জলবায়ু সংকট মোকাবিলার দায় ধনী দেশগুলোর
জলবায়ু সংকট নিরসনে কপ২৬ সম্মেলনের নতুন খসড়া চুক্তিতে জলবায়ু পরিবর্তন সামাল দিতে বিশ্বনেতাদের জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। সম্মেলনের শেষদিন শুক্রবার সকালে প্রকাশ করা হয়েছে নতুন এ খসড়া চুক্তি। এর আগে গত বুধবার জলবায়ু সম্মেলনে প্রথম খসড়া চুক্তি প্রকাশ করা হয়েছিল, যেটি নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে। এর মধ্যেই নতুন এ খসড়া চুক্তি প্রকাশ করা হলো, যেটিকে প্রথম খসড়া চুক্তির দ্বিতীয় সংস্করণ বলা হচ্ছে। নতুন খসড়া চুক্তি নিয়ে এরই মধ্যে পরিবেশ আন্দোলনকর্মীরা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তাদের মতে, সর্বশেষ খসড়া চুক্তি একটি প্রতারণা এবং জলবায়ু সংকটে প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা মাত্র।
বিশ্বজুড়ে কয়লা ও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার রোধে যে কঠোর নীতিমালা এ সম্মেলন থেকে প্রত্যাশা করা হয়েছিল, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে তা অনেকাংশে অপূর্ণই থেকে যাচ্ছে। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ইতোমধ্যে এক বার্তায় জলবায়ু সম্মেলনে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার লক্ষ্য ‘লাইফ সাপোর্টে’ চলে গেছে বলে উল্লেখ করেছেন। সারা বিশ্বে উষ্ণায়নবিরোধী জনমত প্রবল হওয়া সত্ত্বেও শুধু আর্থিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ার কারণে উন্নত দেশগুলো অপেক্ষাকৃত দরিদ্র দেশগুলোর ওপর জলবায়ু সন্ত্রাস চালাচ্ছে, এ কথা সর্বজনস্বীকৃত। উন্নত দেশগুলোর অব্যবস্থাপনা ও উদাসীনতার কারণে ইতোমধ্যে বায়ুমণ্ডলের যে ক্ষতি হয়েছে, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ তার কুফল ভোগ করছে। ধনী দেশগুলো এর দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।
বিজ্ঞানীরা বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ুর প্রভাব সম্পর্কে বহুদিন ধরে সতর্কবাণী উচ্চারণ করলেও শিল্পোন্নত ও ধনী দেশগুলো তাতে খুব একটা কর্ণপাত করেনি। তবে এ ব্যাপারে ক্রমাগত চাপের ফলে অবশেষে ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বহুপাক্ষিক কাঠামো ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেন্ট চেঞ্জ। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোয় অনুষ্ঠিত ১৯২টি সদস্যদেশ জলবায়ু বিষয়ে একমত পোষণ করলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতায় কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়নি। অবশেষে ১৯৯৭ সালের ইউএনএফসিসিসি’র কিয়োটা প্রটোকল ১৭৫টি দেশ নিয়ে গঠিত হয়, যা ২০০৫ সাল থেকে কার্যকর হয় এবং সবশেষ প্যারিসে ১৯২টি দেশের প্রতিনিধি নিয়ে সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্ত স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে ধনী দেশগুলো সৃষ্ট জলবায়ুর ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা আসে। বস্তুত এরই ধারাবাহিতকায় কপ২৬-এর নতুন চুক্তিতে আগের তুলনায় দেশগুলো কীভাবে দ্রুত গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমন কমিয়ে আনবে, সে বিষয়ে পরিকল্পনা জানতে চাওয়া হয়েছে এবং এতে কয়লাসহ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো নিয়ে সুর কিছুটা নরম করা হয়েছে। পাশাপাশি জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় দরিদ্র দেশগুলোকে আরও বেশি সহযোগিতা করতে ধনী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকিতে থাকা বিশ্বের সবচেয়ে অরক্ষিত ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। গত দুই দশকে জলবায়ুর প্রভাবে দেশে দুর্যোগের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে অন্তত চারগুণ। এটি আমাদের মতো কৃষিপ্রধান ও অধিক জনসংখ্যার দেশের জন্য মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এ অবস্থায় বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম রাখতে এবং কার্বন নিঃসরণ কমাতে উন্নত দেশগুলোর তাৎক্ষণিক ও উচ্চাভিলাষী অ্যাকশন প্ল্যান গ্রহণ করা জরুরি। পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলোরও প্রশমন ব্যবস্থার দিকে অধিকতর মনোযোগী হওয়া উচিত।