মানুষ সামাজিক জীব। পরিবার, সমাজ ইত্যাদি নিয়েই তাকে বেঁচে থাকতে হয়। মহান আল্লাহর নির্দেশিত পদ্ধতিতে পরস্পর ভালোবাসা ও সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমেই জীবনকে উপভোগ করতে হয়। সব ক্ষেত্রে কঠোরতা জীবনকে সুন্দর করে না।
যেসব বিষয় আল্লাহর বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়, সেসব বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করে নিতে হয়। বিশেষ করে পারিবারিক জীবনের সিদ্ধান্তগুলো পরিবারের সঙ্গে আলোচনা ও বোঝাপড়ার মাধ্যমেই নেওয়া উচিত। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেখানে তোমরা বসবাস করো সেখানে তাদেরও বাস করতে দাও, তাদের সংকটে ফেলার জন্য কষ্ট দিয়ো না। আর তারা গর্ভবতী হলে তাদের সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত তাদের জন্য তোমরা ব্যয় করো; আর তারা তোমাদের জন্য সন্তানকে দুধ পান করালে তাদের পাওনা তাদের দিয়ে দাও এবং (সন্তানের কল্যাণের জন্য) সংগতভাবে তোমাদের মাঝে পরস্পর পরামর্শ করো। আর যদি তোমরা পরস্পর কঠোর হও তবে বাবার পক্ষে অন্য কোনো নারী দুধ পান করাবে। ’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ৬)
উপরোক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর সঙ্গে ইদ্দতকালে কেমন আচরণ করতে হবে, তার নির্দেশনা দিয়েছেন। সাধারণত এই সময়টিতে সদ্য তালাকপ্রাপ্তা সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে মানুষের বিরূপ সম্পর্ক থাকে। এ রকম পরিস্থিতিতেও তাদের সঙ্গে কঠোর আচরণ না করে পরামর্শক্রমে বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করার নির্দেশ দিয়েছেন। এবং তখনো তাদের সঙ্গে সৌহার্দপূর্ণ আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
শুধু পারিবারিক ক্ষেত্রেই নয়, ইসলাম পালনের ক্ষেত্রেও যা কিছু ইসলামে নেই, তা নিজের ওপর কঠোরভাবে চাপিয়ে নেওয়ার অবকাশ নেই। সাহল ইবনে আবু উমামাহ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি ও তাঁর বাবা উমার ইবনে আবদুল আজিজের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি খুবই সংক্ষেপে নামাজ আদায় করলেন, যেন তা মুসাফিরের নামাজ বা প্রায় অনুরূপ। তিনি সালাম ফেরানোর পর উমামাহর বাবা প্রশ্ন করলেন, আল্লাহ আপনার প্রতি সদয় হোন! আমাকে বলুন, এটা কি ফরজ নামাজ, না নফল? তিনি বলেন, এটা ফরজ নামাজ এবং তা অবশ্যই রাসুলুল্লাহর (সা.)-এর নামাজ। আমি ভুল করিনি, তবে তার যতটুকু বিস্মৃত হয়েছি। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে বলতেন, তোমরা নিজেদের ওপর কঠিন কোরো না; ফলে তোমাদের ওপর কঠোরতা চাপিয়ে দেওয়া হবে। অতীতে এক সম্প্রদায় নিজেদের জন্য কঠোরতা অবলম্বন করেছিল, ফলে আল্লাহও তাদের ওপর কঠোর বিধান চাপিয়ে দেন। …(আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯০৪)
অতএব আমাদের উচিত কঠোরতার নীতি থেকে বেরিয়ে এসে মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর নির্দেশিত পথে জীবন পরিচালনা করা।