গত রোববার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এবার পাশের হার ও জিপিএ-৫ দুটিই বেড়েছে। ৯টি শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসিতে মোট পাশের হার ৯৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ, কারিগরি বোর্ডের এইচএসসি ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা (বিএম) পরীক্ষায় ৯২ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং আলিম পরীক্ষায় ৯৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। সব মিলে পাশের হার ৯৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ। উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় এবার সব বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। কেবল বিভাগভিত্তিক তিনটি করে নৈর্বাচনিক বিষয়ে আংশিক সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটির মতো বিষয়ে ‘সাবজেক্ট ম্যাপিং’ করে গ্রেড দেওয়ার পর পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের সঙ্গে মিলিয়ে চূড়ান্ত ফলাফল তৈরি করা হয়েছে।
পাশের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। তবে শিক্ষার মান আমরা কতটা বাড়াতে পেরেছি, তা নিয়ে সংশয় রয়েই গেছে। মনে রাখতে হবে, পাশের হার ও জিপিএ-৫-এর সংখ্যা বৃদ্ধির চেয়েও বেশি জরুরি হলো শিক্ষার মান বাড়ানো। এজন্য বাস্তব অগ্রগতির নিরীক্ষা হওয়া দরকার। একইসঙ্গে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসেও পৌনে ৫ শতাংশ পরীক্ষার্থী কেন ফেল করেছে, সেটাও খতিয়ে দেখা উচিত। বর্তমানে পরীক্ষায় নকলের প্রবণতা অনেকটাই কমে এসেছে; একইসঙ্গে আরও একটি স্বস্তিদায়ক বিষয় হলো-প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো অভিযোগ এবার শোনা যায়নি। তবে এখনো দেশে নোট-গাইডবইয়ের দৌরাত্ম্য ও কোচিং বাণিজ্যের সংস্কৃতি বন্ধ হয়নি। বলা বাহুল্য, শিক্ষার মান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এগুলো নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আমরা মনে করি, কেবল ভালো ফল নয়, অধ্যয়নের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জীবনবোধ, নিয়মানুবর্তিতা, নৈতিকতা ও নির্মল চরিত্র গঠনও হওয়া উচিত শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য। একইসঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে, ভালো মানের শিক্ষা ও পাঠদানই ভালো ফল বয়ে আনে। কাজেই আমাদের পাঠদান ও পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে যেসব প্রশ্ন রয়েছে, সেদিকে নজর দেওয়া উচিত।
শিক্ষার্থীদের জীবনে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষার ফলাফল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এ স্তর অতিক্রম করে তবেই তারা উচ্চশিক্ষার বৃহত্তর জগতে প্রবেশের সুযোগ পায়, যা তাদের ভবিষ্যৎ জীবন গঠন ও কাঙ্ক্ষিত কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে। মূলত শিক্ষাজীবনের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায় হলো ভিত মজবুত করার উপযুক্ত সময়। যারা এ সময়টাকে কাজে লাগায়, স্বভাবতই তারা পরীক্ষায় ভালো ফল করে। অবশ্য ভালো ফলাফলের জন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকমণ্ডলীসহ সংশ্লিষ্ট সবার যত্নবান ও দায়িত্বশীল হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, দেশে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও পাশের হার বাড়লেও সেই অনুপাতে বাড়ছে না মানসম্পন্ন ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য চাহিদা অনুযায়ী মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং প্রশিক্ষিত ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগদান জরুরি।
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় যেসব শিক্ষার্থী কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে, তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। আর যারা দুর্ভাগ্যবশত কৃতিত্ব লাভ করতে পারেনি, পরেরবার তারা কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হবে, এটাই প্রত্যাশা।