Saturday, July 27, 2024
spot_img
Homeলাইফস্টাইলকরোনায় আক্রান্ত হলে...

করোনায় আক্রান্ত হলে…

সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে অনেক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এখন। ভেরিয়েন্ট আর যাই হোক না কেন, বাংলাদেশেও আক্রান্তের হার দিন দিন বাড়ছে। অনেকের নানা উপসর্গ থাকলেও সময়মতো কভিড-১৯ টেস্ট না করায় এবং সতর্ক না হওয়ায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে বেশি।

প্রথমেই টেস্ট করান

জ্বর, সর্দি, শুকনো কাশি, মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা, শরীর ব্যথা, স্বাদ ও গন্ধ অনুভূত না হওয়া, বমি বমি ভাব, পেট খারাপ হওয়া ইত্যাদি করোনাভাইরাসের সাধারণ উপসর্গ।

বিজ্ঞাপনইদানীং কিছু নতুন উপসর্গও দেখা দিচ্ছে। এখন শীতের সময়। এই রোগগুলো হওয়াটা খুব স্বাভাবিক বিষয়। সে ক্ষেত্রে অ্যান্টিহিস্টামিন ও প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেলেই রোগ সেরে যায়। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে চিকিৎসার তেমন হেরফের না হলেও সবার আগে উচিত কভিড পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া। আজকাল আরটি পিসিআর ছাড়াও তাত্ক্ষণিক র‌্যাপিড টেস্ট করা যায়। কিন্তু এই কাজটিতে মানুষের সচেতনতার কিছুটা অভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। ফলে অনেকে হয়তো বা পজিটিভ হয়েও সতর্কতা না মেনে বা আইসোলেশনে না থেকে আশপাশের ও পরিবারের অনেককেই আক্রান্ত করাচ্ছে।

দুটি ভালো দিক

কভিড টেস্টের দুটি উল্লেখযোগ্য ও ভালো দিক আছে। একটি হলো টেস্ট করে নিশ্চিত হলে (পজিটিভ আর নেগেটিভ যাই হোক না কেন) সে অনুযায়ী দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া যায়। এতে সুস্থতার হার বাড়ে, হাসপাতালে যাওয়ার হার কমে। দ্বিতীয়টি হলো পজিটিভ অবস্থায় রোগীকে আইসোলেশনে নিলে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়। পরিবার ও সমাজের লোকগুলো বেঁচে যায়। সুতরাং টেস্ট, টেস্ট এবং টেস্ট।

উপসর্গ দেখা দিলেই আইসোলেশন

কারো যদি উপরোক্ত উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে নিজ দায়িত্বেই তাকে হোম আইসোলেশনে চলে যাওয়া উচিত।

আর পরীক্ষা অবশ্যই করানো উচিত। কোনো কারণে পরীক্ষা করাতে দেরি হলে অথবা রিপোর্ট পেতে দেরি হলে পরিপূর্ণ করোনাবিধি মেনে সম্পূর্ণ আলাদা থাকুন। যাতে অন্যরা আক্রান্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। অন্যদের থেকে কমপক্ষে ছয় ফুট দূরত্বে থাকুন। এখানে একটি বিষয় হলো, যদি উপসর্গ থাকে এবং রিপোর্ট নেগেটিভ আসে তাহলেও সেটা পজিটিভ ধরতে হবে এবং সে অনুযায়ী নিয়ম মেনে চলতে হবে।

পজিটিভ হলে

কভিড টেস্টে করোনা পজিটিভ হলে কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত। এগুলো হলো :

►    উপসর্গগুলো মৃদু হলে বাসায় হোম আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিহিস্টামিন ও প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খান। তবে অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৩-এর নিচে এলে বা অন্য কোনো জটিলতা থাকলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হোন।

►    বাড়িতে আলাদা ঘরে থাকুন, মাস্ক পরুন, আলাদা বাথরুম ব্যবহার করুন, আলাদা থালা-বাসন ব্যবহার করুন।

►    কোনো কারণে একই ঘরে থাকতে হলে আলাদা বিছানায় থাকুন, মাস্ক ব্যবহার করে ছয় ফুটের মতো দূরত্ব বজায় রাখুন। তবে বাথরুমটি আলাদা ব্যবহার করলে ভালো হয়।

►    হাঁচি-কাশি ফেলতে রোগীকে বাসার একটি বেসিন ব্যবহার করতে দিন। অন্যরা সেই বেসিন ব্যবহার থেকে দূরে থাকুন। কেননা কলের ট্যাপ থেকে অন্যদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ায় দ্রুত, যেহেতু হাঁচি-কাশি দিয়ে ওই ট্যাপই ব্যবহার করা হচ্ছে।

►    একটু পর পর হাত ধোন, টেবিল, চেয়ার, দরজার হাতল, ফ্লোর, বিছানাপত্র পরিষ্কার রাখুন। এমনকি ইলেকট্রনিকস জিনিসগুলোও নিয়মিত পরিষ্কার করুন।

►    করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে শিশু, অন্যান্য অসুখে ভোগা রোগী, গর্ভবতী নারী ও বৃদ্ধদের দূরে রাখুন।

►    সরাসরি আঙুল দিয়ে না টিপে টিস্যু বা অন্য কিছু দিয়ে লিফটের বাটনে চাপ দিন। ভাইরাস ছাড়াও ওই বাটনগুলোতে পর্যাপ্ত জীবাণু থাকে।

►    দিনে অন্তত চার থেকে ছয়বার গরম পানি দিয়ে গার্গল করুন। কয়েকবার গরম পানির ভাপ নিন।

খাবারদাবার

►    প্রচুর পরিমাণ প্রটিন জাতীয় খাবার গ্রহণ করুন। ভিটামিন ‘সি’, ‘ডি’ আছে এমন খাবার বেশি খান।

►    সব সময় টাটকা ও গরম গরম খাবার খাবেন। ফ্রিজের খাবার খাবেন না।

►    চিকেন স্যুপ জাতীয় খাবার বেশি খান।

►    এই সময় নিয়মিত খান জিংক জাতীয় খাবার। প্রয়োজনে গ্রহণ করুন জিংক সাপ্লিমেন্ট।

বিশ্রাম ও ঘুম

►    এই সময় শরীরের ওপর কোনো চাপ দেবেন না। ভারী কোনো কাজ করবেন না। বাসায় পূর্ণ বিশ্রামে থাকুন।

►    প্রতিদিন সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুম খুব জরুরি। এটা নিশ্চিত করুন। ভাইরাস সংক্রমণে শরীরের অভ্যন্তরীণ ভাঙচুর মেরামতে সহায়তা করে প্রথম রাতের ঘুম। এ জন্য দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ুন, মোটেই রাত জাগবেন না।

►    সামান্য শ্বাসকষ্ট মনে হলে বা অস্থির লাগলে উপুড় হয়ে শোন, চিত হয়ে শোবেন না। অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাপুন।

►    দিনের বেলা ঘুমিয়ে পারতপক্ষে রাতের ঘুম নষ্ট করবেন না।

►    অহেতুক দুশ্চিন্তা করবেন না, মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন না। দুশ্চিন্তা করলে এবং মনোবল হারালে ইমিউনিটি বুস্ট হয় না বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে না।

►    আক্রান্তদের মধ্যে যাঁদের ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা অ্যাজমার মতো স্বাস্থ্য সমস্যা আছে কিংবা যাঁদের বয়স বেশি তাঁরা আগের প্রেসক্রিপশনের ওষুধও সেবন করবেন।

চিকিৎসা

সাধারণ সর্দি-কাশির মতোই করোনাভাইরাসের চিকিৎসা। ইউরোপ, আমেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এসব ওষুধই এখন দেওয়া হচ্ছে। তবে ইদানীং কিছু অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ বাজারে মিলছে। জটিলতা নিরসনে এগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে এবং তা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে। অন্যকে দেওয়া চিকিৎসকের পরামর্শ কিংবা ইন্টারনেটে প্রচারিত করোনার চিকিৎসা বিষয়ক কোনো প্রেসক্রিপশন ফলো করবেন না।

আছে হেল্পলাইন

করোনাভাইরাস সম্পর্কিত তথ্য জানতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি হেল্পলাইন চালু করা হয়েছে। এগুলো হলো :

ন্যাশনাল কল সেন্টার-৩৩৩

আইইডিসিআর-১০৬৫৫

বিশেষজ্ঞ হেল্পলাইন-০৯৬১১৬৭৭৭৭৭

স্বাস্থ্য বাতায়ন-১৬২৬৩

অনুলিখন : আতাউর রহমান কাবুল

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments