বহুল আলোচিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত ৫০ হাজার ৩১০ ভোট পেয়ে মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী (বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত) মনিরুল হক সাক্কু হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত আরেক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার পেয়েছেন ২৯ হাজার ৯৯ ভোট।
এ নির্বাচনের একটি বড় ইতিবাচক দিক ছিল-নির্বাচনের আগে প্রচার-প্রচারণার সময় কোনো ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচনের দিনও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে।
ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রার্থীদের বা নির্বাচকমণ্ডলীর কোনো অভিযোগ ছিল না। ভোট প্রদানের হারও ছিল সন্তোষজনক-৫৯ শতাংশ। আমরা কুসিক নির্বাচনে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠানের কৃতিত্ব দিতে চাই রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও তাদের সমর্থক এবং কুমিল্লা সিটির সাধারণ ভোটার শ্রেণির সবাইকে। চমৎকার গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখতে পারায় তাদের আমরা ধন্যবাদও দিতে চাই। আগামী সাধারণ নির্বাচনসহ প্রতিটি নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশের এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে আমরা আশা করতে চাই।
তবে এ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণে কিছু বিপত্তি ঘটেছে। বিভিন্ন কেন্দ্রে নানা ভোগান্তির শিকার হয়েছেন ভোটাররা। এমনও হয়েছে, ভোটাধিকার প্রয়োগ না করেই ফিরে গেছেন অনেকে। ইভিএমে কীভাবে ভোট দিতে হয়, তা বুঝতে পারেননি অনেক ভোটার। এছাড়া আঙুলের ছাপ মেলাতেও বেশ সময় ব্যয় করতে হয়েছে, যে কারণে ভোট দিতে বিলম্ব হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে। এ প্রসঙ্গে আমাদের বক্তব্য হলো-নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে অশিক্ষিত কিংবা অপেক্ষাকৃত কম শিক্ষিত ভোটারদের মক ভোটিংয়ের মাধ্যমে যদি প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়, তাহলে ইভিএম জটিলতার অবসান ঘটতে পারে। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো, ফলাফল ঘোষণার শেষদিকে চারটি কেন্দ্রের ফল ঘোষণায় বিলম্ব ঘটায় তা নিয়ে অনেকের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু যেমনটা বলেছেন, এই বিলম্ব ঘটেছে তাকে হারানোর উদ্দেশ্যে। তিনি অভিযোগ করেছেন, তাকে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করে হারানো হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে আইনি লড়াইয়ে যাবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন। আমাদের কথা হলো, শেষের চার কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণায় কেন বিলম্ব ঘটেছে, নির্বাচন কমিশনকে তার সুস্পষ্ট ও বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে হবে। তা না হলে কমিশন নিয়ে জনগণের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হবে। ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণের বিষয়টিও হবে প্রশ্নবিদ্ধ। বস্তুত আমরা এমন নির্বাচন চাই, যে নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের প্রশ্ন উঠবে না এবং সার্বিকভাবে নির্বাচন নিয়ে জনগণ তথা ভোটার শ্রেণির মধ্যে সন্তুষ্টি বিরাজ করবে।
কুসিক নির্বাচনে বিজয়ী আরফানুল হক রিফাতকে আমাদের অভিনন্দন। আমরা আশা করতে চাই, মেয়র পদে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি কুমিল্লা সিটির বিদ্যমান সমস্যাগুলোর প্রতিকারসহ শহরটির উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় দক্ষতার সঙ্গে তার ভূমিকা পালন করবেন।
জলাবদ্ধতা ও যানজট-এ দুই প্রধান সমস্যা কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, তার উপায় উদ্ভাবন করবেন তিনি, কুমিল্লাবাসী সেটাই দেখতে চায়। নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীরাসহ ভিন্নমতাবলম্বীরা নতুন মেয়রকে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবেন বলেও আমাদের বিশ্বাস।