Thursday, June 8, 2023
spot_img
Homeধর্মউন্নত চরিত্র ঈমানের অলংকার

উন্নত চরিত্র ঈমানের অলংকার

উত্তম চরিত্র ঈমানে পূর্ণতা আনে। বলা যায় উন্নত চরিত্র ঈমানের অলংকার। কারণ চারিত্রিক সৌন্দর্য অর্জন না করে ঈমানের সৌন্দর্য অর্জন করা সম্ভব নয়। উন্নত চরিত্র ছাড়া নিজে যেমন হিদায়াতপ্রাপ্ত হওয়া সম্ভব নয়, তেমনি অন্যকেও হিদায়াতের দাওয়াত দেওয়া সম্ভব নয়।

এ কারণে মহান আল্লাহ তাঁর রাসুলকে সর্বোত্কৃষ্ট চরিত্রের অধিকারী করে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর নিশ্চয় আপনি মহৎ চরিত্রের ওপর রয়েছেন। ’ (সুরা : কলাম, আয়াত : ৪)

আয়াতে উল্লিখিত, ‘মহৎ চরিত্র’-এর অর্থ নির্ধারণে কয়েকটি মত বর্ণিত আছে। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, মহৎ চরিত্রের অর্থ মহৎ দ্বিন। কেননা, আল্লাহ তাআলার কাছে ইসলাম অপেক্ষা অধিক প্রিয় কোনো দ্বিন নেই। আয়েশা (রা.) বলেন, স্বয়ং কোরআন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ‘মহৎ চরিত্র’। অর্থাৎ পবিত্র কোরআন যেসব উত্তম কর্ম ও চরিত্র শিক্ষা দেয়, তিনি সেসবের বাস্তব নমুনা। আলী (রা.) বলেন, ‘মহৎ চরিত্র’ বলে কোরআনের শিষ্টাচার বোঝানো হয়েছে; অর্থাৎ যেসব শিষ্টাচার কোরআন শিক্ষা দিয়েছে। (কুরতুবি)

তা ছাড়া উত্তম চরিত্র মানুষকে আল্লাহর প্রিয় করে তোলে। যার চরিত্র যত সুন্দর, সে আল্লাহর কাছে তত বেশি প্রিয়। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় মানুষ তারা, যারা উত্তম চরিত্রের অধিকারী। (জামিউস সগির, হাদিস : ২১৮)

চারিত্রিক উৎকর্ষতা অর্জনের মাধ্যমে মানুষ মহান আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী হতে পারে। তাদের মহান আল্লাহ এতই ভালোবাসেন যে তাদের দিনের বেলায় রোজা ও রাত জেগে তাহাজ্জুদ আদায়কারীদের সমপরিমাণ মর্যাদা দান করেন। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই মুমিন ব্যক্তি তার ভালো চরিত্রের মাধ্যমে (দিনের) সাওম পালনকারী ও (রাতের) তাহাজ্জুদগুজারির সমান মর্যাদা লাভ করতে পারে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৯৮)

সুবহানাল্লাহ! একজন মুমিনের জন্য এটি কতই না বড় পাওয়া। অন্য অনেক হাদিসেও উত্তম চরিত্র অর্জনকারীদের আরো অনেক বিশেষ বিশেষ মর্যাদার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। রাসুল নিজেও উত্তম চরিত্রের মানুষদের শ্রেষ্ঠ মানুষ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

বিশিষ্ট তাবেঈন মাসরুক (রহ.) বলেন, একবার আমরা আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.)-এর কাছে উপবিষ্ট ছিলাম। তিনি আমাদের কাছে হাদিস বর্ণনা করছিলেন। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) স্বভাবগতভাবে অশালীন ছিলেন না এবং তিনি ইচ্ছা করে অশালীন কথা বলতেন না। তিনি বলতেন, তোমাদের মধ্যে যার স্বভাব-চরিত্র উত্তম, সেই তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম। (বুখারি, হাদিস : ৬০৩৫)

শুধু তা-ই নয়, প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন যে জান্নাতে যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম হলো উত্তম চরিত্র অর্জন করা। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো, কোন কাজটি সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে? তিনি বলেন, আল্লাহভীতি, সদাচরণ ও উত্তম চরিত্র। আবার তাঁকে প্রশ্ন করা হলো, কোন কাজটি সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে? তিনি বলেন, মুখ ও লজ্জাস্থান। (তিরমিজি, হাদিস : ২০০৪)

অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন,  মিজানের পাল্লায় সচ্চরিত্রের চেয়ে অধিক ভারী আর কিছুই নেই। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৯৯)

তাই আমাদের উচিত, উত্তম চরিত্র গঠনের সর্বাত্মক চেষ্টা করা। রাসুল (সা.) যেভাবে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, সেভাবে চলা। সত্যবাদী হওয়া, আমানতের ব্যাপারে সচেতন হওয়া, নম্র হওয়া, মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা,  আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা, কারো সঙ্গে অঙ্গীকার করলে তা পূরণ করা, প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা, বিপদে ধৈর্য ধারণ করা, লজ্জাবতী হওয়া, ন্যায়পরায়ণ হওয়া, দয়ালু হওয়া, অন্যের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকা, অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কারো ক্ষতি করে না বসা।

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে উত্তম চরিত্র গঠনের তাওফিক দান করুন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments