Sunday, April 2, 2023
spot_img
Homeধর্মকল্যাণকামিতাই ধর্ম

কল্যাণকামিতাই ধর্ম

অন্যের কল্যাণ কামনায় তাদের সদুপদেশ দেওয়া ঈমানের সৌন্দর্য। যুগে যুগে নবী-রাসুলরা নিজ নিজ উম্মতের কল্যাণকামী ছিলেন। তাঁরা তাঁদের উম্মাহকে কল্যাণের পথে আনতে সদুপদেশ বা নসিহতের আশ্রয় নিয়েছেন। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে তার প্রমাণ পাওয়া যায়।

যেমন নুহ (আ.) তাঁর সম্প্রদায়কে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘… হে আমার সম্প্রদায়! আমাতে কোনো বিভ্রান্তি নেই, বরং আমি বিশ্বজগতের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে প্রেরিত রাসুল। আমি আমার রবের বার্তা তোমাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি, আর আমি তোমাদেরকে সদুপদেশ দিচ্ছি। তোমরা যা জানো না আমি তা আল্লাহর কাছ থেকে জেনে থাকি। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৬১-৬২)

হুদ (আ.) তাঁর উম্মতদের নসিহত করতে গিয়ে বলেন, ‘… হে আমার সম্প্রদায়! আমার মধ্যে কোনো নির্বুদ্ধিতা নেই, বরং আমি সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে একজন রাসুল। আমি আমার ররের রিসালাত (যা নিয়ে আমাকে পাঠানো হয়েছে তা) তোমাদের কাছে পৌঁছাচ্ছি এবং আমি তোমাদের একজন বিশ্বস্ত হিতাকাঙ্ক্ষী। ’ (সুরা : আরাফ,  আয়াত : ৬৭-৬৮)

সালেহ (আ.) তাঁর উম্মতদের পাপাচার ছেড়ে মহান আল্লাহর একত্ববাদের পথে আসার দাওয়াত দিয়েছিলেন, কিন্তু তারা যখন তা প্রত্যাখ্যান করায় আজাব এসে গেল, তখন তিনি সে এলাকা থেকে প্রস্থানকালে নিজের গোত্রের লোকদের বলেছিলেন, ‘তোমরা কল্যাণকামীদের পছন্দ করো না। ’ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর সে তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল এবং বলল, হে আমার কওম, আমি তো তোমাদের নিকট আমার রবের রিসালাত পৌঁছে দিয়েছি এবং তোমাদের জন্য কল্যাণ কামনা করেছি; কিন্তু তোমরা কল্যাণকামীদের পছন্দ করো না। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৭৯)

এভাবে শোয়াইব (আ.)-ও তাঁর উম্মতদের নসিহত করেছিলেন, কিন্তু তারা যখন তাঁর নসিহত আমলে না নিয়ে ধ্বংস হলো, তখন তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেছিলেন, আমি তোমাদের কল্যাণ কামনা করেছি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর সে তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল এবং বলল, হে আমার কওম, আমি তো তোমাদের কাছে আমার রবের রিসালাতের দায়িত্ব পৌঁছে দিয়েছি এবং তোমাদের জন্য কল্যাণ কামনা করেছি। সুতরাং আমি কিভাবে কাফির জাতির ব্যাপারে দুঃখ করব!’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৯৩)

আমাদের নবীজি (সা.)-ও উম্মতের কল্যাণকামী ছিলেন। এবং স্বীয় উম্মতদের পরস্পর কল্যাণকামী হওয়ার তাগিদ দিতেন। কোনো সাহাবি থেকে তিনি অন্যের কল্যাণকামিতার বায়াতও গ্রহণ করেছেন। জারির ইবনে আবদুল্লাহ আল-বাজালি (রা.) বলেছেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কাছে বায়াত গ্রহণ করেছি নামাজ কায়েম করার, জাকাত প্রদান করার এবং সমস্ত মুসলিমের মঙ্গল কামনা করার। (বুখারি, হাদিস : ৫৭)

তাই আমাদের উচিত, অন্য মুমিন ভাইয়ের কল্যাণ কামনা করা, তাঁকে সদুপদেশ দিয়ে অকল্যাণ থেকে দূরে রাখা। সাধ্যমতো একে অপরকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এক মুমিন অপর মুমিনের জন্য আয়নাস্বরূপ এবং এক মুমিন অপর মুমিনের ভাই। তারা একে অপরের ক্ষতি করা হতে রক্ষা করে এবং তার অনুপস্থিতিতে তাকে রক্ষা করে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯১৮)

মহান আল্লাহ সবাইকে এই মহৎ গুণ অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments