মাদরাসাপড়ুয়া স্বপ্নবাজ তরুণ আলেম উদ্যোক্তা শহীদুল ইসলাম। পিরোজপুর জেলার অজপাড়াগাঁ থেকে যাঁর জীবনের শুরু, তিনি এখন কুয়েতের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তাঁর মতে, আত্মবিশ্বাস, সততা, কঠোর পরিশ্রম ও আল্লাহর ওপর ভরসা থাকলে জীবনে সাফল্য ধরা দেবেই।
স্বপ্নবাজ কর্মোদ্যমী শহীদুল উঠে আসেন পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার ছোট একটি গ্রাম থেকে। তিনি মিরপুর দারুল উলুম মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস পাস করেন। কর্মজীবন শিক্ষকতা দিয়ে শুরু করলেও পরে ২০০৫ সালে জীবিকার সন্ধানে পাড়ি জমান সুদূর কুয়েতে।
সেখানে প্রথম দুই বছর গাড়িচালক হিসেবে আত্মনিয়োগ করেন তিনি। পরে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মী ও প্রাণের কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন। এ সময় মার্কেটিং ও ব্যবসা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি ছোট-খাটো ব্যবসা করে পুঁজি গড়েন শহীদুল। সফলতার সোনার পাখিটাকে হাতের মুঠোয় আনতে নিরলস পরিশ্রম করেন তিনি। অবশেষে তাঁর স্বপ্ন হাতে ধরা দিল।
তিনি গড়ে তুলতে সক্ষম হন স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান কনফিডেন্স কম্পানি; যেখানে তিনি হলুদ, মরিচ, জিরা, ধনিয়া, চানাচুর, অ্যারোমেটিক রাইস, ভেসন, আচার, লাচ্ছি সেমাই ইত্যাদি প্রস্তুত করা শুরু করেন। শুধু তা-ই নয়, খাবারসামগ্রীর বাইরেও তিনি সুগন্ধির ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন এবং স্বপ্নের পঙ্খিরাজে চড়ে দুর্বার গতিতে এগোতে থাকেন সামনের দিকে। দেশীয় পণ্য বিদেশের মাটিতে ছড়িয়ে দিতে শুরু করেন তিনি, যাতে তার ব্যবসার পাশাপাশি বাংলাদেশের নাম বিশ্বব্যাপী উজ্জ্বল হয়।
গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘যে পণ্যগুলো বাংলাদেশে সহজে উৎপাদন সম্ভব, সেগুলো আমরা বাংলাদেশ থেকে সংগ্রহ করি আর যেগুলো বাংলাদেশে পাওয়া যায় না, সেগুলো আমরা অন্যান্য দেশ থেকে সংগ্রহ করি।’
তাঁর নির্মিত কনফিডেন্স এখন কুয়েতের নামকরা প্রতিষ্ঠান। উৎপাদনে সংকুলান না হওয়ায় বাংলাদেশ, ভিয়েতনামসহ কয়েকটি দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে চাহিদা পূরণ করেন শহীদুল ইসলাম। কুয়েত ছাড়িয়ে তাঁর কনফিডেন্সের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে কাতার, কুয়েত, ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে।
বড় কর্মযজ্ঞ সম্পাদনে বাংলাদেশ, ভারত ও মিসরের নাগরিকদের নিয়োগ দিয়েছেন শহীদুল।
ব্যবসা-বাণিজ্য করে সফলতার শিখরে উঠলেও ভুলে যাননি নিজ শিকড়কে। নিজ প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দেশেও বিভিন্ন সামাজিক কাজে জড়িত এই কর্মবীর। এ বিষয়ে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি দেশে এতিমদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করি, পাশাপাশি মসজিদ-মাদরাসাসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজে সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করার চেষ্টা করি।’
সফল হতে উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে তাঁর পরামর্শ হলো, ‘আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে বুকে সাহস নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। ব্যবসা শুরু করায় কারো কারো জীবনে ধাক্কা আসে, ধাক্কাকে অতিক্রম করতে হবে। কেউ যদি শুধু নগদ ইনকামকে জরুরি মনে করে ব্যবসা করতে চায়, তার সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম। আমি নিজেও ব্যবসার স্বার্থে অনেক ভালো বেতনের চাকরি পেয়েও ছোট চাকরিতে গিয়েছি।’
নিজের সচ্ছলতার পাশাপাশি দেশের সুনাম বয়ে আনতে প্রবাসীদের প্রতি আহবান জানান শহীদুল ইসলাম।
কর্মবীর এই আলেম উদ্যোক্তা দেখিয়ে দিলেন যে মহান আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস, প্রবল ইচ্ছা শক্তি থাকলে যে কেউ সফলতার সোনার হরিণকে পোষ মানাতে পারে। বিশ্বব্যাপী হালাল পদ্ধতির ব্যবসা-বাণিজ্য ছড়িয়ে দিতে এমন আরো অনেক স্বপ্নবাজ আলেম উদ্যোক্তা তৈরি হওয়া প্রয়োজন, যাঁরা দেশে-বিদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতৃত্ব দিয়ে মানুষকে হালাল পদ্ধতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য করার আলোকবর্তিকা হবেন।