Sunday, September 24, 2023
spot_img
Homeধর্মকিয়ামতের দিন যারা চোখ থাকলেও দেখবে না

কিয়ামতের দিন যারা চোখ থাকলেও দেখবে না

আমাদের দেশে একটি পরিভাষা আছে, তা হলো—‘চোখ থাকতে অন্ধ।’ সাধারণত গাফেল লোকদের ব্যাপারে এ পরিভাষাটি ব্যবহার করা হয়। চোখ যেহেতু সত্য-মিথ্যা, হক-বাতিল ইত্যাদি পরখ করার অন্যতম মাধ্যম। মহান আল্লাহর মহামূল্যবান এই নিয়ামত থাকার পরও যারা হক দেখতে পায় না, বাতিলের পক্ষ অবলম্বন করে, তাদের চোখ থাকতেও অন্ধ বলা যায়।কারণ এটি হিদায়াত, ঈমান গ্রহণ, উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যম হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। যেমন—সুরা বালাদে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি কি তোমাদের চক্ষু দিইনি?’ (সুরা : বালাদ, আয়াত : ৮)

পবিত্র কোরআনের এই সুরায় মহান আল্লাহ মানুষকে হিদায়াত গ্রহণের জন্য সহায়ক যেসব নিয়ামত দিয়েছেন, তাতে আল্লাহর মহা নিয়ামত চক্ষুর কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। যারা মহান আল্লাহর এই নিয়ামতের শুকরিয়া করবে না, দুই চোখ ভরে মহান আল্লাহর অসংখ্য x অগণিত নিদর্শন দেখেও মহান আল্লাহর ওপর ঈমান আনবে না, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তাদের অন্ধ অবস্থায় ওঠাবেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যে আমার স্মরণ থেকে বিমুখ থাকবে, নিশ্চয়ই তার জীবনযাপন হবে সংকুচিত এবং আমরা তাকে কিয়ামতের দিন জমায়েত করব অন্ধ অবস্থায়।সে বলবে, হে আমার রব, কেন আপনি আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালেন? অথচ আমি তো ছিলাম দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন? তিনি বলবেন, এভাবেই আমার নিদর্শনাবলি তোমার কাছে এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ছেড়ে দিয়েছিলে এবং সেভাবে আজ তোমাকেও (জাহান্নামে) ছেড়ে রাখা হবে।’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ১২৪-১২৬)

অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আল্লাহ যাকে হিদায়াত দান করেন সে-ই হিদায়াতপ্রাপ্ত এবং যাকে তিনি পথহারা করেন তুমি কখনো তাদের জন্য তাঁকে ছাড়া অভিভাবক পাবে না। আর আমি কিয়ামতের দিনে তাদের একত্র করব উপুড় করে, অন্ধ, মূক ও বধির অবস্থায়। তাদের আশ্রয়স্থল জাহান্নাম; যখনই তা নিস্তেজ হবে তখনই আমি তাদের জন্য আগুন বাড়িয়ে দেব।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৯৭)

অর্থাৎ দুনিয়ায় তারা যে অবস্থায় ছিল, সত্যকে দেখতে পেত না, সত্য কথা শুনতে পেত না এবং সত্য কথা বলত না, ঠিক তেমনিভাবেই কিয়ামতেও তাদের ওঠানো হবে। উল্লেখ্য, অনেক তাফসিরবিদের মতে, এখানে বাহ্যিক দৃষ্টিশক্তিহীন বোঝানো উদ্দেশ্য নয়, বরং অন্ধ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, অন্তরের দৃষ্টিশক্তিহীনতা। কারণ পবিত্র কোরআনের এক আয়াতে উল্লেখ হয়েছে, ‘তারা কি দেশ ভ্রমণ করেনি? তাহলে তারা জ্ঞানবুদ্ধিসম্পন্ন হৃদয় ও শ্রুতিশক্তিসম্পন্ন শ্রবণের অধিকারী হতে পারত। বস্তুত চোখ তো অন্ধ নয়, বরং অন্ধ হচ্ছে বুকের মধ্যে অবস্থিত হৃদয়।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৪৬)

তাদের অন্ধত্ব হৃদয়ের চোখের হোক আর চর্মচোখের, তাদের যে সেদিন খুবই লাঞ্ছিত অবস্থায় অত্যন্ত কষ্ট দিয়ে চেহারায় ভর করে এসে আল্লাহর সামনে এসে দাঁড়াতে হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।পবিত্র কোরআনের এই আয়াত দেখে সবার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে চেহারার ওপর ভর করে চলাচল কি সম্ভব? এমন প্রশ্ন সাহাবায়ে কেরামের মনেও এসেছিল। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর নবী (সা.)! কিয়ামতের দিন কাফেরদের মুখে ভর করে চলা অবস্থায় একত্রিত করা হবে? তিনি বলেন, যিনি এ দুনিয়ায় তাকে দুই পায়ের ওপর চালাতে পারছেন, তিনি কি কিয়ামতের দিন মুখে ভর করে তাকে চালাতে পারবেন না? কাতাদাহ (রহ.) বলেন, নিশ্চয়ই, আমার রবের ইজ্জতের কসম! (বুখারি, হাদিস : ৪৭৬০)

মহান আল্লাহ সবাইকে হিদায়াত নসিব করুন। কিয়ামতের বিভীষিকাময় পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments