Sunday, March 26, 2023
spot_img
Homeধর্মঈদের কেনাকাটায় করণীয় ও বর্জনীয়

ঈদের কেনাকাটায় করণীয় ও বর্জনীয়

মুসলমানের ধর্মীয় উৎসব ঈদ। রাসুলুল্লাহ (সা.) এই দিন দুটিকে আনন্দের বলে ঘোষণা করেছেন। ইসলাম ঈদের সময় আনন্দমুখর সময় কাটাতে এবং ভালো খাবার ও পোশাক পরিধানে উৎসাহিত করেছে। তবে ইসলামের দৃষ্টিতে ঈদ নিছক কোনো আনন্দ উৎসব নয়, বরং তা ইবাদতও বটে।

তাই ঈদের আনন্দে চাই মুমিনের সংযম ও সংযত আচরণ।

ঈদের আনন্দে দ্বিনি বৈশিষ্ট্য রক্ষা করা আবশ্যক : ঈদ ধর্মীয় উৎসব। ঈদের ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য রক্ষা করার জন্যই মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সমাজের প্রচলিত উৎসব প্রত্যাখ্যান করে নতুন ধর্মীয় উৎসব প্রবর্তন করা হয়। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় এসে দেখেন মদিনাহ্বাসীরা নির্দিষ্ট দুটি দিনে খেলাধুলা ও আনন্দ করে থাকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, এই দুটি দিন কিসের? সবাই বলল, জাহেলি যুগে আমরা এ দুই দিন খেলাধুলা করতাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, মহান আল্লাহ তোমাদের এই দুই দিনের পরিবর্তে উত্তম দুটি দিন দান করেছেন। তা হলো ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতরের দিন। ’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১১৩৪)

কেনাকাটায় যে ভুলগুলো হয় : ঈদের কেনাকাটার সময় এমন কিছু কাজ হয়ে যায় যা শরিয়তের দৃষ্টিতে নিন্দনীয় এবং অবশ্যই পরিহারযোগ্য। যেমন—

১. নামাজ কাজা করা : ঈদের কেনাকাটার জন্য বহু মানুষ নামাজ কাজা করে। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহর হুঁশিয়ারি হলো—‘তাদের পরে এলো অপদার্থ পরবর্তীরা, তারা নামাজ নষ্ট করল ও লালসার বশবর্তী হলো। সুতরাং তারা অচিরেই কুকর্মের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। ’ (সুরা মারিয়াম, আয়াত : ৫৯)

২. পর্দা লঙ্ঘন : পর্দা ইসলামের ফরজ বিধান। সর্বত্র নারী-পুরুষের পর্দার বিধান মান্য করা আবশ্যক। ঈদের কেনাকাটার সময় অনেকেই পর্দার বিধান রক্ষা করেন না। পবিত্র কোরআনের নির্দেশ হলো—‘মুমিনদের বোলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে; এটাই তাদের জন্য উত্তম। তারা যা করে নিশ্চয়ই আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত। ’ (সুরা নুর, আয়াত : ৩০)

৩. অর্থের অপচয় : ঈদে সামর্থ্যবান পরিবারগুলো প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রয়োজনেই অর্থ বেশি ব্যয় করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আত্মীয়-স্বজনকে দেবে তার প্রাপ্য এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও এবং কিছুতেই অপব্যয় কোরো না। যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই এবং শয়তান তার প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ। ’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৬-২৭)

৪. লৌকিকতা ও ঋণের বোঝা : ঈদের সময় বহু মানুষ নিজের সামর্থ্যের বাইরে কেনাকাটা করে এবং এ জন্য ঋণ করে। অথচ কোরআনের ঘোষণা হলো, ‘আল্লাহ কারো ওপর এমন কোনো কষ্টদায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন না, যা তার সাধ্যাতীত। সে ভালো যা উপার্জন করে তার প্রতিফল তারই এবং সে মন্দ যা উপার্জন করে তার প্রতিফল তারই। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৮৬)

৫. ব্যবসায়ীদের প্রতারণা : ঈদ বাজারে বহু ব্যবসায়ী প্রতারণার সুযোগ নেয়। তারা অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি, নিম্নমানের পণ্য উচ্চমূল্যে বিক্রি, ত্রুটিপূর্ণ পণ্য সরবরাহের মতো অসততার আশ্রয় নেয়। পবিত্র কোরআনে ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছে, ‘হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা ন্যায়সঙ্গতভাবে পরিমাপ ও ওজন কোরো, মানুষকে তাদের প্রাপ্য বস্তু কম দিয়ো না এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়িয়ো না। ’ (সুরা হুদ, আয়াত : ৮৫)

যা করণীয় : ঈদের কেনাকাটায় ইসলামের নিম্নোক্ত নির্দেশনা অবলম্বন করা যেতে পারে—

১. কেনাকাটায় সংযম : ইসলাম অন্যসব বিষয়ের মতো কেনাকাটাতেও সংযমী হওয়ার নির্দেশ দেয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তোমার হাত তোমার গ্রীবায় আবদ্ধ করে রেখো না এবং তা সম্পূর্ণ প্রসারিতও কোরো না, তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে পড়বে। ’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৯)

২. ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় : ঈদের কেনাকাটায় অর্থ অপব্যয় না করে তা ভবিষ্যতের জন্য আমরা সঞ্চয় করতে পারি। যেন দুর্দিনে তা উপকারে আসে। কেননা কোরআন নির্বোধের মতো অর্থ ব্যয় করতে নিষেধ করেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের সম্পদ, যা আল্লাহ তোমাদের জন্য উপজীবিকা করেছেন তা নির্বোধ মালিকদের হাতে অর্পণ কোরো না। ’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৫)

৩. ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেওয়া : ঈদের সময় অপ্রয়োজনীয় খাতে অর্থ ব্যয় না করে তা দিয়ে আমরা সমাজের অসহায় ও দরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারি। কোরআনে ধনীদের মানবিক কাজে অর্থ ব্যয়ের নির্দেশ প্রদান করে বলা হয়েছে, ‘আত্মীয়-স্বজনকে দেবে তার প্রাপ্য এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও এবং কিছুতেই অপব্যয় কোরো না। ’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৬)

৪. ফিতরা আদায় করা : রমজান মাসের শেষাংশে সদকাতুল ফিতর আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আলেমরা সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের জাকাত আদায়েরও পরামর্শ দেন। যেন দাতা রমজানের বরকত লাভ করতে পারে এবং গ্রহীতা ঈদের আনন্দে শরিক হতে পারে। অথচ বহুজন দুহাত ভরে ঈদের কেনাকাটা করেন; কিন্তু যথাযথভাবে সদকাতুল ফিতর ও জাকাত আদায় করেন না। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘প্রত্যেক দাস, আজাদ, পুরুষ, নারী, প্রাপ্ত বয়স্ক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিমের ওপর আল্লাহর রাসুল (সা.) সদকাতুল ফিতর হিসেবে খেজুর হোক বা যব হোক এক সা পরিমাণ আদায় করা ফরজ করেছেন এবং লোকজনের ওপর ঈদের সালাতে বের হওয়ার আগেই তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৫০৩)

৫. আল্লাহর সীমা রক্ষা করা : কেনাকাটা, চলাফেরা সব কিছুতে আল্লাহর সীমা রক্ষা করা। বিশেষত মহিমান্বিত রমজানের বরকত থেকে যেন আমরা বঞ্চিত হয়ে না যাই সেদিকে লক্ষ রাখা। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রমজান ও শবেকদরের বরকত থেকে বঞ্চিত হয়। তিনি বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তির নাক ধুলাধূসরিত হোক যে রমজান পেল এবং তার গুনাহ মাফ করার আগেই তা বিদায় নিল। ’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪৫)

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments