পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল সাসটেইনেবিলিটি অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন’ (বেস্ট) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও ভ্রমণ বাবদ ৪০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া এ প্রকল্পে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জন্য ১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা এবং সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের জন্য ৭ কোটি টাকাসহ এ খাতে মোট ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৪৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ‘বেস্ট’ প্রকল্পে এমন ‘ব্যাড’ প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। উল্লেখ্য, এ প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮৩৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ১ হাজার ২০৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ২ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা ব্যয় করার কথা। পরিকল্পনা কমিশন অবশ্য এরই মধ্যে বৈদেশিক ঋণের টাকায় প্রশিক্ষণের নামে বিদেশ সফর এবং সরকারি অফিস নির্মাণের ব্যাপারে কঠোর আপত্তি জানিয়েছে। অপ্রিয় হলেও সত্য, উন্নয়ন প্রকল্পের নামে বিদেশ সফরের জন্য মরিয়া একশ্রেণির কর্মকর্তা। এ লক্ষ্যে প্রকল্প প্রস্তাব প্রস্তুত করার সময়ই প্রথমে নজর দেওয়া হয় বিদেশ সফর ও গাড়ি কেনার ওপর। এ অপচয় প্রবণতা থেকে কর্মকর্তাদের অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে।
ইতঃপূর্বে ‘পুকুর ও খাল উন্নয়ন’ বিষয়ক প্রশিক্ষণ ছাড়াও ঘাসচাষ ও ঘাসকাটা শিখতে কর্মকর্তাদের বিদেশ যাওয়ার ছক সাজানোর কথা গণমাধ্যমে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে সেসময় জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও লক্ষ করা গেছে। কাজেই প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কাম্য নয়। কোভিড-১৯-এর প্রভাবে রাজস্ব আদায়ের গতি শ্লথ হওয়ায় সরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অর্থ সংকটের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসী ব্যয় সংকোচনের পথে হাঁটছে সরকার। অথচ দেখা যাচ্ছে, একশ্রেণির সুবিধাভোগী কর্মকতা সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের নামে বাহুল্য ব্যয়ের পথে হাঁটছেন, যা কঠোরভাবে রোধ করা প্রয়োজন। বৈশ্বিক মহামারির মধ্যে কোনো প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় খাতে অর্থ বরাদ্দ মোটেই কাম্য নয়।
দেশে প্রকল্প গ্রহণ থেকে বাস্তবায়নের নানা পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। কোনো উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবেই অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো যেমন উচিত নয়, তেমনি কোনো প্রকল্পে অপচয়ও কাম্য নয়। দুর্ভাগ্যজনক হলো, প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের অধিকাংশই প্রয়োজনীয় বিষয়ে দক্ষ হন না। এমনকি সঠিকভাবে ব্যয় নির্ধারণও করতে পারেন না। অবশ্য এর নেপথ্যে নানা ফন্দি-ফিকির থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতিটি প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হলে ব্যয় যেমন হ্রাস পায়, তেমনি হ্রাস পায় জনদুর্ভোগও। ভ্রমণ কতটা ফলপ্রসূ হবে এবং এতে সরকারি তহবিলের অপচয় হবে কিনা-প্রকল্প গ্রহণের আগেই এসবের মূল্যায়ন হওয়া উচিত। কেবল আলোচ্য প্রকল্পে নয়, অন্যান্য প্রকল্পেও অপচয় বন্ধসহ যথাসময়ে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত।