Friday, September 22, 2023
spot_img
Homeধর্মউমাইয়া শাসনামলে মুসলিম সাম্রাজ্যের বিস্তার

উমাইয়া শাসনামলে মুসলিম সাম্রাজ্যের বিস্তার

খোলাফায়ে রাশেদিনের পর আরব মুসলিমদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত প্রথম শাসনধারা ছিল উমাইয়া খেলাফত। উমাইয়া খেলাফতের মূলকেন্দ্র ছিল শাম। দামেস্ক ছিল তাদের রাজধানী। যদিও উমাইয়া বংশের আদি বসতি পবিত্র মক্কা নগরীতেই ছিল। উমাইয়া শাসকরা আরব ও ইসলামী সংস্কৃতির প্রসার, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করা এবং মুসলিম সাম্রাজ্যের সীমানা বিস্তারে অসামান্য অবদান রাখেন।

উমাইয়া খেলাফতের পরিধি : অল্পদিনের ব্যবধানে উমাইয়া খলিফারা মুসলিম সাম্রাজ্যের সীমানা এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত করেন। তাদের আমলে ককেশাস, মধ্য এশিয়া, সিন্ধু, মরক্কো ও স্পেন মুসলিম সাম্রাজ্যের অধীনে আসে। উমাইয়া খেলাফতের সীমানা ছিল ৫.৭৯ মিলিয়ন বর্গমাইল। প্রায় ৬২ মিলিয়ন মানুষ তাদের শাসনাধীন ছিল, যা ছিল তৎকালীন পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ২৯ শতাংশ। আয়তন ও জনসংখ্যায় উমাইয়া খেলাফত ছিল ইতিহাসের পঞ্চম বৃহৎ সাম্রাজ্য।

রাজ্যবিস্তারে উমাইয়া খলিফাদের কৃতিত্ব,

৬৬১ থেকে ৭৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মোট ৮৯ বছরে ১৪ জন উমাইয়া খলিফা দায়িত্ব পালন করেন। তাঁদের সবাই সবচেয়ে বেশি রাজ্য বিস্তারে অবদান রাখেন। নিম্নে রাজ্য বিস্তারে কয়েকজন উমাইয়া খলিফার অবদান তুলে ধরা হলো।

১. মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান (রা.) : বিশিষ্ট সাহাবি মুয়াবিয়া (রা.)-এর হাতে উমাইয়া শাসনের গোড়াপত্তন হয়। খলিফা হওয়ার আগে তিনি চার খলিফার অধীনে বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন। খেলাফতের দায়িত্ব লাভ করার পর তিনি মুসলিম সাম্রাজ্যের সীমানা বিস্তারে মনোযোগী হন। মুয়াবিয়া (রা.)-এর যুগে খোলাফায়ে রাশেদার সময়ে শুরু হওয়া এশিয়া মাইনর (আধুনিক তুরস্ক) অঞ্চলে বিজয় অভিযান সম্পন্ন হয়। তিনি আফ্রিকায় মুসলমানের বিজয় অভিযান এগিয়ে নেন। তাঁর সময়ে আফ্রিকার কার্তেজ, কারউন, তেলেমসেন, বাইজার্ট জয় করে মুসলিম বাহিনী। এ ছাড়া মিসরের অংশবিশেষ মুসলিমরা জয় করেন।

২. আবদুল মালিক বিন মারওয়ান : তিনি খলিফা হওয়ার পর উমাইয়া খেলাফত বিজয়ের ধারায় ফেরে। তিনি রোম সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে নতুন অভিযান শুরু করেন। তাঁর সময়ে গুরুত্বপূর্ণ মাসিসা শহর বিজয় হয়। তাঁর হাতে আফ্রিকার তিউনিস, দালিলি, তানজাহ, কারতাজনাহ ইত্যাদি শহর বিজয় হয় এবং এর মাধ্যমে আফ্রিকায় বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। এ ছাড়া খলিফা আবদুল মালিকের সময় মুসলিম বাহিনী মধ্য এশিয়ার খোরাসান অতিক্রম করে কাবুল পর্যন্ত পৌঁছে যায়।

৩. ওয়ালিদ ইবনে আবদুল মালিক : খলিফা ওয়ালিদ ইবনে আবদুল মালিকের সময় মুসলিম সাম্রাজ্যের সীমানা ইউরোপ স্পর্শ করে। তিনি স্পেনের বিস্তৃত অঞ্চল জয় করেন। এই সময় মুসলিম বাহিনী মধ্য এশিয়ার বুখারা, সমরকন্দ, তাসখন্দ, ফারগানা ও সিন্ধু অঞ্চল পর্যন্ত জয় করেন।

৪. সোলাইমান ইবনে আবদুল মালিক : তাঁর আমলে মুসলিম বাহিনী ঐতিহাসিক কনস্টান্টিনোপল শহর অবরোধ করে এবং কাস্পিয়ান সাগরের তীরবর্তী বিভিন্ন শহর জয় করে।

৫. হিশাম বিন আবদুল মালিক : খলিফা হিশাম বিন আবদুল মালিক স্পেন ও পর্তুগাল বিজয়ের পর মুসলিম বাহিনীকে ফ্রান্সের দিকে অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দেন। তার নির্দেশে মুসলিম ফ্রান্সের একাংশ বিজয় করলেও তারা বিজয় ধরে রাখতে পারেনি।

উমাইয়া শাসনের প্রভাব ,

উমাইয়া খেলাফতকে বলা হয় ‘বিজয়ী সাম্রাজ্য’। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সময় থেকে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা যেভাবে ভারসাম্য রক্ষা করে সমানতালে অগ্রসর হচ্ছিল, উমাইয়া শাসন আমলে তা ব্যাহত হয়। যদিও মুয়াবিয়া (রা.) ও ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) ছিলেন সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। উমাইয়া খেলাফতের সময় রাজনীতির পাল্লা ভারী হয়ে যায়। ইসলাম প্রচারের চেয়ে তাদের কাছে রাজ্যবিস্তারের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। উমাইয়া শাসকদের ভেতর আরব জাতীয়তাবাদী চিন্তা সক্রিয় ছিল বলে মনে করা হয়। ফলে তারা আরবিকে রাষ্ট্রীয় ভাষা ঘোষণা করে। তাদের এই সিদ্ধান্ত আরবি ভাষা-সাহিত্য ও শিল্পকলার উন্নয়নে অবদান রাখে। উমাইয়া শাসকদের সাধারণ ও সেনা প্রশাসনে আরবদের প্রাধান্য ছিল।

তাই বলে ইসলামী সভ্যতা-সংস্কৃতি বিস্তারে তাদের অবদান একেবারেই কম ছিল না। যেমন উমাইয়া শাসকরা অভিন্ন মুদ্রাব্যবস্থা ও পরিমাপব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। বিজয়ী অঞ্চলে ইসলামের প্রচার-প্রসারে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। বিশেষত স্পেনের উমাইয়া শাসকরা জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্প-সংস্কৃতিতে বিপ্লব সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাদের হাত ধরে, সমগ্র মুসলিম বিশ্বে জ্ঞানের প্রদীপ জ্বলেছিল। ইউরোপেও অন্ধকার যুগের অবসান ঘটেছিল এবং নতুন দিনের সূচনা হয়েছিল।

উমাইয়া খলিফারা তুলনামূলক বেশি রাজনৈতিক অস্থিরতার সম্মুখীন হয়েছেন। বিশেষত ‘খেলাফতের প্রশ্নে নবী পরিবারের অগ্রাধিকার আছে’ মর্মে যারা বিশ্বাস করে তারা বারবার উমাইয়াদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, প্রচণ্ড প্রতাপে যাত্রা শুরু করা উমাইয়া খেলাফত মাত্র ৮৯ বছরে পতনের স্বাদ আস্বাদন করে।

তথ্যঋণ : আদ-দাওলাতুল উমাবিয়্যা দাওলাতুল ফুতুহাত, লুমেন লার্নিং ডটকম ও মারেফা ডটকম,

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments