Friday, April 19, 2024
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামকিশোর গ্যাং

কিশোর গ্যাং

রাজধানীর উত্তরা ও পার্শ্ববর্তী টঙ্গী এলাকায় কিশোর গ্যাং সদস্যদের ভয়ংকর হয়ে ওঠার সংবাদ গভীর উদ্বেগজনক। গত ৬ বছরে উত্তরা, উত্তরখান, দক্ষিণখান ও তুরাগ এলাকায় কিশোর গ্যাং সদস্যদের হাতে অন্তত ১০টি খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি রাজধানীর উপকণ্ঠে আশুলিয়ার হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারের মর্মন্তুদ মৃত্যুর পেছনে রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের নিষ্ঠুরতা। বস্তুত ছোট অপরাধ দিয়ে শুরু হলেও কালক্রমে গ্যাং সদস্যরা জড়িয়ে পড়ছে বড় কোনো অপরাধে; এমন কী ভয়ংকর খুনি হয়ে উঠছে, যা মোটেই কাম্য নয়। অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক দলের এক শ্রেণির নেতা ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের পৃষ্ঠপোষকতা করায় বন্ধ হচ্ছে না গ্যাং কালচার।

আশঙ্কার বিষয় হলো, কেবল উত্তরা ও টঙ্গী নয়; সারা দেশেই কিশোর সন্ত্রাসীদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ও তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিষয়টি শুধু অভিভাবক শ্রেণি নয়; রাষ্ট্রের জন্যও দুর্ভাবনার। আজকাল মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ও আকাশ সংস্কৃতির থাবায় অনেক কিশোর-কিশোরীই বিপথগামী হচ্ছে। যারা কিশোর বয়সে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে, তারা যে একদিন শীর্ষ সন্ত্রাসীর খাতায় নাম লেখাবে না; তার নিশ্চয়তা কী? সমাজদেহে ব্যাপকভাবে এ ক্ষত বিস্তারের আগেই প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের এগিয়ে আসা উচিত। এক্ষেত্রে পরিবারের সবচেয়ে বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করি আমরা। শিশুরা অসৎ সঙ্গ বর্জন করাসহ যে কোনো প্রকার লোভ-লালসা, প্রলোভন বা অনৈতিক কাজ থেকে দূরে থাকার শিক্ষা যদি জীবনের শুরুতেই পরিবার থেকে পায়, তাহলে অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে বলে আশা করা যায়।

আশার কথা, কিশোর বয়সিদের মধ্যে সংবেদনশীল আচরণ, সহমর্মিতা ও মূল্যবোধ জাগ্রত করার লক্ষ্যে সরকার দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে কিশোর-কিশোরী ক্লাব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় এ ধরনের ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ১১ থেকে ১৯ বছর বয়সি ছেলেমেয়েরা নিজ নিজ এলাকায় স্থাপিত এসব ক্লাবের সদস্য ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে। সমাজে বিদ্যমান নানা অসংগতির ওপর বিতর্ক অনুষ্ঠানের আয়োজন ও সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি ক্লাবের সদস্যরা হরেকরকম খেলাধুলার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ারও সুযোগ পাবে। প্রতিটি ক্লাবেই বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় ক্রীড়া-সরঞ্জাম সরবরাহ করা ছাড়াও বই ও পত্র-পত্রিকা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। সবকিছু মিলিয়ে উদ্যোগটি যে প্রশংসনীয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সারা দেশে এ ধরনের ক্লাব প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি কিশোর অপরাধ তথা কিশোর গ্যাংয়ের জন্ম ও বিকাশ রোধে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ পরিবারের সদস্যদের আন্তরিক ভূমিকা কাম্য।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments