Saturday, July 27, 2024
spot_img
Homeআন্তর্জাতিকওড়িশার প্রথম মুসলিম নারী বিধায়ক সোফিয়া

ওড়িশার প্রথম মুসলিম নারী বিধায়ক সোফিয়া

ওড়িশা বিধানসভা নির্বাচনে প্রথম কোনো মুসলিম নারী নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি হলেন- সোফিয়া ফিরদৌস। তিনি বিজেপি’র প্রার্থী পূর্ণা চন্দ্র মহাপাত্রকে ৮০০১ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে ওই রাজ্যে প্রথম কোনো মুসলিম নারী বিধায়ক হিসেবে রেকর্ড গড়েছেন।  এ খবর দিয়েছে অনলাইন এনডিটিভি। তার পিতা মোহাম্মদ মোকিম বিদায়ী এমএলএ। তিনি ওড়িশার কাটক থেকে কংগ্রেসের হয়ে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার নির্বাচনের জন্য তিনি বছরের শুরুতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। পিতার প্রচারণার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সোফিয়া ফিরদৌস। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের প্রায় এক মাস আগে বড় একটি আঘাত আসে তাদের পরিবারে। তার পিতা মোকিম রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান মেট্রো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

ফলে ওড়িশা রুরাল হাউজিং ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের ঋণ নিয়ে জালিয়াতিতে তাকে অভিযুক্ত করে আদালত। এতে তিনি নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষিত হন। এর বিরুদ্ধে আপিল করলে সুপ্রিম কোর্ট ওই আদেশের বিরুদ্ধে স্টে অর্ডার দেননি।

এমন অবস্থায় নির্বাচনের বাকি মাত্র ৩০ দিন। কংগ্রেস কোনো প্রার্থী খুঁজে না পেয়ে সোফিয়া ফিরদৌসের ওপর আশা রাখে। ৩২ বছর বয়সী সোফিয়া একজন রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারের ক্যারিয়ার ত্যাগ করেন। নেমে পড়েন ভোটের মাঠে। তাতে বিজেপি’র প্রার্থী পূর্ণা চন্দ্র মহাপাত্রকে ৮০০১ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। এনডিটিভিকে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, অপ্রত্যাশিতভাবে তার রাজনীতিতে আসার কথা। তিনি বলেন, আমি কোনো রাজনীতিক নই। যখন বাবা নির্বাচন করতে অক্ষম হলেন, তখন আমাদের বাসভবনে ৪০০ থেকে ৫০০  নেতাকর্মী-সমর্থক জড়ো হলেন। কাট্টকে বাবা যে সুনাম অর্জন করেছেন কঠোর শ্রমের মাধ্যমে এটা তারই স্বীকৃতি। তারা মিলে সর্বসম্মতভাবে আমাকে নির্বাচনের জন্য অনুমোদন দিলেন। ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের নির্বাচনে পিতার নির্বাচনী প্রচারণায় সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন মিস সোফিয়া। তিনি দ্বার থেকে দ্বারে গিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়েছেন। কংগ্রেসের দলীয় কর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করেছেন। তার জনপ্রিয়তা এবং তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার কাজ করার ফলে যে জনপ্রিয়তা তাই তাকে বেছে নিতে সহায়তা করেছে। প্রচারণার মাঠে নেমে তিনি মাত্র এক মাস সময় পেয়েছেন। এর মধ্যে তাকে প্রস্তুতি নিয়ে বিজেপি’র মতো দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করতে হয়েছে। তিনি শুরুতে নেতাকর্মীদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন তার পিতার কাজের প্রতি আস্থা প্রকাশ করে তারা কী তাকে সমর্থন করবেন? মিস সোফিয়া বলেন, নির্বাচনের জন্য আমার হাতে মাত্র এক মাস সময় ছিল। আমার একটা ভয় ছিল। সেটা হলো সবাই বাবাকে চেনেন। তিনি প্রচুর মাঠপর্যায়ে কাজ করেছেন। তিনি ২০১৪ সালে পরাজিত হয়েছেন। ২০১৯ সালে বিজয়ী হয়েছেন। তাই ভয়টা হলো কেন লোকজন আমাকে ভোট দেবে এবং এত তাড়াতাড়ি আমার ওপর আস্থা রাখবে! এরপর সকাল ৬টা থেকে দুপুর দু’টা পর্যন্ত ঘর্মক্লান্ত হয়ে প্রচারণা চালাই। এরপর আবার বিকাল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। জনগণের কাছে পৌঁছার জন্য আমার হাতে মাত্র একমাস সময় ছিল। আমি শুধু জনগণের দরজা থেকে দরজায় ছুটেছি।

এটাই আমার কাজে এসেছে। বাবার কারণেও আমি সমর্থন পেয়েছি। ফলে যে রিপোর্ট কার্ড আমার হাতে তার জন্য আমরা সবাই এই গর্ব ভাগাভাগি করে নিই। ওড়িশা বিধানসভার সবচেয়ে কম বয়সী এমএলএ’র মধ্যে মিস সোফিয়া অন্যতম। তাকে বিজেপি’র রাজনীতিক এবং নবীন পাটনায়েকের বিজু জনতা দলের (বিজেডি) সঙ্গে চ্যালেঞ্জে টিকে থাকতে হবে। মিস সোফিয়া বলেন, আমি উদ্বেলিত। ২০১৩ সালে ২১ বছর বয়সে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় যোগ দিয়েছিলাম। দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে রিয়েল এস্টেট রেগুলেটরি অথরিটি (পেরা) কার্যকর হয়। আমাকে অনেক পড়াশোনা করতে হয়। পেরা’র ওপর আমাকে প্রেজেন্টেশন দেয়া শুরু করতে হয়।  এভাবেই সরকারের পলিসি এডভোকেসিতে যুক্ত হই। এমনকি তখন আমার সিনিয়ররা, যাদের বয়স ৫০-এর বা ৬০-এর দশকে, তারা বললেন- ও তো এখনো বাচ্চা। বিষয়টিকে আমি খুবই ব্যক্তিগতভাবে নিই। এমনকি আরও পরিশ্রম করতে থাকি।

ওড়িশার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী নন্দিনী সাতপাথির কাছ থেকে ড্রয়িংয়ে উৎসাহ নিয়ে মিস সোফিয়া ‘আয়রন লেডি অব ওড়িশা’র পদাঙ্ক অনুসরণ করছেন। তিনি কাট্টকে ড্রেনেজ এবং মশার সমস্যা নিয়ে বক্তব্য দেয়ার পাশাপাশি এই শহরকে ভারতের রাজধানীর মতো গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একজন ‘মুসলিম এমএলএ’ হিসেবে তার পরিচয় জানতে চাইলে মিস সোফিয়া বলেন- আমি একজন ওড়িয়া, একজন ভারতীয় এবং প্রথমে একজন নারী। রিয়েল এস্টেটে আমার ক্যারিয়ার এবং পেশাগত জীবনে নারীদের ক্ষমতায়নে কঠোর কাজ করেছি। রাজনীতিতেও তাই করবো। একজন মুসলিম রাজনীতিক হয়েও আমি কখনো নিজেকে সেভাবে ভাববো না।

সম্প্রতি ওড়িশায় বিধানসভা নির্বাচনে নবীন পাটনায়েকের ২৪ বছরের শাসনের ইতি ঘটেছে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments