Sunday, March 26, 2023
spot_img
Homeবিচিত্রঈদের চাঁদের রহস্যময় লুকোচুরি

ঈদের চাঁদের রহস্যময় লুকোচুরি

চাঁদ এবং পৃথিবীর পারস্পরিক আকর্ষণ উভয়ের উপর প্রভাব ফেলে।  চাঁদের আকর্ষণে পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটা হয়। আবার চাঁদের আকর্ষণের কারণে  পৃথিবী  ২৩.৫ ডিগ্রী হেলানো অবস্থান টিকে রয়েছে।  এই হেলে থাকার কারণে  পৃথিবীতে ঋতু  পরিবর্তন হয়। মুসলিম বিশ্বের মানুষের কাছে চাঁদের গুরুত্ব অনেক বেশি। বছরের  দুই ঈদ-সহ অন্যান্য সব ধর্মীয় অনুষ্ঠান  চাঁদের ওঠানামার উপরে নির্ভরশীল । তাই চাঁদ নিয়ে  কৌতূহলের শেষ নেই। চাঁদ দেখে রোজা রাখা শুরু , আর চাঁদ দেখে রোজা রাখা সমাপ্ত করা  হয়।  কোনো দেশের নিজস্ব গণ্ডির মধ্যে  যে কোনো একটা জায়গা থেকে চাঁদ দেখা গেলে , সে চাঁদ সমগ্র দেশের মানুষের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণের  ভিত্তি হিসেবে কাজ করে । আবার বিশ্বের অনেক স্থানে সৌদি আরবে দেখতে পাওয়া চাঁদের হিসেব অনুযায়ী সমান্তরালভাবে ধর্মীয় উৎসব পালিত হয়

বাংলাদেশে দেশের ভেতরে  চাঁদ দেখেই সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় কবে ঈদ উদযাপিত হবে। 
চাঁদ পৃথিবীর চারিদিকে এবং পৃথিবী চাঁদ-সহ সূর্যের চারিদিকে ঘোরে। চাঁদ নিজের অক্ষের উপরে লাটিমের মত ঘুরতে থাকে  এবং পৃথিবীও তদ্রূপ ঘুরে । পৃথিবীর  ঘূর্ণন ঘড়ির কাঁটার উল্টোদিকে চলে , অর্থাৎ ডান থেকে বামে  বা পশ্চিম থেকে পূর্বমুখী হয় । ফলে সমস্ত গ্রহ-নক্ষত্র স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও আমরা দেখি ওরা পূর্ব থেকে পশ্চিমে যাচ্ছে । অন্যকথায়  তারা  পূর্বে উদিত হয় ও পশ্চিমে অস্ত যায় । সূর্যের আলো  চাঁদের উপর পড়ে এবং তা প্রতিফলিত হয়ে পৃথিবীতে আসে । চাঁদের উদয়  প্রতিদিন পঞ্চাশ মিনিট পরে  হয় বলে  শুক্ল পক্ষে চাঁদ ক্রমশ  ভূপৃষ্ঠের ১২ ডিগ্রী  স্থা্নকে  আলোকমালার ভেতরে অন্তর্ভূক্ত করতে থাকে । কৃষ্ণ পক্ষে এর উল্টো ঘটনা ঘটে । ফলে চাঁদের  বৃদ্ধি (waging)  এবং হ্রাস (waning )  হয় । উত্তর গোলার্ধে  চাঁদের কাঠামোর ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে  চাঁদের কাঠামোর বামদিকে  হ্রাস-বৃদ্ধি  হচ্ছে বলে দেখতে পাওয়া যায়।
চাঁদ ২৭ দিনে একবার নিজের অক্ষের উপরে ঘূর্ণন সমাপ্ত করে, পৃথিবী সে কাজটা করে  ২৪ ঘন্টায়।  আবার ২৭.৫৩ দিনে  চাঁদ  একবার পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরে আসে।  সেখানে পৃথিবী  ৩৬৫ দিনে সূর্যের চারিদিকে  একবার ঘুরে আসে  । পৃথিবীর বছর এবং দিনের মধ্যে বিরাট ব্যবধান থাকলেও  চাঁদের দিন এবং বছর  প্রায় সমান। পৃথিবীর আকর্ষণ-শক্তি চাঁদকে এমনভাবে টেনে রাখে যাতে তার অক্ষের উপর ঘুর্ণনের গতি কম  থাকে । সে গতি  এমন হয় যাতে  পৃথিবী থেকে চাঁদের একটা পিঠকেই সবসময়  দেখা যায়। এ এক অলৌকিক রহস্য ।  চাঁদের যে পিঠ আমরা দেখতে পাই না , তাতে কাল দাগ কম । সে দিকটা দেখা গেলে চাঁদের আলো আরও উজ্জ্বল হতো।
একদিনের ব্যবধানে চাঁদের ওঠা বা অস্ত যাওয়ার সময়  ৫০ মিনিটের  তারতম্য ঘটে । সময়ের এই ব্যবধানের কারণে প্রতিদিন  চাঁদ-সূর্য-পৃথিবী দ্বারা গঠিত কোণের  হ্রাসবৃদ্ধি হয় । চাঁদ, সূর্য এবং পৃথিবী এক লাইনে পড়লে তখন নতুন চাঁদের জন্ম হয়। এটা জিরো ডিগ্রীতে সমান্তরালে অবস্থান করে বলে তাকে দেখা যায় না । এই চাঁদের বয়স ১৭-২৩ ঘন্টা পর্যন্ত হলে চাঁদ-পৃথিবী-সূর্যের মধ্যে সৃষ্ট কোণ হয় ৯ ডিগ্রীর চেয়ে বড়। চাঁদের কক্ষপথ ডিমের আকৃতির হওয়ায়   পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব  সময়ে সময়ে কমে বাড়ে এবং ঘূর্ণন-গতি কমে-বাড়ে। তাই কখনো ১৭ ঘন্টায় , কখনো সর্বোচ্চ ২৩ ঘন্টায়  ৯ ডিগ্রী  কোণ সৃষ্টি হয়। নতুন চাঁদ জন্মের পর কমপক্ষে  ১৭ ঘন্টা এবং উর্ধ্বপক্ষে  ২৩ ঘন্টা সময় পার হলে আমরা তাকে দেখতে পাই ।  আবার দেখতে পাওয়ার শর্তের মধ্যে অতিরিক্ত হিসেবে  সূর্য ডোবার পর অন্তত ২০ মিনিট  পর্যন্ত  চাঁদটাকে আকাশে ভাসতে হবে  । নাহলে  ডুবন্ত সূর্যের আলোর আভায়  চাঁদ অদৃশ্য হয়ে থাকবে । সাধারণতঃ  একই অক্ষাংশের উপরে থাকা পশ্চিমে অবস্থিত  স্থানে  চাঁদ আগে দেখা যায়।  গোলার্ধ আলাদা হলে পূর্ব-পশ্চিমের এ শর্ত নাও খাটতে পারে। কারণ,  বর্নিত কোণ উত্তর-দক্ষিণ ভেদে ছোট বড় হতে পারে এবং ৯ ডিগ্রির শর্ত পুরণের হেরফের কারণে ফলাফল ভিন্ন হতে পারে। 
আমরা চন্দ্রমাস ধরে যদি রোজা না রাখতাম , সৌরবর্ষ মানতাম , তাহলে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে দিনরাত্রির সমতা বিধান করে শীতগ্রীষ্ম বিবেচনায় মানুষ সমান সুযোগ পেত না । রোজা সবসময় একই গ্রীষ্মকালে বা একই শীতকালে পড়তো । এটাকে মহান সৃষ্টিকর্তার  একটা কুদরতি  ব্যবস্থা  বলা যায় । এই ব্যবস্থার মাধ্যমে পৃথিবীর সব এলাকার মানুষের জন্য  সর্বাধিক সমান সুযোগ দান করা সম্ভব হয়েছে । সৌর বছরের যে-কোনো একটা কাল ঘুরে ঘুরে একবার না একবার রমজান মাসে এসে  পড়ে। 

( গাজী মিজানুর রহমান  অবসরপ্রাপ্ত  সিভিল সার্ভেন্ট এবং লেখক )

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments