Sunday, September 24, 2023
spot_img
Homeবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকম্পিউটেক্সের মেলায় যা কিছু এলো

কম্পিউটেক্সের মেলায় যা কিছু এলো

বছরের সবচেয়ে বড় ডেস্কটপ, ল্যাপটপ ও সার্ভার প্রযুক্তির মেলা কম্পিউটেক্স। তাইওয়ানের রাজধানীতে আয়োজিত ইভেন্টটিতে অংশ নিয়েছে বিশ্বের নামিদামি সব ব্র্যান্ড। এবারের কম্পিউটেক্সে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালনার হার্ডওয়্যার এবং আগামী প্রজন্মের ডেস্কটপ হার্ডওয়্যারের দেখা পাওয়া গেছে বেশি। খোঁজখবর নিয়ে জানাচ্ছেন এস এম তাহমিদ

৩০ মে শুরু হয়ে ২ জুন পর্যন্ত চলা এ বছরের কম্পিউটেক্সে হাজির ছিল এনভিডিয়া, ইন্টেল ও এএমডির পাশাপাশি ডেস্কটপের পার্টস নির্মাতা কুলারমাস্টার, কোর্সেয়ার, লিয়ান লির মতো বিখ্যাত সব প্রতিষ্ঠান। অন্যান্য ইভেন্টে কম্পানিগুলো নতুন প্রযুক্তি উন্মোচন করে থাকে, সেগুলো সাধারণ ক্রেতাদের হাতে পৌঁছাতে সময় লেগে যায় অনেক। সেদিক থেকে কম্পিউটেক্স একেবারেই আলাদা, এখানে প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত সব পণ্য নিয়েই হাজির হয়ে থাকে।

ফ্যান ছাড়াই ঠাণ্ডা করার প্রযুক্তি

সিইএসে হাজির হওয়া মোটর বা ফ্যান ছাড়াই বাতাস পরিচালনার চমকপ্রদ প্রযুক্তি এবার ক্ষুদ্র ডেস্কটপে হাজির হয়েছে।জোট্যাকের তৈরি জিবক্স মিনি পিসিতে এয়ারজেটের দুটি কুলার ব্যবহার করা হয়েছে, ফলে ফ্যান ছাড়াই কম্পিউটারটি ফ্যান কুলিংয়ের সমান পারফরম্যান্স দিতে পারবে। এয়ারজেট প্রযুক্তিতে পিয়েজো ইফেক্ট ব্যবহার করে একটি পাতলা পর্দা কাঁপানো হয়, পর্দার কম্পনে বাতাস বইতে শুরু করে। ফ্যানের চেয়ে বহুগুণ কম শব্দ করে কাজ করে এয়ারজেট। এ ছাড়া এয়ারজেটের আকৃতি ফ্যানের চেয়ে অনেক ছোট এবং বাড়তি ইনটেক ফুটোর দরকার হয় না।

আশা করা যাচ্ছে, আগামী দিনে পাতলা ল্যাপটপ ও হাতে বহনযোগ্য গেমিং সিস্টেমে এয়ারজেট প্রযুক্তির দেখা মিলবে।

https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2023/06.June/04-06-2023/2/kalerkantho-tw-1a.jpg

এএমডি ও ইন্টেলের ল্যাপটপেই থাকবে এআই চিপ

এনভিডিয়া ও ইন্টেল—দুটি কম্পানিরই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়েও দীর্ঘদিন ধরে এআই প্রযুক্তিতে তারা পিছিয়েই পড়ছে। তাদের ল্যাপটপ প্রসেসরগুলোতে এক্সডিএনএ এআই কোর থাকলেও সেটা ব্যবহারের উপায় এত দিন তারা প্রকাশও করেনি। অবশেষে কম্পিউটেক্সে তারা এক্সডিএনএ কোরটি কাজে লাগানোর জন্য প্রগ্রামিং স্যুট প্রকাশ করেছে এবং সেটি ব্যবহার করে ফেসিয়াল রিকগনিশন, ভয়েস রিকগনিশন ও অন্যান্য মেশিন লার্নিংভিত্তিক কাজ চালানোর ডেমোও দেখিয়েছে।সমস্যা হচ্ছে, এক্সডিএনএ কোরটি আলাদা করে উইন্ডোজ বা লিনাক্সে হার্ডওয়্যার হিসেবে দেখা যাবে না, তাই এএমডির বেঁধে দেওয়া সফটওয়্যারের বাইরে কোনোভাবেই সেটা কাজে লাগানোর উপায় নেই। তারা সেটার পারফরম্যান্স কতটা ভালো সেটা নিয়েও পরিষ্কার কিছু জানায়নি, বলা হচ্ছে অ্যাপল এম২ চিপের চেয়ে সেটা শক্তিশালী। তবে এএমডির সবচেয়ে বড় হঠকারী সিদ্ধান্ত, এক্সডিএনএ কোরটি ডেস্কটপ প্রসেসরে যুক্ত না করা। এআই দৌড়ে আবারও পিছিয়ে গেল এএমডি। ইন্টেল তাদের নতুন মিটিংয়ে লেক প্রসেসরে চলমান এআই প্রগ্রামের ডেমো দেখিয়েছে।

ভার্সেটাইল প্রসেসিং ইউনিট বা ভিপিইউ নামের কোরটি নতুন সব প্রসেসর সিরিজেই থাকবে বলে জানিয়েছে তারা। ভিপিইউটিতে স্টেবল ডিফিউশন এআই ইঞ্জিন চালিয়ে ডেমো দেখিয়ে ইন্টেল বলেছে, আগামী দিনে ল্যাপটপ ও ডেস্কটপেই এআই চালানো যাবে ইন্টেল প্রসেসর ব্যবহার করে, সার্ভারের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল থাকতে হবে না। এএমডির মতো তারা ল্যাপটপেই সীমাবদ্ধ না থাকায় ইন্টেল তাদের টেক্কা দিল আবারও।

https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2023/06.June/04-06-2023/2/kalerkantho-tw-1a.jpg

এনভিডিয়ার নতুন এআই প্রসেসর

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির গোড়ায় আছে বিশেষায়িত এআই অ্যাকসেলারেটর প্রসেসর। অনেকটা জিপিইউয়ের মতো এই প্রসেসরগুলো তৈরিতে বরাবরই এগিয়ে আছে এনভিডিয়া। ওপেনএআইয়ের তৈরি চ্যাটজিপিটির তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর থেকে প্রতিটি প্রযুক্তি কম্পানিই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আরো উন্নত এআই কিভাবে ব্যবহারকারীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। ফলে হঠাৎই বাজারে তৈরি হয়েছে এআই অ্যাকসেলারেটরের তুমুল চাহিদা। সেই ঘাটতি পূরণ করতে এনভিডিয়া নিয়ে হাজির হয়েছে ডিজিএক্স জিএইচ২০০—বা ‘গ্রেস হপার’ সুপারচিপ। এনভিডিয়ার প্রধান জেনসেন হুয়াং বলেছেন, একে দানবীয় জিপিইউ বললেও খুব ভুল হবে না।

এতে থাকছে সর্বমোট ৫৭৬ গিগাবাইট মেমোরি, যার মধ্যে ৯৬ গিগাবাইট এইচবিএম প্রযুক্তির আর বাকিটা এলপিডিডিআর৫। মূল জিপিইউ কোরের পাশাপাশি তথ্য বিশ্লেষণ ও সার্ভারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য এতে থাকছে আটটি আর্ম প্রযুক্তির প্রসেসর, যার প্রতিটিতে থাকছে ৭২টি করে কোর। গ্রেস হপার প্রযুক্তিতে তৈরি সার্ভার বর্তমান সব এআই হার্ডওয়্যারকে ছাড়িয়ে যাবে, বলেছেন জেনসেন হুয়াং। এনভিডিয়া এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি ডেমোতে দেখিয়েছে—গেমের চরিত্রের সঙ্গে ইচ্ছামতো নিজের কণ্ঠে কথা বলা যাচ্ছে, এআই কাজে লাগিয়ে গেমের চরিত্র কথা বুঝতেও পারছে, আবার সে অনুযায়ী দিচ্ছে উত্তর। এনভিডিয়ার দাবি, আগামী দিনে গেমের প্রতিটি চরিত্র এআইভিত্তিক ডায়ালগ দিতে পারবে, রেকর্ড করা লাইনেই সীমাবদ্ধ থাকবে না।

https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2023/06.June/04-06-2023/2/kalerkantho-tw-1a.jpg

মাদারবোর্ড ও জিপিইউ

অ্যাসরক ও আসুস নতুন কিছু ১৩ প্রজন্মের ইন্টেল ও সপ্তম প্রজন্মের এএমডি রাইজেন প্রসেসর সমর্থিত মাদারবোর্ড উন্মোচন করেছে। অ্যাসরকের বোর্ডগুলো মূলত নজর দিয়েছে ভিআরএম এবং চিপসেট কুলিংয়ের দিকে, সঙ্গে থাকছে দ্রুতগতির ইথারনেট এবং উন্নত মানের আরজিবি কন্ট্রোলার। এদিকে আসুস তাদের নতুন মাদারবোর্ডের মধ্যেই গ্রাফিকস কার্ডের জন্য বাড়তি পাওয়ার কানেকশনের ব্যবস্থা রেখে আসুসের জিপিইউ ব্যবহার করলে সেগুলোতে আলাদাভাবে পাওয়ার সাপ্লাই থেকে কানেকশন দেওয়া না লাগে। এতে কেসিংয়ের মধ্যে কমবে তারের জটলা।

এমএসআই, আসুস ও গিগাবাইট—তিনটি কম্পানিই নতুন এনভিডিয়া আরটিএক্স ৪০০০ সিরিজের জিপিইউ উন্মোচন করেছে। জিপিইউগুলোর লক্ষণীয় বিষয়, সেগুলোর সাইজ বাড়তে বাড়তে মাদারবোর্ডকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে এমএসআইয়ের ৪০৯০ জিপিইউটি চার থেকে পাঁচটি পিসিআইই স্লট নিয়ে নেবে একাই, বর্তমানে তিনটির বেশি স্লট কোনো জিপিইউই নিচ্ছে না। তারা অবশ্য কিছু স্লিম সিরিজি জিপিইউও এনেছে, যেগুলো দুটি স্লটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। আগামীর গেমিং পিসি আরো বড়সড় হবে, সেটা এখনই পরিষ্কার।

https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2023/06.June/04-06-2023/2/kalerkantho-tw-1a.jpg

পাওয়ার সাপ্লাই ও কুলিং

লিয়ান লির ইউনিফ্যান টিএল এলসিডি দর্শনার্থীদের মধ্যে সারা ফেলে দিয়েছে। প্রথমবারের মতো কুলিং ফ্যানের মধ্যেই থাকছে এলসিডি ডিসপ্লে, যাতে নানা এনিমেশন বা প্রয়োজনীয় তথ্য ডিসপ্লে করা যাবে। ফ্যানগুলো তাদের ও১১ সিরিজের কেসের সঙ্গে সবচেয়ে ভালো মানাবে, দাবি লিয়ান লির। এলসিডি ছাড়া সংস্করণও বাজারে আনবে তারা। কুলার মাস্টার, কোর্সেয়ার ও সিলভারস্টোনও নতুন সব আরজিবি লাইটিংসমৃদ্ধ ফ্যান উন্মোচন করেছে। প্রতিটিই চমৎকার কুলিংয়ের পাশাপাশি ডেস্কটপকে করবে আরো দৃষ্টিনন্দন। হাইট নিয়ে এসেছে মোটাসোটা ও শক্তিশালী পাম্পসমৃদ্ধ ওয়াটার কুলিং সিস্টেম, যা বর্তমানের সবচেয়ে শক্তিশালী ডেস্কটপ প্রসেসরকেও ঠাণ্ডা রাখবে।  কুলার মাস্টার নতুন একটি পাওয়ার সাপ্লাই এনেছে, যাতে কোনো ফ্যান নেই, সাইজও এসএফএক্স আকৃতির। ফ্যানের শব্দও অনেকের কাছে অসহ্য লাগছে। তাদের জন্যই বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে এই পাওয়ার সাপ্লাই। ফ্যান না থাকলেও এটি গেমিং পিসির জন্য প্রয়োজনীয় ওয়াটেজ দিতে পারবে।

https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2023/06.June/04-06-2023/2/kalerkantho-tw-1a.jpg

র‌্যাম ও এসএসডিতে নতুন হাওয়া

কোর্সেয়ার তাদের ডমিনেটর প্লাটিনাম সিরিজের নতুন র‌্যাম উন্মোচন করেছে। র‌্যামগুলো ডিডিআর৫ প্রযুক্তির, ৬০০০+ মেগাহার্জ গতিতে চলতে সক্ষম এবং সেগুলোর ওপরের অংশ নিজের ইচ্ছামতো থ্রিডি-প্রিন্টিংয়ের মাধ্যমে ডিজাইন করে নেওয়া যাবে। পিসিআই-ই ৫ প্রযুক্তির বেশ কিছু এসএসডিও দেখা গেছে, সেগুলোর দুর্দান্ত গতির পাশাপাশি বড়সড় হিট-সিংকও সবার নজরে এসেছে। আগামী দিনের ডেস্কটপে গ্রাফিকস কার্ডের পাশাপাশি এসএসডিতেও বড় কুলার এবং ফ্যান দেখা যাবে, সেটারই নির্দেশ করছে বর্তমানের মডেলগুলো।

https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2023/06.June/04-06-2023/2/kalerkantho-tw-1a.jpg

নতুন সব কেসিং

ইনউইন তাদের মডফ্রি পিসি চ্যাসিস সিস্টেম উন্মোচন করেছে। নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী ছোট বা বড় করা যায় কেসিংটি, চাইলে মিনি-আইটিএক্স সাইজের ডেস্কটপ থেকে সার্ভার পর্যন্ত বড় করা যাবে। এটির প্রতিটি অংশ মডিউলার হওয়ায় গতানুগতিক ডেস্কটপের বাইরেও মনের মতো করে পিসি তৈরি করতে পারবেন ব্যবহারকারীরা।

ফ্র্যাকটাল ডিজাইন অ্যালুমিনিয়াম ও কাঠে সমন্বয় তৈরি করেছে ক্ষুদ্র মিনি-আইটিএক্স সাইজের কেস ‘টেরা পিসি’। সামনের প্যানেল ছাড়া চারদিকেই রাখা হয়েছে গ্রিল, যাতে বাতাস সহজেই চলাফেরা করতে পারে এবং পিসির ভেতরের হার্ডওয়্যার সহজেই দেখা যায়। বর্তমানে তুমুল জনপ্রিয় সাইবারপাংক ঘরানার ডিজাইনে কেসটি তৈরি করা হয়েছে।

জনপ্রিয় কেস নির্মাতা লিয়ান লি তাদের ব্যাপক জনপ্রিয় ও১১ ডায়নামিক কেসের পরবর্তী সংস্করণ, ও১১ ভিশন উন্মোচন করেছে। কেসটির তিন দিকেই দেওয়া হয়েছে গ্লাস প্যানেল, যার মধ্যে কোনো বর্ডারও রাখা হয়নি। ও১১ আরজিবি এবং ও১১ ইভো এক্সএল সংস্করণও দেখা গেছে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments