Sunday, June 4, 2023
spot_img
Homeধর্মউদ্ভিদে রয়েছে সৃষ্টির অপূর্ব নিদর্শন

উদ্ভিদে রয়েছে সৃষ্টির অপূর্ব নিদর্শন

মহান আল্লাহর প্রতিটি সৃষ্টিই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। প্রতিটিতেই রয়েছে মুমিনের জন্য বিভিন্ন রকম নিদর্শন। যেমন আমাদের আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা হরেক রকম উদ্ভিদেও মহান আল্লাহর বহু নিদর্শন লুকিয়ে আছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি জমিনের প্রতি লক্ষ করেনি? আমি তাতে প্রত্যেক প্রকারের বহু উত্কৃষ্ট উদ্ভিদ উদগত করেছি।

নিশ্চয় এতে আছে নিদর্শন; কিন্তু (মহান আল্লাহর এত এত কুদরতের নিদর্শন দেখার পরও) তাদের অধিকাংশই ঈমান আনে না। ’

(সুরা : শুআরা, আয়াত : ৭-৮)

সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ কতই না মহান, কতই না শক্তিশালী। মহান আল্লাহ প্রতিটি উদ্ভিদকেও ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। বিভিন্ন উদ্ভিদে যেমন—মানুষের রিজিক ও রোগ নিরাময়ের প্রতিষেধক রেখেছেন, তেমনি বিভিন্ন উদ্ভিদকে পোকামাকড় থেকে আত্মরক্ষার কৌশলও শিক্ষা দিয়েছেন।

কিছু উদ্ভিদ বিরক্তিকর পোকামাকড় তাড়াতে নানা কৌশলী ফাঁদ প্রয়োগ করে। সেই সঙ্গে উদ্ভিদ নিজেদের কাছ আসা বন্ধুত্বপূর্ণ পোকা ও ক্ষতিকর পোকার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করতেও সক্ষম। যার ফলে উদ্ভিদের পত্র-পল্লবে বসবাস করে সেই উদ্ভিদ পত্রকেই ভক্ষণকারী শূককীট তথা শুঁয়াপোকাকে এরা খুব অপছন্দ করে। আমাদের সবার পরিচিতি সরষেগাছ নিয়ে বিজ্ঞানীদের দেওয়া তথ্য হচ্ছে—‘নিজেদের পাতায় বাসা বেঁধে কোনো ধরনের ক্ষতি সাধন করার আগেই সরিষাগাছ অত্যন্ত চমৎকার একটি উপায়ে শুঁয়াপোকা বিতাড়িত করে দেয়। কখনো ধ্বংস করে দেয়। উপায়টি হচ্ছে—শুঁয়াপোকা যখন সরষে পাতায় তাদের ডিম ফোটায়, তখন এরা এমন এক আকর্ষণীয় গন্ধ বিকিরণ করে, যা এমন সব পোকামাকড়কে আকৃষ্ট করে, যেগুলো শুঁয়াপোকার ডিম খুব পছন্দ করে খায়। আর তখন সেসব পোকা সরষে পাতায় ভিড় করে ডিমগুলো খেয়ে নেয় এবং সরষেগাছও ক্ষতিকর শুঁয়াপোকা থেকে মুক্তি পায়।   [Scientific Journal Proceedings of the Royal Society  AvMÕ¡ 2014] আগস্ট ২০১৪]

শত্রুর হাত থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য এমন কিছু ম্যাকানিজমও উদ্ভিদকে গ্রহণ করতে দেখা যায়; যা প্রাণীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। যেমন—ভেরেন্ডাজাতীয় উদ্ভিদের পাতা, কাণ্ড ও ফলের ওপর এমন গ্রন্থিরোম তৈরি করে, যা থেকে এক ধরনের আঠালো পদার্থ নির্গত হয়। যখন কোনো তৃণভোজী প্রাণী এদের খেতে যায়, তখন প্রাণীর মুখে আঠালো পদার্থটি লেগে যায়; ফলে কিছুতেই আর এদের দ্র্রবীভূত করতে পারে না।

আমাদের বহুল ব্যবহৃত উদ্ভিদ বাঁধাকপি। একদল গবেষক নিজেদের মতো ব্যক্ত করে বলেন, এটি যখন বড় হতে থাকে তখন এর পাতায় নানা ধরনের উড়ন্ত পোকা বাসা বেঁধে এতে ডিম পাড়ে। ফলে পাতায় ছত্রাকের সৃষ্টি হয় এবং বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। এমন অবস্থায় বাঁধাকপি এক ধরনের রাসায়নিক নির্গত করে, যা অন্য আরেক ধরনের পোকাকে খুব আকৃষ্ট করে। আর সেসব পোকা এই পাতাগুলোতে এসে সেই ডিমগুলো খেয়ে নেয়। আর আত্মরক্ষার  এই দুর্দান্ত উপায়ে বাঁধাকপি শত্রু থেকে মুক্তি পায়।

কিছু উদ্ভিদের গন্ধ এমন হয় যে জীবজন্তু এদের আশপাশেই যায় না। যেমন—তুলসী, ল্যান্টানা ইত্যাদি। তামাক, ধুতরা এসব উদ্ভিদ কখনই আক্রমণের শিকার হয় না; কারণ এদের দেহে সঞ্চিত থাকে বিষাক্ত উপক্ষার। এ ছাড়া কিছু উদ্ভিদ তৃণভোজী প্রাণীদের উপস্থিতি টের পেলেই এলিলো কেমিক্যাল নিঃসরণ করে, যা কোনো ক্রমেই প্রাণীরা সহ্য করতে পারে না। প্রকৃৃতিতে এমনও কিছু উদ্ভিদ আছে, যাদের আকার-আকৃতি সাপ বা অন্য কোনো ভয়ংকর প্রাণীর মতো, যা দেখলে আপনিও ভয় পেয়ে যাবেন; তৃণভোজী প্রাণীরা এসব উদ্ভিদের আশপাশেও যায় না।

উদ্ভিদের আত্মরক্ষার এই পদ্ধতিগুলো জানান দেয় যে মহাবিশ্ব সুনিয়ন্ত্রিত এবং দৈবক্রমে চলে না, যেমনটি বিবর্তনতত্ত্ব দাবি করে। বিজ্ঞান যত উৎকর্ষ লাভ করে, ততই আমাদের সামনে স্পষ্ট হয় যে মহাবিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করে এমন একটি শক্তির অস্তিত্ব অবশ্যই আছে। এই মহাবিশ্বের প্রতিটি অণু-পরমাণু সর্বশক্তিমান আল্লাহর অস্তিত্বের সাক্ষ্য বহন করে। মহান আল্লাহ সবাইকে সত্য অনুধাবনের তাওফিক দান করুন।

লেখক : প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও মুহাদ্দিস

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments