা করে দিলাম। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০৭০)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমার মহান প্রতিপালক আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তিনি আমার উম্মতের ৭০ হাজার লোককে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবেন এবং তাদের কোনো রকম শাস্তিও হবে না। প্রতি হাজারের সঙ্গে থাকবে আরো ৭০ হাজার করে এবং আরো থাকবে আমার মহান প্রতিপালকের তিন মুঠো পরিমাণ। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২৮৬)

৯. নামাজের হিসাব সবার আগে : কিয়ামতের দিন সবার আগে মানুষের নামাজের হিসাব দেওয়া হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কিয়ামতের দিন বান্দার কাছে সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব নেওয়া হবে। নামাজ পুরোপুরি আদায় করে থাকলে তো ভালো কথা, অন্যথায় আল্লাহ বলবেন, দেখো! আমার বান্দার কোনো নফল নামাজ আছে কি না? নফল নামাজ থাকলে বলবেন, এই নফল নামাজ দ্বারা ফরজ নামাজ পূর্ণ করে দাও। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৪৬৭)

১০. নিষ্ঠাপূর্ণ আমলই গ্রহণযোগ্য হবে : কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে নিষ্ঠাপূর্ণ আমলই গ্রহণ করা হবে, যে আমল কেবল মহান আল্লাহর উদ্দেশে করা হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদিসে বলা হয়েছে, কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে একজন শহীদ, একজন আলেম ও একজন কারিকে উপস্থিত করা হবে। তারা নিজেদের আমল ও অবদান তুলে ধরবে। কিন্তু আল্লাহ বলবেন, তোমরা তা করেছ মানুষের বাহবা পাওয়ার জন্য এবং তোমরা তা পেয়েছ। সুতরাং তোমরা আজ আমার কাছ থেকে কিছুই পাবে না। আল্লাহ তাদের সবাইকে জাহান্নামে প্রেরণ করবেন। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩১৩৭)

১১. হিসাব থেকে মুক্তিলাভের সহজ উপায় : পরকালের হিসাবে মুক্তি পাওয়ার সহজ উপায় হলো মহান আল্লাহর নির্দেশ মান্য করা এবং পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা। আল্লাহর কাছে পাপের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মঙ্গল তাদের জন্য, যারা তাদের প্রতিপালকের আহ্বানে সাড়া দেয় এবং যারা তাঁর ডাকে সাড়া দেয় না, তাদের যদি পৃথিবীতে যা কিছু আছে, তা সবই থাকত এবং তার সঙ্গে সমপরিমাণ আরো থাকত, তারা মুক্তিপণস্বরূপ তা দিত। তাদের হিসাব হবে কঠোর এবং জাহান্নাম হবে তাদের আবাস, তা কত নিকৃষ্ট আশ্রয়স্থল!’ (সুরা : রাআদ, আয়াত : ১৮)

আল্লাহ সবাইকে পরকালের কঠিন হিসাব থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments