সাধারণত একটি স্মার্টফোনে গড়ে ০.০৪ গ্রাম সোনা থাকে। লোহা বা অন্যান্য ধাতু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষয় হয়, মরিচা ধরে। অন্যদিকে সোনা সহজে ক্ষয় হয় না, মরিচাও ধরে না। এই সুবিধার কথা মাথায় রেখে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার তৈরির প্রতিষ্ঠানগুলো ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (আইসি) বোর্ডের ছোট্ট কানেক্টগুলোতে স্বর্ণ ব্যবহার করে।
সোনা খুব ভালো বিদ্যুৎ পরিবাহী। ফলে কানেক্টগুলোতে ডিজিটাল ডাটা দ্রুত পাঠানোর ক্ষেত্রে সোনা সবচেয়ে উপযোগী।
তো এসব ই-বর্জ্যে শুধু সোনাই থাকে ব্যাপারটা এ রকম নয়; সোনার পাশাপাশি অ্যান্টিমনি, সিলভার, প্যালাডিয়াম, প্লাটিনাম, নিকেল, টিন, লেড (দস্তা), লোহা, ফসফরাস, আর্সেনিক, রেডিয়াম, তামাও লাগে স্মার্টফোন তৈরি করতে। এত বিশাল পরিমাণ ই-বর্জ্যে থাকা অ্যান্টিমনি বাতাসের সঙ্গে মিশলে চোখ, ত্বক ও ফুসফুসের ক্ষতি করে। বিসমাথ থেকে শ্বাসকষ্ট, অনিদ্রা ও হাড়ের যন্ত্রণা বাড়ে। ফুসফুসের ক্যান্সার, লিভারের সমস্যা, আলসার, অ্যালার্জি ইত্যাদির জন্য ক্যাডমিয়াম অন্য সব ধাতুর চেয়ে বেশি দায়ী।
শারীরিক এসব সমস্যা অনেক প্রতিষ্ঠানের মাথা ব্যথার কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। তবে এই বিশাল ই-বর্জ্যকে আবার ব্যবহার উপযোগী করা বেশ কঠিন, অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভব। এই কঠিন অবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ই-বর্জ্য উৎপাদনকারী দেশ গ্রেট ব্রিটেনের কয়েন তৈরির প্রতিষ্ঠান রয়াল মিন্ট উদ্ভাবন করেছে ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট থেকে সোনা আলাদা করার নতুন এক প্রযুক্তি। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক প্রতিষ্ঠান থেকে সংগৃহীত ই-বর্জ্য তিনটি ধাপে পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করে রয়াল মিন্ট। প্রথমে ডিভাইস থেকে আইসি আলাদা করে তারা (সেগ্রেগেশন), এরপর গোপন রাসায়নিকের মাধ্যমে আইসি থেকে প্রতিটি ধাতুকে আলাদা করা হয় (সেপারেশন), সর্বশেষে বাদামি বর্ণের এক ধরনের চূর্ণ বানায় রয়াল মিন্ট (ডিজমেন্টাল)। বাদামি বর্ণের চূর্ণকে ৩০ মিনিট এক হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে তাপ দেওয়া হয় ইলেকট্রিক হিটারের মাধ্যমে। এত উচ্চ পরিমাণ তাপে অপধাতু সব উবে গেলে খাঁটি সোনা জমা হয় পাত্রে। প্রতি এক কেজি সোনা পেতে খুঁজে বের করতে হবে প্রায় ২৫ হাজার স্মার্টফোন।
রয়াল মিন্ট বর্তমানে আইসি থেকে সোনা আলাদা করার প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও সামনে সিলভার ও তামা আলাদা করার প্রযুক্তি নিয়েও কাজ করার ব্যাপারে আশাবাদী। বর্তমানে ই-বর্জ্য থেকে সোনা আলাদা করার প্রক্রিয়া অনেক ব্যয়সাধ্য ব্যাপার। তবে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো ই-বর্জ্যের ব্যাপারে দিন দিন সচেতন হচ্ছে। সচেতনতার অংশ হিসেবে ২০২০ সালে টোকিও অলিম্পিকে বিজয়ীদের ই-বর্জ্য থেকে আলাদা করা ধাতুর মেডেল দেওয়া হয়। তবে এ ধরনের উদ্যোগ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক অপ্রতুল। সামনে বেশ কিছু বড় প্রতিষ্ঠান ই-বর্জ্যের পুনর্ব্যবহারে এগিয়ে আসবে বলে ধারণা করছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।
