Friday, March 24, 2023
spot_img
Homeজাতীয়ইসি সংলাপ: ‘ক্ষমতা আছে প্রয়োগ করে দেখান’

ইসি সংলাপ: ‘ক্ষমতা আছে প্রয়োগ করে দেখান’

সুষ্ঠু নির্বাচন করতে নিজস্ব ক্ষমতা প্রয়োগ করে দেখাতে নির্বাচন কমিশনকে পরামর্শ দিয়েছেন সিনিয়র সাংবাদিকরা। কমিশনের উদ্দেশ্যে তারা বলেছেন আপনাদের হাতে ক্ষমতা আছে, প্রয়োগ করে দেখান। অতীতের কমিশন মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। নতুন কমিশনকে সেই আস্থা অর্জন করতে হবে। সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, সাংবিধানিকভাবে আইন ও বিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের শপথ নিয়েছি। সুষ্ঠু নির্বাচন করার প্রয়াসের কোনো ত্রুটি থাকবে না। সর্বপ্রয়াস, সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করবো অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচন করার। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ইসির কিছু করার না থাকলেও সরকারকে প্রস্তাব দেয়ার জন্য অনেকে সুপারিশ করেছেন, তা করবেন কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আমরা কিছুই বলবো না। কারণ আমরা কিন্তু শপথ নিয়েছি, যে সংবিধান বলবৎ আছে তার অধীনে আইন ও সংবিধানিক বিধান অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব আমরা নিয়েছি। যে কাজগুলোর কথা বলছেন সেগুলো রাজনৈতিক ব্যাপার, সেটা তারা তাদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি বলেন, আমরা সংলাপ করছি, সংলাপের ফলাফল লিপিবদ্ধ করে, পর্যালোচনা করা হবে। মতবিনিময় সভায় ৪০ জন সাংবাদিককে আমন্ত্রণ জানানো হলেও শেষ পর্যন্ত ২৩ জন উপস্থিত ছিলেন। সভায় সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য ইভিএম বাতিল, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা করা, সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ, নির্বাচনকালীন নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ, প্রয়োজনে একদিনে ভোট না করে কয়েকদিনে ভোট করা, নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন আমন্ত্রিতরা। দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের নির্বাচন একদিনে না করে কয়েক সপ্তাহ ধরে বিভাগ ভিত্তিক করার সুপারিশ করেন। তিনি বলেন, প্রত্যেক জেলায় একেক দিন একেকটা নির্বাচন করেন, তাহলে নির্বাচনের পুরো পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। বিভাগভিত্তিক জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা যায় কি-না দেখতে হবে। ৫০ শতাংশ সাফল্য পেলে স্যালুট জানাবো। আগামী নির্বাচন ভালোভাবে না হলে খুনোখুনি হবে।
দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেন, আমরা দেখতে চাই- ইসি কোনো দল বা মহলের নয়। ইসি দেশের। সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে এবং ইসির ওপর অর্পিত দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করতে হবে। সরকারের দিকে তাকাবেন না। কোনো প্রভাবশালীদের দিকেও তাকাবেন না। সংবিধানে আপনাদের যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সেটা ভালোভাবে পালন করলেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।
যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, নির্বাচনে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেন প্রভাব বিস্তার করতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া রাজনৈতিক, পেশি শক্তি ও অর্থ যেন কোনোভাবেই নির্বাচন কমিশনকে দমিয়ে রাখতে না পারে। প্রভাব বিস্তার করতে না পারে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন যেন মেরুদণ্ড সোজা করে সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, সংলাপ নয়, কাজ করতে হবে। কাজের ওপরই বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত। সাম্প্রতিক সময়ে সংবাদ সংগ্রহের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদেরকে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। আপনারা উন্মুক্ত করে দিন। নির্বাচনে সাংবাদিক এবং দেশি বিদেশি পর্যবেক্ষকদের সর্বাধিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করুন। তাহলে অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়গুলোকে ঠেকাতে পারবেন। আজকের পত্রিকার সম্পাদক ড. গোলাম রহমান বলেন, কী ধরনের সংকট আসতে পারে, তা কিন্তু আপনারা নিজেরাও মনে মনে জানেন। তর্ক-বিতর্ক যাই থাকুক, সব দল অংশ নিলে সেই নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার সুযোগ থাকে।
দৈনিক নিউএজ সম্পাদক নূরূল কবীর বলেন, বিচারপতি সাত্তার কমিশনের অধীনে যেমন নির্বাচন হয়েছিল, তেমন নির্বাচন যদি করতে না পারি তাহলে সেটা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো, নির্বাচন কমিশন, সবার জন্য লজ্জার। তিনি বলেন, আপনারা ব্যক্তিগত জীবনে যা অর্জন করতে চেয়েছিলেন তা পেয়েছেন। এখন নির্বাচন কমিশনার হয়েছেন, এই পদগুলো বোনাস। তাই জীবনে আর হারানোর কিছু নেই। মানুষের শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা পাওয়ার সুযোগ আছে। নির্বাহী বিভাগ নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনের অধীনে কাজ করবে বলে সংবিধানে বলা আছে। তাই আপনারা যদি চান নির্বাহী বিভাগকে শুনাতে বাধ্য করতে পারেন। সেটা করবেন কি-না, সেটা আপনাদের সিদ্ধান্ত। যে বাছাই কমিটির মধ্য দিয়ে কমিশনের নিয়োগ হয়েছে, সেই কমিটির প্রতি মানুষের আস্থা নেই। কাজেই আপনাদের আস্থা অর্জন করতে হবে।
ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি শূন্যের কোঠায় চলে গিয়েছিল। বর্তমান কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনা। বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ জানিয়েছেন, এটা লজ্জার বিষয়। যে সরকারের অধীনেই নির্বাচন হোক ইসির দায়িত্ব হবে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন উপহার দেয়া। তবে যেখানে রাজনৈতিক সমঝোতা নেই, আস্থা নেই, সেখানে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা খুবই কঠিন কাজ।
দ্য অবজারভার পত্রিকার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য আরপিওতে (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) ক্ষমতা দেয়া আছে, সংবিধানে আছে, সেটা প্রয়োগ করতে হবে।
প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে বেশকিছু স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে। এসব নির্বাচন দিয়ে ইসিকে আস্থা অর্জন করতে হবে। সামনের নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু করতে বিপদ, ঝুঁঁকি নিতে প্রস্তুত থাকতে হবে। প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে রিটার্নিং কর্মকর্তা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এজন্য নিজস্ব জনবলকে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত করতে হবে। তাহলে প্রশাসনিক এবং সরকারি হস্তক্ষেপ অনেক কমে যাবে।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড সম্পাদক এনাম আহমেদ বলেন, বিভিন্ন আইনের দ্বারা মিডিয়া বাঁধা। নির্বাচনের সময় এসব আইন সাংবাদিকদের জন্য শিথিল করা হবে কি-না, এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে অবশ্যই বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে উদ্যোগ নিতে হবে। আর সে উদ্যোগ নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments