বহুপ্রতিভাবান তিনি। একাধারে চলচ্চিত্র নির্মাতা, কবি, গীতিকবি ও প্রখ্যাত স্থপতি। ২০১৯ সালে তিনি বইমেলার স্থাপত্য নকশা করে বদলে দিয়েছিলেন বইমেলার চেহারাই। অমর একুশে বইমেলা শুরুর আগে হঠাৎই শোনা গেল এবার নকশা করছেন না এনামুল করিম নির্ঝর। বিষয়টি নিয়ে প্রকাশিত হলো তার সঙ্গে আলাপচারিতা।
শিমুল সালাহ্উদ্দিন : নির্ঝর ভাই কেমন আছেন?
এনামুল করিম নির্ঝর : আমার মতোন ভালো আছি!
এবার বইমেলার মাঠের নকশা কেন করলেন না?
আমাকে করতে বলা হয়নি বলে। আসলে করিনি বললে ভুল হবে। গত ২০১৯ থেকে পরপর চার বছর অমর একুশে বইমেলার পরিচালনা কমিটির সদস্য ছিলাম। সেই সময়টায় বাংলা একাডেমি কর্র্তৃপক্ষ ঠিক সময়মতো বেশ আগেই নোটিস দিয়ে মিটিংয়ে ডাকত, পরামর্শ নিত। যে কারণে মূল আয়োজনের শুরু থেকেই পুরোপুরি সম্পৃক্ত থাকতাম। এবার তারা সময়মতো কিছুই জানায়নি। গত চার বছরে আমার সম্পৃক্ততার জন্য সবাই অনুমান করেছে আমি আগের মতোই যুক্ত হয়ে এবারের বইমেলার পরিকল্পনা এবং নকশা করছি। সে কারণে যখন আমাকে বিভিন্ন কারণে যোগাযোগ করতে শুরু করে তখন আমি না পেরে সামাজিক মাধ্যমে একটা পোস্ট দিয়ে লিখে দিই যে, যেহেতু এবার বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ আমাকে প্রয়োজন মনে করেনি, সে কারণে আসলে আমি এর সঙ্গে যুক্ত নই। তার বেশ কয়েকদিন পর বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ আমাকে সাজসজ্জা উপ-কমিটির একজন সদস্য হিসেবে দুপুরবেলায় চিঠি পাঠিয়ে বিকেলেই মিটিংয়ে যোগ দিতে বলে। আমি একজন খুব সামান্য পেশাজীবী হলেও তো মোটামুটি ব্যস্ততার মধ্যে থাকি। তারা সৌজন্য হিসেবে আমি এই কমিটিতে আদৌ থাকতে চাই কি না বা আমি সময় দিতে পারব কি না সময় দিতে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করেনি। পরে আমি অপারগতা প্রকাশ করে তাদের চিঠি দিয়ে আমার নাম প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠাই। এই চিঠির উত্তর আমি এখনো পাইনি। আসলে পুরো ব্যপারটা নিয়ে আমি একটু অস্বস্তি এবং বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আছি।
বাংলা একাডেমির সঙ্গে ৪ বছর স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে কাজ করে কী পেলেন?
আমি যেহেতু জাতীয় স্বার্থে কাজটা করেছি, সে কারণে এখানে কোনো চাওয়া পাওয়া নেই। যেটুকু চেষ্টা করেছি তার প্রভাব যদি ভবিষ্যতে তারা ব্যবহার করতে পারে। আমার উদ্যোগটা তো একটা প্রক্রিয়া ছিল, যা দুই-তিন-চার বছরে করে শেষ করার মতো বিষয় না। এটা একটা চর্চায় পরিণত করতে হলে একটা নির্দিষ্ট আগ্রহী দলকে তৈরি করা জরুরি। আমি স্বেচ্ছাসেবা দিচ্ছিলাম এমন একটা প্রক্রিয়া তৈরি করতে, যেন সেই প্রক্রিয়ায় ভবিষ্যতের সৃজনশীল পেশাজীবীরা পেশাগতভাবে নিয়মিত কাজটা করতে পারে।
তাদের অবজ্ঞার কারণে অকৃতজ্ঞ মনে হয়েছে ঠিক, তবে সেটা আমি এভাবে বলতে চাই না। মনে হবে আমাকে ডাকেনি তাই বলছি। অনেক ভালো কিছুও হতে পারে এবার।
বাংলা একাডেমির তখনকার মহাপরিচালক প্রকৌশলী কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী আপনাকে মেলার নকশা করার কাজে যুক্ত করেছিলেন। সিরাজী ভাইয়ের প্রস্থানেই কি চার বছর স্বেচ্ছাসেবা দেওয়া একজন স্থপতি কবি চলচ্চিত্র নির্মাতা লেখক অপমানিত হলেন?
সিরাজী ভাই জয়েন করার আগ থেকেই আমি কিন্তু পরিচালনা পরিষদের সদস্য ছিলাম। তারপরে উনি যখন এলেন তখন আমি আরও শক্তি পেলাম এবং প্রকৌশলী হিসেবে উনি আমাকে যথেষ্ট স্বাধীনতা দিয়েছেন, সহায়তা করেছেন এবং সব সময় আমার সঙ্গে ছিলেন।
স্বেচ্ছাসেবা দিলে আসলে কোনো আকাক্সক্ষা থাকে না। আর আমি মনে করি আমার সম্মানটা এতটা ঠুনকো নয় যে আমাকে একবার বাংলা একাডেমি ডাকল না এতে অপমানিত বোধ করলাম। সেটা মনে করি না। বরং আমার মনে হয় যে এ ধরনের আয়োজনগুলোতে উৎসাহী যারা এগিয়ে আসে তাদের যদি সুযোগ দিই তাহলেই আসলে বিষয়গুলো বাস্তবায়িত হবে।
সামনের বছর মেলা বিন্যাসের কাজে কি আমরা আপনাকে দেখব?
এটা আমি জানি না আসলে। তবে যদি রাষ্ট্র আমাকে সুযোগ দেয় তাহলে এই পুরো ব্যাপারটাকে আমাদের সামাজিক সাংস্কৃতিক উদ্যোগ হিসেবে একটা অনন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য আমার একটা চিন্তা আছে গত চার বছরের অভিজ্ঞতা থেকে। যাতে করে ভবিষ্যতে যারা স্থপতি, শিল্পী, গ্রাফিক ডিজাইনার এবং যারা যারা আছেন এমনকি যারা এই ব্যবসাটা করেন তাদেরও সম্পৃক্ত করে আমরা একটা প্রক্রিয়া হিসেবে কিছু করতে পারি।
এবার মেলায় আপনার কী কী বই প্রকাশিত হচ্ছে?
আমি তো নিয়মিত লেখক নই। তবে ঢাকা শহরে আসার আগে আমার প্রথম যে কবিতার বইটা প্রকাশিত হয় ১৯৮২ সালে, সেটা চল্লিশ বছর পর পুনঃপ্রকাশ হতে যাচ্ছে। এই বইটা প্রকাশ হওয়ার পরে কবি হিসেবে আমার মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু এই পুনঃপ্রকাশের মাধ্যমে কী হয়, আমি জানি না। ‘চৌদ্দ গোষ্ঠীর উদ্ধার পর্ব’ পুনঃপ্রকাশ করছে বৈতরণী।
মেলায় হাজারো মানুষ অংশ নেবেন, তাদের প্রতি কী বলতে চান?
তাদের প্রতি আসলে একটাই বলার আছে যে বইমেলাটি আমাদের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অনুষ্ঠিত হয়। গত চার বছর ধরে চেষ্টা করছি একে স্বাধীনতা স্তম্ভের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার এবং আমাদের পুরো প্রাঙ্গণটার মধ্যে সবাইকে সম্পৃক্ত করে আন্তরিক করে তোলার। সেই জন্য মনে হয় যে সবাই যেন এদিকে আন্তরিক থাকে এবং যেন উদ্দেশ্যগুলো সফল হয়।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ নির্ঝর ভাই।