মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহির উদ্দীন মোহাম্মদ বাবরের প্রৌপিতামহ, তৈমুরী বংশীয় সুলতান এবং একজন প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ ও গণিতবিদ, যাঁর নাম উলুগ বেগ মির্জা মোহাম্মদ তারেঘ বিন শাহরুখ (উলুগ বেগ)। উলুগ বেগ, যার অর্থ করা যেতে পারে ‘মহান শাসক’। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৩৯৪ সালে ইরানের সুলতানিয়া শহরে। উলুগ বেগের মায়ের নাম গওহরশাদ, তিনি ছিলেন পারসিক সম্ভ্রান্ত বংশের। উলুগ বেগ ছিলেন মধ্য এশিয়ার দিগ্বিজয়ী তৈমুর লঙের পৌত্র এবং তাঁর চতুর্থ পুত্র শাহরুখের জ্যেষ্ঠ পুত্র। তাঁরা ছিলেন ট্রান্সঅক্সিয়ানা অঞ্চলে (তৎকালীন পারস্যদেশ বা ইরান, বর্তমানে উজবেকিস্তান) বসবাসকারী মোঙ্গল বারলাস উপজাতিভুক্ত চাঘতাই তুুর্কি। ছেলেবেলা থেকেই পিতামহের সাম্রাজ্য সম্প্র্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে উলুগ বেগ মধ্য এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ঘুরে বেড়াতেন। তৈমুরের মৃত্যুর পরে, যখন মির্জা শাহরুখ সাম্রাজ্যের বড় অংশের উত্তরাধিকারী হন, উলুগ বেগ সমরখন্দে বসবাস শুরু করেন।
১৪০৯ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে সমরখন্দের মুখ্য প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৪১১ সালে তিনি সমগ্র ট্রান্সঅক্সিয়ানা অঞ্চলের অধীশ্বর হন। উলুগ বেগের নির্মিত স্থাপত্যসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু স্থাপত্য হচ্ছে, সপ্তদশ শতাব্দীতে নির্মিত শির দর মাদরাসা, সমরখন্দের শহরাঞ্চল ছাড়িয়ে চুপান-আতা সমভূমিতে নির্মিত ‘মানমন্দির’। জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কিত গণিতের নানা বিভাগে যেমন—ত্রিকোণমিতি (trigonometry) বা গোলকীয় জ্যামিতিতে (spherical geometry) তাঁর অবদানের জন্য তিনি বিখ্যাত।
১৪৪৯ সালের ২৩ অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পরে তাঁর নির্মিত ‘মানমন্দির’ ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের দ্বারা ধ্বংস করা হয়েছিল, যা ১৯০৮ সালে ভি এল ভিটকিন নামে সমরখন্দের একজন উজবেক-রাশিয়ান প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি ফখরি সিক্সেন্ট্যান্টের ভূগর্ভস্থ অংশটি পুনরুদ্ধার করেছিলেন। তাঁর অসামান্য অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৮৭ সালে ইউএসএসআর তাঁর ছবিসহ এটি স্ট্যাম্প তৈরি করে। যেখানে রাশিয়ান ভাষায় লেখা ছিল, ‘অনুবাদ : উজবেক জ্যোতির্বিদ এবং গণিতবিদ উলুগব্যাক’।
বর্তমান যুগেও উলুগ বেগকে একজন জাতীয় বীর, উজবেকিস্তানের অন্যতম শ্রদ্ধেয় ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। (পার্থ অবজারভেটরি ডটকম)
লেখক : নোয়াখালী আইডিয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।