Friday, July 26, 2024
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামএবার ‘গুদাম পর্যবেক্ষণে’ বিদেশ ভ্রমণ

এবার ‘গুদাম পর্যবেক্ষণে’ বিদেশ ভ্রমণ

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ খাদ্য অধিদপ্তরের ‘দেশের বিভিন্ন কৌশলগত স্থানে নতুন খাদ্য গুদাম ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পে বিদেশ যেতে চান ৩০ জন কর্মকর্তা। ‘বৈদেশিক প্রশিক্ষণের নামে’ এ খাতে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। উল্লেখ্য, সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের আওতায় দেশের ৮ বিভাগের ৫৩টি জেলার ১২৮ উপজেলা এবং চার সিটি করপোরেশনে ১৯৬টি খাদ্য গুদাম নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেলে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে খাদ্য অধিদপ্তর। প্রকল্পটিতে ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪০ জনকে স্থানীয় প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে। একইসঙ্গে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩০ জনের বৈদেশিক প্রশিক্ষণের সংস্থান রাখা হয়েছে। অপ্রিয় হলেও সত্য, উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশ সফরের জন্য মরিয়া এক শ্রেণির কর্মকর্তা। এ লক্ষ্যে প্রকল্প প্রস্তাব প্রস্তুত করার সময়ই প্রথমে নজর দেওয়া হয় বিদেশ সফর ও গাড়ি কেনার ওপর। প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও যেনতেন সাধারণ বিষয়ে বিদেশ সফরের এ প্রবণতা থেকে অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা মনে করি, প্রকল্পগুলোয় এ ধরনের ব্যয় প্রস্তাবনার বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।

ইতঃপূর্বে ‘পুকুর ও খাল উন্নয়ন’ বিষয়ক প্রশিক্ষণ ছাড়াও ঘাসচাষ ও ঘাসকাটা শিখতে কর্মকর্তাদের বিদেশ যাওয়ার ছক সাজানোর কথা গণমাধ্যমে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে সেসময় জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও লক্ষ করা গেছে। কাজেই প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কাম্য নয়। কোভিড-১৯-এর প্রভাবে রাজস্ব আদায়ের গতি শ্লথ হওয়ায় সরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন সংকটের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসী ব্যয় সংকোচনের পথে হাঁটছে সরকার। অথচ দেখা যাচ্ছে, এক শ্রেণির সুবিধাভোগী কর্মকর্তা সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে প্রকল্প বাস্তবায়নের আড়ালে ‘ধান্ধা’ হাসিলের তালে রয়েছেন, যা কঠোরভাবে রোধ করা প্রয়োজন। বৈশ্বিক মহামারির মধ্যে কোনো প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় খাতে অর্থ বরাদ্দ মোটেই কাঙ্ক্ষিত নয়।

দেশে প্রকল্প গ্রহণ থেকে বাস্তবায়নের নানা পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। কোনো উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবেই অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো যেমন উচিত নয়, তেমনি কোনো প্রকল্পে অপচয়ও কাম্য নয়। দুর্ভাগ্যজনক হলো, প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের অধিকাংশই প্রয়োজনীয় বিষয়ে দক্ষ হন না। এমনকি সঠিকভাবে ব্যয় নির্ধারণও করতে পারেন না। অবশ্য এর নেপথ্যে নানা ফন্দি-ফিকির থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতিটি প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হলে ব্যয় যেমন হ্রাস পায়, তেমনি হ্রাস পায় জনদুর্ভোগও। ভ্রমণ কতটা ফলপ্রসূ হবে এবং এতে সরকারি তহবিলের অপচয় হবে কিনা-প্রকল্প গ্রহণের পূর্বেই তার মূল্যায়ন হওয়া উচিত। অথচ সুষ্ঠুভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেশে আগে যেসব সমস্যা বিদ্যমান ছিল, সেগুলোর অধিকাংশ এখনও রয়ে গেছে। দেশ ও জনগণের স্বার্থে সরকারি বিনিয়োগ পরিকল্পনার যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি, তা বলাই বাহুল্য। এ লক্ষ্যে কেবল আলোচ্য প্রকল্প নয়, অন্যান্য প্রকল্পেও অপচয় বন্ধসহ যথাসময়ে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments