সাংগ্রি-লা ডায়ালগ। পরিচিত এশিয়া নিরাপত্তা সম্মেলন নামে। শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত (২-৪ জুন) অনুষ্ঠেয় এই সম্মেলনে প্রাধান্য পাবে যুক্তরাষ্ট্র-চীন উত্তেজনা। এ ছাড়া এই সম্মেলনে স্থান পাবে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন।
চীন ও তাইওয়ানের মধ্যকার উত্তেজনা, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়গুলো এতে প্রাধান্য পাবে। কিন্তু এতে রাশিয়া বা উত্তর কোরিয়ার কোনো ডেলিগেট অংশ নিচ্ছে না। যোগ দেবেন বিশ্বের শীর্ষ প্রতিরক্ষা বিষয়ক কর্মকর্তারা, সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তারা, কূটনীতিক, অস্ত্র প্রস্তুতকারকরা এবং বিশ্বের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। ৪৯টি দেশের কমপক্ষে ৬০০ ডেলিগেট এতে অংশ নেবেন।
মূল বক্তব্য উপস্থাপন করবেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ। বিশ্লেষকরা বলছেন, এরই মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে বহু দ্বিপক্ষীয় এবং বহুপক্ষীয় সামরিক-সামরিক বৈঠক। মূল সম্মেলনের ফাঁকে এরই মধ্যে এসব বৈঠক হয়েছে। ফলে এই নিরাপত্তা সংলাপ এসব সম্পর্কের ক্ষেত্রে হবে মূল্যহীন।
মূল সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
সোমবার পেন্টাগন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন চীনের নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল লি শাংফু। বেইজিংয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে সব সময়ই মতবিনিময় হয়। কিন্তু বর্তমানে যে জটিলতা তার পুরোটার জন্য দায়ী যুক্তরাষ্ট্র।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলে যাচ্ছে তারা দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগকে শক্তিশালী করতে চায়। কিন্তু আরেকদিকে কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা এবং চীনের উদ্বেগ উপেক্ষা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের আস্থাকে মারাত্মকভাবে খর্ব করছে। তবে কি প্রতিবন্ধকতা যুক্তরাষ্ট্র সৃষ্টি করছে সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত বলেননি।
চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সাক্ষাৎ হচ্ছে না। একে বৃহস্পতিবার টোকিওতে দুর্ভাগ্যজনক বলে অভিহিত করেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। বলেছেন, তাদের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। অস্টিন বলেন, লি শাংফুর সঙ্গে কথা বলার যেকোনো রকম সুযোগ এলে তাকে স্বাগত জানাবো। আমি মনে করি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়গুলো একে অন্যের সঙ্গে নিয়মিত ভিত্তিতে কথা বলা উচিত। অথবা যোগাযোগের চ্যানেলগুলো উন্মুক্ত রাখা উচিত।
আঞ্চলিক কিছু কূটনীতিক ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক বলেছেন, তারা দৃষ্টি রাখবেন চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জেনারেল লি শাংফুর দিকে। মার্চে তাকে এই মন্ত্রণালয়ে নতুন দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। রাশিয়া থেকে অস্ত্র কেনার কারণে ২০১৮ সালে তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও চীনা ব্যবস্থায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী একটি কূটনৈতিক ও আনুষ্ঠানিক পদ, তবু লি শাংফু সেখানে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের অধীনে সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেন। শি জিংপিংয়ের সামরিক মিত্র ঝাং ইউশিয়ার সঙ্গে আছে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।
সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির লি কান ইউ স্কুল অব পাবলিক পলিসির ভিজিটিং সিনিয়র রিসার্স ফেলো ড্রিউ থম্পসন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে এড়িয়ে চলার সিদ্ধান্ত সর্বোতভাবে শি জিনপিংয়ের সিদ্ধান্ত। বাস্তবতা হলো যুক্তরাষ্ট্রকে খুব নেতিবাচকভাবে তুলে ধরতে বেশ কিছু নির্দেশনা নিয়ে গেছেন জেনারেল লি। স্থিতিশীল এবং উন্নত সম্পর্ক নিয়ে আলোচনায় প্রাধান্য নেই।