আল্লাহ তাআলা বান্দাকে যখন যে অবস্থায় রাখেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকা উচিত। আল্লাহ তাআলা আমাদের যে সুস্থতা, সামর্থ্য ও বিবেক-বুদ্ধি দান করেছেন তার ওপর কৃতজ্ঞতা আদায় করা উচিত। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একজন মানুষ আল্লাহ তাআলার যে পরিমাণ নিয়ামত উপভোগ করে তা কল্পনাতীত। সুস্থ দেহ, সুস্থ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, সুস্থ মন, মনোরম পরিবেশ—সব কিছুই আল্লাহর নিয়ামতে ভরা।
একটু অসুস্থ হলেই বুঝতে পারি এ নিয়ামতের মর্ম কত। শয়নে-স্বপনে, উঠতে-বসতে, ঘরে-বাইরে সবখানে আমরা তাঁর নিয়ামতের সাগরে ডুবে আছি প্রতিক্ষণ। আমাদের চারপাশে অনেক মানুষ আছে, তাদের আল্লাহ তাআলা এগুলো থেকে বঞ্চিত রেখেছেন। আমাদের মধ্যে হাজারো মানুষ এমন রয়েছে, যারা ইট-পাথরের নির্মিত প্রাসাদে অবস্থান করেও গাড়ি-বাড়ি, যশ-খ্যাতি সব কিছু থাকার পরও অশান্তিতে ভোগে। কারণ তার মধ্যে কৃতজ্ঞতাবোধ নেই। যতই থাকুক তাদের আরো চাই।
ইসলাম কৃতজ্ঞতার প্রতি অত্যধিক গুরুত্বারোপ করেছে। প্রকৃত মুমিনের সকাল-সন্ধ্যার পুরো সময়টাই কৃতজ্ঞতার ছাঁচে বাঁধা। মুমিন যেকোনো জিনিস অর্জন করে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর প্রশংসা করে। সুখ কিংবা দুঃখ, সর্বাবস্থায় আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকে। এ জন্য হাদিসে এসেছে, সুহাইব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মুমিনের অবস্থা বিস্ময়কর। সকল কাজই তার জন্য কল্যাণকর। মুমিন ছাড়া অন্য কেউ এ বৈশিষ্ট্য লাভ করতে পারে না। তারা সুখশান্তি লাভ করলে কৃতজ্ঞতা আদায় করে, আর অসচ্ছলতা বা বিপদাপদে আক্রান্ত হলে ধৈর্য ধারণ করে, প্রত্যেকটাই তার জন্য কল্যাণকর। (মুসলিম, হাদিস : ৭৩৯০)
কৃতজ্ঞতা যাদের জীবনের অংশ হয়ে গেছে, তাদের আল্লাহ তাআলা সুন্দর জীবন, চিন্তামুক্ত জীবন দান করবেন। শুধু সম্পদ আর বিলাসিতাই মানুষকে সুখ আর শান্তি জোগাতে পারে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তুমি পার্থিব জীবনের ওই চাকচিক্যের দিকে চোখ তুলে তাকিও না, যা আমি তাদের (অর্থাৎ কাফেরদের) বিভিন্ন শ্রেণিকে মজা লোটার জন্য দিয়ে রেখেছি, তা দ্বারা তাদের পরীক্ষা করার জন্য। বস্তুত তোমার রবের রিজিক সর্বাপেক্ষা উত্তম ও সর্বাধিক স্থায়ী। ’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ১৩১)
মানুষ যত উপার্জনই করুক না কেন, তার ইচ্ছা থাকে এর চেয়ে দ্বিগুণ কবে আমি পাব। সে বুভুক্ষু দৃষ্টিতে আরো পাওয়ার আশায় উম্মুখ হয়ে থাকে। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যদি বনি আদমের স্বর্ণ ভরা একটা উপত্যকা থাকে, তথাপি সে তার জন্য দুটি উপত্যকা হওয়ার কামনা করবে। তার মুখ মাটি ছাড়া অন্য কিছুতেই ভরবে না। তবে যে ব্যক্তি তাওবা করবে, আল্লাহ তার তাওবা কবুল করবেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪৩৯)
এ জন্য বান্দার দায়িত্ব আল্লাহ তাআলার নিয়ামত, তাঁর দয়া ও করুণার কথা স্মরণ করে কৃতজ্ঞতা আদায় করা।
আল্লাহ তাআলা আমাদের তাঁর কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।