Friday, September 22, 2023
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামএই ভোগান্তির শেষ কোথায়?

এই ভোগান্তির শেষ কোথায়?

ড. অজয় কান্তি মন্ডল

সপ্তাহের অন্যান্য দিনের চেয়ে ছুটির দুইদিন একটু ভিন্নভাবে যায়। ভিন্নভাবে বলছি এজন্য যে, এই দুইদিন দাপ্তরিক ব্যস্ততা না থাকলেও পারিবারিক কাজ সারতে বেশ তাড়াহুড়োর মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হয়। সপ্তাহ জুড়ে জমে থাকা ব্যক্তিগত কাজগুলো এই ছুটির দুই দিনে শেষ করার পরিকল্পনা থাকে। ঠিক তেমনই, গেল সপ্তাহের ছুটির দিনে কর্মময় একটি দিনের পরিকল্পনা করে সকালে ঘুম থেকে উঠে বাজারে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। সময় তখন সকাল ৬টা বেজে ১০ মিনিট। এমন সময় বিদ্যুৎ চলে গেল। বাইরে তখনো সেভাবে ভোরের আলো ফোটেনি, সেইসাথে দিনের শুরুতে বিদ্যুতের এমন বিমুখতা মেজাজকে বিগড়ে দেবে, সেটাই স্বাভাবিক। এরপর চা খাওয়ার জন্য রান্না ঘরে গিয়ে গ্যাসের চুলা জ্বালাতেই দেখি গ্যাস নেই। ইদানিং এই গ্যাস ও বিদ্যুতের সমস্যা এতটা চরমে পৌঁছেছে, সেটা বলে বোঝানোর উপায় নেই।

বলছি ঢাকা শহরের খুব কাছাকাছি সাভার উপজেলার কথা। ভোর সাড়ে চারটা বাজলেই এখানে গ্যাসের সাপ্লাই বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। সারাদিন গ্যাস থাকে না। রাত ১১টা থেকে গ্যাসের সাপ্লাই স্বাভাবিক হলেও ভোর ৫টায় পুরোপুরি শেষ। আবার কোনো কোনো দিন থেমে থেমে গ্যাস আসে। এর অর্থ একেবারে গ্যাস নেই থেকে ধীরে ধীরে গ্যাসের চাপ বাড়তে থাকে। এভাবে মিনিট দু’য়েক ধরে গ্যাসের চাপ বাড়তে বাড়তে একেবারে তুঙ্গে পৌঁছে আবারো কমা শুরু করে এবং মুহূর্তের মধ্যে নাই হয়ে যায়। আধা ঘণ্টা পরে একই ঘটনার আবার পুনরাবৃত্তি ঘটে এবং পুরো দিন চলতে থাকে। যদি কেউ এই গ্যাসের সাহায্যে প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে চায়, তাহলে তাকে চুলার পাশের তাক ধরে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকতে হবে গ্যাস কখন সর্বোচ্চ হচ্ছে সে সময়ের জন্য। দুঃখের বিষয় হলো, সেটাও প্রতিদিনের ঘটনা না। ঐ যে বললাম কালেভদ্রে এমনটা হয়। এই গ্যাস দিয়ে আদৌ কোনো প্রয়োজন মেটানো সম্ভব নয়। তবে সারাদিন গ্যাস থাকবে না, এটা মোটামুটি নিয়মিত। বিগত কিছুদিন শীতের মৌসুম থাকায় সমস্যা বেশি হয়েছে, গরমের দিনে একটু হলেও গ্যাসের সাপ্লাইয়ে স্বস্তি মিলবে, এমনটাই আশা করছিল এলাকাবাসী। কিন্তু সেই আশা এখন ক্ষীণ। শীতের তীব্রতা কমেছে ঠিকই কিন্তু ক্রমান্বয়ে গ্যাসের সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে বা হচ্ছে।

যাইহোক, ছুটির দিনের সাত সকালে গ্যাস ও বিদ্যুতের এমন বিমুখ আচরণ দেখে মেজাজ গরমের পাশাপাশি কিছুটা মজাও পেলাম। মজা লাগল এটা ভেবে যে, কিছুদিন আগে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। তখন বলা ছিল, দাম বৃদ্ধি করার পরে গ্যাসের সাপ্লাইয়ে উন্নতি হবে। গ্রাহক সেবার মানের উন্নতি হবে, সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েই গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। পূর্বের নির্ধারিত মূল্যের তুলনায় কিছু কিছু শিল্প কারখানায় গ্যাসের মূল্য দ্বিগুণ বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিনগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমার জানা নেই, দাম বৃদ্ধির পর শিল্পকারখানায় গ্যাসের সাপ্লাই নিরবচ্ছিন্ন বা উন্নতি করা হয়েছে কিনা। যদি সেটি করা হয়, তাহলে ভালো কথা। কিন্তু এই দাম বাড়ার পর থেকে পূর্বের তুলনায় আবাসিক খাতের গ্যাস সাপ্লাইয়ের যে নাজেহাল অবস্থা ছিল, সেটি আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। হলফ করে বলা যায়, সাভার অঞ্চলের আবাসিক খাতে গ্যাসের সাপ্লাই একেবারে ভেঙে পড়েছে।

ঢাকা থেকে আসা অফিসের সহকর্মীদের মাধ্যমে জানতে পারি, তাদের বাসায় কোনরকম গ্যাস বা বিদ্যুতের সমস্যা নেই। তীব্র শীতের সময়ে মাঝেমধ্যে গ্যাসের সমস্যা হয়েছিল কিন্তু এখন পুরোপুরি স্বাভাবিক। তাদের ওখানে এখনো লোডশেডিং শুরু হয়নি। গ্রামের বাড়ি খোঁজ নিয়ে দেখি, সেখানেও বিদ্যুতের কোনো সমস্যা নেই। লোডশেডিং নেই। কিন্তু এখানকার অবস্থা এতটাই অসহনীয়, সেটা এখানে চার মাসের বসবাসের অভিজ্ঞতা থেকেই ভালোভাবে বুঝে গেছি। মন্দের ভালো আবাসিক খাতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হয়নি। কিন্তু বেড়েছে সিলিন্ডারে ব্যবহৃত এলপিজির দাম, যে সিলিন্ডার এই এলাকার মানুষের রান্নাবান্নার একমাত্র অবলম্বন ছিল। তাই আবাসিক খাতে গ্যাসের দাম স্থিতিশীল থাকলেও অন্যান্য সেক্টরে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি সাভারবাসীর জন্য মরার উপর খাঁড়ার ঘা মনে হচ্ছে। কেননা পূর্বের চেয়ে ৪০০-৫০০ টাকা বেশি দামে সিলিন্ডার কিনতে হচ্ছে। পাশাপাশি আবার বহাল তবিয়তে তিতাস গ্যাসের মাসিক বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। গ্যাসের সাপ্লাই থাকুক আর না থাকুক বিলের কিন্তু কোনো হেরফের নেই। এই বিলের ব্যাপারে একটু না বললেই নয়। একজন গ্রাহক যদি দুইমাস কোনো কারণে দেশের বাড়ি বা অন্য কোথাও যায়। তাহলেও তাকে পুরো দুই মাসের বিল পরিশোধ করতে হয়। অর্থাৎ ব্যবহার না করলেও সম্পূর্ণ বিল দিতে হবে। বিষয়টা হাস্যকর হলেও যুগের পর যুগ তিতাস গ্যাসের বিতরণে এই নিয়ম চলে আসছে। গ্যাসের সরবরাহ থাকুক বা না থাকুক, চুলা জ্বলুক বা না জ্বলুক, গ্রাহক ব্যবহার করুক বা না করুক গ্রাহককে পূর্ণ বিল পরিশোধ করতেই হবে। আবার বিগত দিনের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের সূত্র ধরে জানতে পারি, গ্রাহকদের কেউ কেউ আছে, গ্যাসের চুলা সারারাত জ্বালিয়ে শীতের সময় রুমের উষ্ণতা বাড়ায়, বর্ষার সময় কাপড় শুকায়, দেশলাই কাঠি বাঁচানোর উদ্দেশ্যে সারারাত চুলা জ্বালিয়ে রাখে। এসকল গ্রাহকও গ্যাস না পাওয়া গ্রাহকের সমপরিমাণ মাসিক বিল দিচ্ছে। সহজ কথায় কেউ ব্যবহার না করে পুরো বিল দিয়ে যাচ্ছে, আবার কেউ কেউ ২০ জন গ্রাহকের সমান গ্যাস ব্যবহার কিংবা অপচয় করে একই বিল দিচ্ছে। এমন আজব নিয়ম পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে আছে কিনা আমার জানা নেই।

ঢাকায় বসবাসকারী অনেকের থেকে জানতে পারি, প্রিপেইড মিটার লাগানোর পর থেকে তাদের গ্যাসের সংকট এখন নেই বললেই চলে। তারা অনেকটাই খুশি এটা ভেবে যে, আগের যে গদবাঁধা বিল দেওয়ার নিয়ম ছিল প্রিপেইড মিটার লাগানোর পরে সেটা সংকুচিত হয়ে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে, সেইসাথে সার্বক্ষণিক গ্যাসের সাপ্লাই থাকছে। আমার প্রশ্ন, এই প্রিপেইড মিটার আবাসিক খাতের সব জায়গায় সংযোগ দিতে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের সমস্যা কোথায়? দেশব্যাপী সব বাসা বাড়িতে যদি বিদ্যুতের মেইন মিটার, সাব মিটার, ডিজিটাল মিটার বা বর্তমানের চালুকৃত প্রিপেইড মিটারের সংযোগ স্থাপন করা যেতে পারে তাহলে গ্যাস বিতরণের প্রিপেইড মিটারের ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে কী সমস্যা আছে? পাইপ লাইনে গ্যাসের সংযোগ দেশের সকল জেলায় এমনকি সকল বিভাগেও নেই। কিন্তু বিদ্যুতের সংযোগ দেশের প্রতিটি গ্রামে সকলের বাড়ি বাড়ি আছে। বিদ্যুৎ বিতরণে এতটা বৃহৎ পর্যায়ে মিটারের ব্যবস্থা করা গেলে গ্যাস বিতরণের ক্ষেত্রে কেন করা যাবে না, এই সহজ বিষয়টা বোধগম্য নয়। মোদ্দাকথা হলো, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের এই আজগুবি নিয়ম অচিরেই বন্ধ করা উচিত। একজন গ্রাহককে কোনো সেবা না দিয়েই পুরো মাসের বিল নেওয়া কোনমতে যুক্তিসঙ্গত নয়। যে গ্রাহক যতটুকু ব্যবহার করবে তার থেকে ততটুকুই বিল নেওয়া সমীচীন। সারাবিশ্ব যেখানে জ্বালানি সংকটে ভুগছে, সেখানে এই মূল্যবান জ্বালানির অপচয় রোধ করে সুষ্ঠু বণ্টনের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

এবার আসি বিদ্যুৎ বিতরণে বেহাল দশা নিয়ে। পুরো শীতের সময়টাতে সাভারে অবস্থান করছি। শীতের সময়ও দিনে ২-৩ বার লোডশেডিং হয়েছে। তখনই মনে হয়েছিল, এখানকার লোডশেডিং অন্যান্য এলাকার মতো না। কেননা, এই লোডশেডিংয়ের স্থায়িত্ব থাকত দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। বর্তমানে তা আরও বেড়েছে। বিগত কিছু দিন থেকে এখানে নতুন এক ধরনের নিয়ম শুরু হয়েছে। সপ্তাহের কর্মদিবসের ২ থেকে ৩ দিন সারাদিন বিদ্যুৎ সাপ্লাই বন্ধ থাকে। এটা লোডশেডিংয়ের নতুন সংজ্ঞা বা নিয়ম কিনা জানা নেই। তাও ভালো, যদি বাকি ২/৩ দিন নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের সাপ্লাই থাকত। কিন্তু অন্যান্য দিনের নিয়মিত লোডশেডিং নিয়েই বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষের এই নতুন নিয়ম চালু হয়েছে। এখানে একঘণ্টা বিদ্যুৎ দিয়ে টানা ২ থেকে ৩ ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয়। একবার বিদ্যুৎ গেলে সেটা ২ ঘণ্টার আগে আসবে, এটা আশা করা বোকামি। মাঝেমধ্যে যার ব্যপ্তি ৮-১০ ঘণ্টায় গিয়ে ঠেকে। আবার ধারাবাহিক যে লোডশেডিং আছে, সেটা ভোর ৬টা থেকে শুরু হয়ে চলে রাত ১০টা অবধি। এরপরেও লোডশেডিং হয় কিনা জানা নেই। কেননা স্বভাবতই রাত ১০টার দিকে ঘুমানোর চেষ্টা করি। আবার গরমের তীব্রতা এখনো সেভাবে শুরু হয়নি, এজন্য ফ্যানও লাগে না। তাই রাতে লোডশেডিং হলে সেটা বুঝতে পারি না।
কর্মজীবনে গবেষণা পেশায় আছি। নিঃসন্দেহে গবেষণা কাজ পরিচালনা করতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দরকার হয়। সকাল ৯টায় অফিস শুরু। সকালে সমস্ত দিনের কর্ম পরিকল্পনা করেই অফিসে আসি। কিন্তু অফিসে ঢুকেই দেখি বিদ্যুৎ নেই। এমন পরিস্থিতিতে সমস্ত কর্ম পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। অফিসে বহু শপস্টিকেটেড যন্ত্রপাতি আছে। যেগুলোতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের প্রয়োজন পড়ে। সব যন্ত্রের সাথে উচ্চ ক্ষমতার আইপিএস আছে। যেগুলো এসব যন্ত্রকে এক থেকে দেড় ঘণ্টার ব্যাকআপ দেওয়ার ক্ষমতা আছে। এই আইপিএসগুলো চার্জ করতেও ২-৩ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের প্রয়োজন পড়ে। আবার এসব যন্ত্রের কোনো কোনটায় একটা স্যাম্পল এনালাইসিস করতে কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা সময় লাগে। এই পুরো সময়টাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের প্রয়োজন পড়ে। এছাড়াও এসব যন্ত্র সচল রাখতে মাঝেমধ্যে কোনো কারণ ছাড়াই চালানোর প্রয়োজন পড়ে। আগে থেকে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের সাপ্লাই নিশ্চিত না হয়ে উক্ত যন্ত্রপাতি চালু করা যায় না। বিদ্যুতের অনুপস্থিতিতে এসব যন্ত্র চালাতে উচ্চ শক্তি সম্পন্ন জেনারেটারের দরকার পড়ে। সেই জেনারেটরের ব্যবস্থাও অফিসে আছে। এসব জেনারেটরে অনেক বেশি জ্বালানির প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু সম্প্রতি বিভিন্ন দিক বিবেচনায় সরকারের পক্ষ থেকেও প্রতিটি সরকারি অফিসে ব্যয় সংকোচনসহ বেশ কিছু খাতে খরচ কমানোর জন্য নির্দেশনা আছে। যে কারণে এই জেনারেটর চালাতেও কিছু বাধ্যবাধকতা আছে। এহেন পরিস্থিতিতে গবেষণা কাজে বিঘœসহ এসকল শপস্টিকেটেড যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ ব্যপকভাবে ব্যহত হচ্ছে। যেগুলোর উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া খুবই জরুরি।

দেখা গেছে, সাভার এলাকায় তৈরি পোশাক শিল্প, কাঁচ ও সিরামিক শিল্প, ঔষধ শিল্প থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের প্রচুর পরিমাণে শিল্পকলকারখানা অবস্থিত, যে কলকারখানাগুলোতে নিঃসন্দেহে ব্যাপকহারে বিদ্যুতের চাহিদা থাকে। হয়তো এই পরিমাণ চাহিদা এখানকার বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ ঠিকমত মেটাতে পারছে না। ফলে গরম আসার আগে থেকেই লাগাতার লোডশেডিং শুরু হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষের সাথে কলকারখানার মালিকেরা সেভাবেই চুক্তিবদ্ধ থাকতে পারে। এসব কলকারখানায় বিকল্প উপায়ে বিদ্যুৎ সাপ্লাই দেওয়ার সুযোগও থাকতে পারে। কিন্তু আবাসিক এলাকায় এসবের কোনো সুযোগ নেই। তাই আবাসিক এলাকা বা কোনো গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ সাপ্লাই এই শিল্প-কলকারখানার সাথে আদৌ মেলানো উচিত নয়। এলাকায় বসবাসকারী সকলের ধারণা, এবারের গরমের সময় হয়তো বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। কেননা শীতের সময় থেকে যে হারে লোডশেডিং শুরু হয়েছে, সে হিসাবে আগামী দিনের অবস্থা যে অন্যান্য বছরের তুলনায় নাজুক হবে, সেটা সবাই ভালোভাবে অনুমান করতে পারে। কোনো এলাকার শিল্পকারখানার সাথে সেখানকার আবাসিক এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগের যোগসূত্র থাকা সমীচীন কিনা সেটা বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষের অবশ্যই ভেবে দেখা উচিত।

তবে এখানে কিছুদিন থাকার অভিজ্ঞতায় মনে হয়েছে, অল্পকিছু স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ ছাড়া এই এলাকায় বসবাসকারীদের অধিকাংশই শ্রমজীবী। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নামেমাত্র বেতনের চাকরি করতে যাদের এখানে এসে কোনরকমে টিকে থাকা। যাদের সার্বক্ষণিক শীততাপ যন্ত্রের মধ্যে বা ফ্যানের বাতাসে থাকার প্রয়োজন পড়ে না। গ্যাস না থাকলে যারা একগ্লাস পানি খেয়ে দিন পার করতে পারে। কিংবা বিদ্যুৎ না হলেও আঁধারের মধ্যে গরম সহ্য করে পার করতে পারে বছরের পর বছর। তাদের জীবনমান নিয়ে ভাববার অত সময় উঁচু তলার মানুষদের নেই। মালিকপক্ষ যাদের নায্য পাওনা বা অধিকার না দিলেও কোনো প্রতিবাদ করতে পারে না। প্রভাবশালী এসব মালিকপক্ষের ভয়ে কোনরকমে জড়সড় হয়েই তাদের দিনাতিপাত করতে হয়। এই এলাকায় জনসাধারণের চলাচলের জন্য রাস্তায় ফুটপাত না থাকলেও মহাসড়কের পাশ দখল করে চলে ইট, বালু, খোয়া বিক্রির রমরমা ব্যবসা। রাস্তা সংস্কারের নামে যেখানে মাসের পর মাস মাটি জমা করে স্তূপ করে রাখা থাকে। আর মহাসড়ক দিয়ে উচ্চশব্দে হাইড্রোলিক হর্ন বাজাতে বাজাতে হাওয়ার বেগে চলমান ট্রাক, বাস, পরিবহন এসব ধুলাবালি উড়িয়ে লোকালয় ভরে দেয়, ভরে দেয় সবুজ প্রকৃতি, পথচারীর সমস্ত শরীর।

ছুটির দিনের সকালে আয়েশ করে চা খাওয়ার আশা বাদ দিয়ে বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। বাজার শেষে বাসায় ফিরে দেখলাম, তখনো বিদ্যুৎ আসেনি। বুঝতে পারলাম, আজ হয়তো ওই যে সারাদিনের যে লম্বা লোডশেডিং হয়, তার একদিন। চুলায় গ্যাস নাই, আবার লাইনে বিদ্যুৎ নাই তাই দুপুরের খাবার রান্না মোটামুটি অনিশ্চিত। বিদ্যুৎ থাকলে রাইস কুকারে ভাত রান্নার ব্যবস্থা করা যেত। কিন্তু সেই উপায় নেই। বাসায় সিলিন্ডারের চুলা আছে। কিন্তু চুলার চাবি চালু করলেই সিলিন্ডারের দাম বাড়ছে এই ভেবে কেমন যেন ভিতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে। কেননা আমার আয় তো বাড়েনি। বাড়তি এই ব্যয় সামাল দিতে হলে অবশ্যই মাসের অন্যান্য ব্যয় সংকোচন করতে হবে। এদিকে বর্তমান বাজার পরিস্থিতি অধিকাংশ মানুষের অনুকূলে নয়। এই চিন্তায় দেয়ালে টাঙানো ক্যালেন্ডারের দিকে তাকিয়ে আঙুল গুনতে থাকি, এ মাসের আর কতদিন বাকি। কতদিন পরে বেতন জমা হবে। হাতে যে টাকা আছে তাতে বাকি কয়টা দিন চলা যাবে কিনা।

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments