Saturday, July 27, 2024
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামউন্নয়নের ফাঁদে পড়ে গণতন্ত্রের বেহাল দশা

উন্নয়নের ফাঁদে পড়ে গণতন্ত্রের বেহাল দশা

কামরুল হাসান দর্পণ

রাজনীতির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া সবসময় ঠিক থাকে না। আমাদের দেশে যখন যে দল বা জোট ক্ষমতাসীন হয়, তাদের মধ্যে এ প্রবণতা বেশি থকে, যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় থাকা। তখন জনগণ তাদের পুনরায় চায় কিনা তা বিবেচনা না করে, ক্ষমতায় থাকার নানা ফন্দিফিকির করে। সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে জনগণের রায় নিতে ভয় পায়। ক্ষমতার মেয়াদ যতই শেষ হতে থাকে, ততই অস্থিরতায় ভোগে। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তরের পথে না গিয়ে কীভাবে এবং কী করলে পুনরায় জয়লাভ করা যাবে, তা নিয়ে নানা অপকৌশল অবলম্বন করে। তবে যে সরকার বিশ্বাস করে, সে জনগণের প্রকৃত সেবা দিতে পেরেছে, বুঝতে পারে জনগণ তার প্রতি সন্তুষ্ট, সে নির্দ্বিধায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে এগোয়। তার অপকৌশলের প্রয়োজন পড়ে না। সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যখন যে দল সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীন হয়, তখন তাদের মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় ক্ষমতাকে কিভাবে দীর্ঘায়িত করা যায়। জনগণ যে রায় দিয়ে তাকে ক্ষমতায় বসিয়েছে, সে রায়ের ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলে। এই আস্থা ধরে রাখার জন্য যে কাজ করতে হয়, সেদিকে খুব কমই মনোযোগ দেয়। জনকল্যাণের দিকে মনোযোগ না দিয়ে নিজের কল্যাণের কথা বেশি চিন্তা করে। এর ফলে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা কর্তৃত্ববাদের দিকে ঝুঁকে পড়ে। অথচ স্বাধীনতার অন্যতম ভিত্তি যে গণতন্ত্র, এর প্রতি মনোযোগী হলে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বা গণতন্ত্রের সংকট হওয়ার কথা নয়। স্বেচ্ছাতন্ত্র, কর্তৃত্বতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্রের মতো নেতিবাচক সংজ্ঞায় অভিহিত হতো না। বর্তমানে আমরা এমন এক শাসন ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, যা কাক্সিক্ষত নয়। বিশ্ব গণতন্ত্র সূচক অনুযায়ী, হাইব্রিড গণতন্ত্রের মধ্যে আছি। অনেকে কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা হিসেবে অভিযোগ করেন। এর কারণ, ক্ষমতাসীনদের মনোভাব ও শাসন ব্যবস্থা। তার কর্মকাÐে এটা প্রতীয়মান হচ্ছে, যেভাবেই হোক ক্ষমতায় থাকতে হবে। এজন্য গণতন্ত্রকে সংকুচিত করতে হলেও কোনো সমস্যা নেই। সে মনে করছে, জনগণ তার হাতের মুঠোয়। কাজেই উন্নয়নের অন্তরায় গণতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে। শাসক দলের এমন মনোভাবে আইনের শাসনের চরম ঘাটতি দেখা দিয়েছে। দুর্নীতি, লুটপাট এবং অন্যায্যতা শিকড় গেঁড়ে বসেছে।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে যে, সকল দল-মতের মধ্যে পারস্পরিক সহমর্মিতা, সহিষ্ণুতা ও সহবস্থান নিশ্চিত করতে হয়, এ সংস্কৃতি এখন রাজনীতিতে অনুপস্থিত। বিরোধীদল ও বিরোধীমত অবজ্ঞা করার প্রবণতা প্রবল। ক্ষমতাসীনদের আচরণে প্রতীয়মান হয়, বিরোধীদল না থাকলেই ভাল। তবে গণতন্ত্র দেখানোর জন্য সংসদে অনুগামী বিরোধীদলের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে। গণতন্ত্রের এ এক অদ্ভুত সংস্করণ, যা সাধারণত স্বৈরশাসক নিজেকে গণতান্ত্রিক দেখানোর জন্য করে থাকে। এরশাদ সরকারও এমন সংসদ দেখিয়েছিলেন। তখন বিরোধীদলগুলো তার শাসনের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্র উদ্ধারে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছিল। তখন একটা বিষয় ছিল, মানুষের মধ্যে চলমান সময়ের মতো জীবনযাপনে এত টানাপড়েন ছিল না। ফলে তারা রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলন-সংগ্রামের সঙ্গে শামিল হতে পেরেছিল। সাধারণত সাধারণ মানুষ সক্রিয় রাজনীতি থেকে বরাবরই দূরে থাকে। ভোটের সময় হলে ভোট দেয়। রাজনীতির মারপ্যাঁচে জড়াতে চায় না, উত্তাপও নিতে চায় না। কোন রকমে খেয়েপরে বেঁচে থাকাই তাদের প্রধান লক্ষ্য হয়ে থাকে। যখন তাদের জীবনযাপন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে, তখন রাজনীতির দিকে দৃষ্টিপাত করে। সরকারের শাসনের দিকে নজর দেয়। তাদের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়, আক্ষেপ বাড়ে। প্রতিকার না পেয়ে মুখবুঁজে সহ্য করে। কার কাছে প্রতিকার চাইবে? প্রতিকারের দায়িত্ব যার, ক্ষমতা ধরে রাখতে গিয়ে সাধারণ মানুষের দিকে তার তাকানোর সময় কোথায়?

দুই.
ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-এমপিদের মুখে গণতন্ত্রের চেয়ে উন্নয়নের ফিরিস্তি বেশি। ভোটের অধিকার নিশ্চিতের কথা মুখে বললেও কাজে তার প্রতিফলন ঘটায় না। উন্নয়নের ধোঁয়া তুলেই মানুষের মন জয় করার চেষ্টা চালাচ্ছে। অথচ ক্ষমতাসীন দলের কাজই হচ্ছে, দেশের ও মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন করা। এটা তার বাধ্যতামূলক দায়িত্ব। এ দায়িত্বের কথা এত ঢাকঢোল পিটিয়ে বলার কিছু নেই। উন্নয়ন হলে জনগণই সে কথা বলবে। চরম স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের অধীনেও উন্নয়ন থেমে থাকে না। বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি হয়। তার মানে এই নয়, তার দুঃশাসন মেনে নিতে হবে। কোনো সরকার যখন গণতন্ত্রের ধার না ধেরে কেবল উন্নয়নের কথা বলে তখন বুঝতে হবে, গণতান্ত্রিক উপায়ে নয়, উন্নয়নের ছুঁতোয় সে যেনতেনভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। ক্ষমতাসীন দল ভাল করেই জানে, আমাদের দেশের মানুষ গণতন্ত্র বাদ দিয়ে শুধু উন্নয়নে খুশি হয় না। খুশি হলে আইয়ুব খানকে ক্ষমতা ছাড়তে হতো না। দেশের জনগণের কাছে জীবনের চেয়েও গণতন্ত্রের মূল্য অনেক বেশি। স্বাধীনতা যুদ্ধ করে এবং শহীদ হয়ে তা বুঝিয়ে দিয়েছে। তারা জানে, গণতন্ত্র, সুশাসন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকলে উন্নয়ন-অগ্রগতি এমনিতেই হয়। ফলে গণতন্ত্রই তাদের কাছে মুখ্য হয়ে উঠে। গণতন্ত্রহীন উন্নয়ন তাদের কাছে কখনোই কাক্সিক্ষত নয়। তারা গণতান্ত্রিক পরিবেশের মধ্য দিয়েই উন্নয়নকে অধিক শ্রেয় মনে করে। রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির প্রতি সাধারণ মানুষের অনীহা বরাবরই রয়েছে। বলা বাহুল্য, চলমান রাজনীতি সাধারণ মানুষকে ক্রমেই প্রান্তিকতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আবার এ থেকে উত্তরণের পথও তাদের সামনে খোলা নেই। ফলে অসহায় হয়ে বসে থাকা ছাড়া কিছু করার থাকছে না। তারা এক ধরনের ভলিবল খেলার মধ্যে পড়ে গেছে। ক্ষমতাসীন দল বলছে, জনগণ তাদের সাথে। আন্দোলনরত বিরোধীদলও বলছে, জনগণ তাদের সাথে। জনগণ কার দিকে বিগত একদশকে তা বোঝা যায়নি। বোঝার কোনো সুযোগও হয়নি। বোঝা যেত, যদি এই সময়ে অনুষ্ঠিত দুটি জাতীয় নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হতো। তারা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারত এবং সঠিক ফলাফল ঘোষণা হতো। জনগণের রায়ের এ পথটি রুদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। আগামীতে খুলবে কিনা, তা অনিশ্চিত। আন্দোলনরত বিরোধীদল এ পথের দাবিতে আন্দোলন করলেও, ক্ষমতাসীনরা তা খুব একটা আমলে নিচ্ছে না। ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য একধরনের জবরদস্তিমূলক পথ অবলম্বন করে চলেছে। যেমনটি করেছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনিও তার শাসনামল গণতন্ত্রের কথা বলেই চালিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তার এই কথিত গণতন্ত্র টিকেনি। তাকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে। সেই এরশাদকেই জীবদ্দশায় বলতে শোনা গেছে, বর্তমান সরকার আমার চেয়েও বড় স্বৈরাচার। অবশ্য প্রকারন্তরে এরশাদ নিজে যে স্বৈরাচার ছিলেন, তা স্বীকার করে সততার পরিচয় দিয়েছিলেন। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সরকার যদি আত্মবিশ্বাসী ও জনসাধারণের প্রতি আস্থাশীল হয়, তবে তারা নির্বাচনের মাধ্যমে জনরায় নেয়ার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে। উন্নত গণতান্ত্রিক দেশে যারা সরকার পরিচালনা করে, তারা তাদের প্রতি জনগণের আস্থা অটুট রয়েছে কিনা, তা যাচাই করার জন্য মধ্যবর্তী নির্বাচন দিয়ে থাকে। এতে তারা কখনো জয়ী হয়। কখনো পরাজিত হয়। পরাজিত হলে জনরায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কখনো কখনো নিজ থেকে ক্ষমতা ছেড়ে চলে যায়। আবার নিজের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে। আমাদের দেশে গণতন্ত্রের এই দৃষ্টান্ত আজও স্থাপিত হয়নি।

তিন.
দেশের মানুষ যে এখন নিদারুণ পেরেশানিতে রয়েছে, তা প্রতিদিনের পত্রপত্রিকায় তাদের জীবনের টানাপড়েনের চিত্র দেখে বোঝা যায়। চরম দুর্ভোগের মধ্যে তাদের দিন কাটছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সবকিছু ঠিকঠাক চলছে। দেশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। যদি স্থাপনাগত উন্নয়ন ধরা হয়, তাহলে তা হয়েছে। তবে এ দিয়ে মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন বিচার করা যায় না। মানুষের জীবনমান দিন দিন নিচের দিকে যাচ্ছে। দরিদ্র লোকের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। বিবিএস-এর হিসাব অনুযায়ী, দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা প্রায় চার কোটি। তবে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, দেশে দরিদ্র সংখ্যা আরও বেশি। বর্তমানে জরিপ করলে তা জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি হবে। যে দেশের অর্ধেক জনসংখ্যা দরিদ্র, সে দেশের উন্নয়ন কিভাবে হয়, তা এক প্রশ্ন। এটা যে এক ধরনের প্রহেলিকা ছাড়া কিছু নয়, তা সাধারণ মানুষের চরম দুর্দশা থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না। বলা হয়ে থাকে, সরকার দেশের উন্নয়ন দেখে ধনীদের উন্নতির সূচক দিয়ে। জিডিপির প্রবৃদ্ধিও দেখায় ধনীদের আয় ও সম্পদ দিয়ে। এই জিডিপির মধ্যে কোটি কোটি দরিদ্র মানুষ নেই। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের সব মানুষের মোট আয়ের প্রায় ৩৮ শতাংশ আয় করে ১০ শতাংশ ধনী মানুষ এবং বেশির ভাগ সম্পদই তাদের অধীনে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়েলথ-এক্স গবেষণা প্রতিষ্ঠানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্রæততম ধনী ব্যক্তি হওয়ার তালিকায় বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ দশটি দেশের তালিকায় রয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, এসব ধনী ব্যক্তি দেশের উন্নয়নের সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী। সরকার এটাকেই উন্নয়নের সূচক ধরছে। এই সূচকের আড়ালে সরকারি হিসেবে, দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করা প্রায় সাড়ে তিন কোটি, অন্য হিসাবে প্রায় ৬ কোটি মানুষ ঢাকা পড়ে রয়েছে। তারা পড়েছে বিপাকে। কারণ, সরকার তাদের কথা শোনার প্রয়োজন মনে করছে না। তাদের বাদ দিয়ে সরকার উন্নয়নের সূচক দেখিয়ে দিচ্ছে। এখানে গণতন্ত্র বলে কিছু নেই। উন্নয়নের ফাঁদে আটকা পড়ে আছে। সাধারণ মানুষ যে চলমান দুঃসহ পরিস্থিতি দুঃস্বপ্ন বলে উড়িয়ে দেবে সে সুযোগও নেই। তারা ঘুমেও দুঃস্বপ্ন দেখছে, বাস্তবেও তার মুখোমুখি হচ্ছে। একটি মধ্যবিত্ত পরিবারকে যখন খরচ বাঁচাতে খাদ্য খরচসহ প্রয়োজনীয় খরচ কমাতে হয়, তখন এটা তার কাছে দুঃস্বপ্ন ছাড়া আর কি হতে পারে! পর্যবেক্ষকরা স্পষ্টতই বলছেন, এখন মানুষের কাছে খরচ কমানো অটোমেটিক চয়েস হয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে সীমিত আয়ের মানুষকে বাধ্য হয়ে খরচ কমাতে হচ্ছে এবং তারাই বেশি দুঃসময়ের শিকার। তাদের অবস্থা এখন এমন পর্যায়ে যে, স্বচ্ছন্দে নয়, কোনো রকমে খেয়েপরে বেঁচে থাকাই মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক নি¤œবিত্ত দরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত নি¤œবিত্তে পরিণত হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি মধ্যবিত্ত শ্রেণী। বিশ্বব্যাংকের এক হিসাব অনুযায়ী, দেশে জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশ বা প্রায় ৪ কোটি মধ্যবিত্ত রয়েছে। এই মধ্যবিত্তের সংখ্যা যে কমেছে, তা জরিপ না করলেও বোঝা যায়। হিসাব করলে দেখা যাবে, অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার এখন নি¤œবিত্তে পরিণত হয়েছে।

চার.
তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশ দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। কত সংখ্যক দেশ ছাড়ছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান জানা না গেলেও তা যে বছরে কয়েক হাজার হবে, তাতে সন্দেহ নেই। এসব তরুণ অনেকটা স্থায়ীভাবেই দেশ ছাড়ছে। এর মূল কারণ হিসেবে রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি, অপশাসন, সুশাসন এবং অর্থনৈতিক ও কর্মসংস্থানের অভাবের কথা বলা হচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, মেধাবীদের দেশ ছাড়ার প্রবণতা হচ্ছে, দেশকে মেধাশূন্যতার দিকে ঠেলে দেয়া। এ প্রক্রিয়া বহু বছর ধরে চললেও ক্রমাগত রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ও অস্থিতিশীলতা তা ত্বরান্বিত করেছে। যে মেধাবী তরুণের দেশের ভবিষ্যত এবং রাজনীতিকে সঠিক ধারায় প্রবাহিত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কথা, তারা যদি দেশ ত্যাগ করে, তবে রাজনৈতিক চলমান অপসংস্কৃতি যে আরও খারাপের দিকে যাবে, তা নিশ্চিত করে বলা যায়। যারা যেতে পারছে না, তারা রাজনীতির এক গভীরতম সংকটে পড়ে হতাশ ও হতোদ্যম হয়ে পড়ছে। সাধারণ মানুষ অপরাজনীতি ও অপশাসনের শিকার হয়ে চরম দুঃসময়ে পড়েছে। তারা না পারছে কিছু বলতে, না পারছে সইতে। মুখ বুজেই সব সয়ে যেতে হচ্ছে। আর শুনতে হচ্ছে, উন্নয়নের জোয়ারের কথা। এ অবস্থার মধ্যেই ক্ষমতাসীন দল সাধারণ মানুষের কাছে ভোটের ওয়াদা চাইছে। ক্ষমতাসীন দলের এমন আচরণ দেখে সাধারণ মানুষের এ গল্পটি মনে পড়ার কথা। গল্পটি এরকম- এক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি কর্দমাক্ত পথ পাড়ি দেয়ার জন্য এক গরিব মানুষের ঘাড়ে চড়ে বসে। গরিব ব্যক্তিটির গলা সে এমনভাবে প্যাঁচিয়ে ধরে যে তার দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। তারপরও সে সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিকে বহন করে নিয়ে যাচ্ছে। সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি দরিদ্র ব্যক্তিটির ঘাড়ে আরাম করে বসে আফসোস করে বলছে, আহা, তোমার কী কষ্ট হচ্ছে, আমি খুবই দুঃখিত। তুমি চিন্তা করো না, আমি নিশ্চয়ই তোমার দুঃখ-কষ্ট দূর করে দেব, শুধু এবারের মতো আমাকে এই পঙ্কিল পথটুকু বহন করে নিয়ে যাও। আমাকে তোমার ঘাড় থেকে নামিয়ে দিও না।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments