Sunday, September 24, 2023
spot_img
Homeধর্মইসলামে খাবারের সাজসজ্জা যখন প্রশংসিত

ইসলামে খাবারের সাজসজ্জা যখন প্রশংসিত

খাবার সুন্দরভাবে পরিবেশনের সামাজিক গুরুত্ব রয়েছে, যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি শুধু খাবার সুসজ্জিত করার জন্য পৃথক উপকরণ ও অর্থ ব্যয় করা হয়। যেমন—খাবার সাধারণ প্লেটে পরিবেশন করা যেত, তা প্লেটে না করে বিশেষ ডালি কেনা হয়। এমনকি খাবার সুসজ্জিত করতে স্বর্ণ-রৌপ্যের ব্যবহার পর্যন্ত দেখা যায়।

প্রশ্ন হচ্ছে, খাবার সুসজ্জিত করার জন্য অর্থ ব্যয় করা যাবে কি? অথবা যেখানে অর্থ ব্যয় হয় না, কেবল সময় ব্যয় হয় তা করা যাবে কি? প্রশ্নের উত্তরটি আমরা এভাবে দিতে পারি :

ইসলাম কাজের মূল্যায়ন যেভাবে করে

ইসলাম যেকোনো কাজকে পার্থিব ও অপার্থিব প্রয়োজনীয়তা ও কল্যাণের ভিত্তিতে বিবেচনা করে। মানুষের জীবনে যা কিছু অপরিহার্য ইসলাম তা নিশ্চিত করতে বলে এবং যা বাহুল্য তা পরিহার করতে বলে। ফকিহ আলেমরা বলেন, শরিয়তের মূল উদ্দেশ্য পাঁচটি। তা হলো দ্বিনের সংরক্ষণ, জীবনের সংরক্ষণ, বুদ্ধি-বিবেকের সংরক্ষণ, সম্পদের সংরক্ষণ ও সম্ভ্রমের সংরক্ষণ।উল্লিখিত পাঁচটি বিষয় সংরক্ষণের জন্যই ইসলাম যাবতীয় বিধি-বিধান প্রণয়ন করেছে।

সুসজ্জিত করা কতটা প্রয়োজন?

উল্লিখিত মাপকাঠির আলোকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, খাবার খাওয়া মানুষের জন্য অপরিহার্য। কেননা এর মাধ্যমে জীবন রক্ষা পায় এবং মানুষ পার্থিব ও ধর্মীয় কাজগুলো করার শক্তি অর্জন করে। কিন্তু এই উদ্দেশ্য পূরণে সাজসজ্জার কোনো ভূমিকা নেই।

ফলে ইসলাম খাবার গ্রহণের নির্দেশ দেয় এবং অপ্রয়োজনীয় সাজসজ্জা পরিহার করতে বলে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মানবসন্তান! প্রত্যেক নামাজের সময় তোমরা সুন্দর পরিচ্ছদ গ্রহণ করো। তোমরা খাও এবং পান করো, অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩১)

ইমাম কুরতুবি (রহ.) উল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘যে খাবার প্রয়োজন পূরণ তথা ক্ষুধা ও তৃষ্ণা নিবারণের জন্য গ্রহণ করা হয় তা প্রশংসনীয়।কেননা এতে জীবন রক্ষা পায় এবং মানুষের ইন্দ্রিয়গুলো ঠিকমতো কাজ করে।’ (তাফসিরে কুরতুবি : ৭/১৯১)

খাবার সুসজ্জিত করার এমন কোনো মৌলিক বা অমৌলিক প্রয়োজন নেই। তবে উল্লিখিত আয়াতের প্রথমাংশ দ্বারা প্রমাণিত হয়, যে সৌন্দর্য মানুষের রুচিবোধের পরিচায়ক তার প্রতি লক্ষ রাখা মুমিনের দায়িত্ব।

সুন্দর পরিবেশনে উৎসাহ দান

ইসলাম সুন্দর পরিবেশন ও সাধারণ সাজসজ্জা, যা মানুষের অর্থ ও সময় নষ্ট হয় না তাতে উৎসাহিত করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘বলো, আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের জন্য যেসব শোভার বস্তু ও বিশুদ্ধ জীবিকা সৃষ্টি করেছেন তা কে হারাম করেছে?’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩২)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ভেতর তাঁর অনুগ্রহের বহিঃপ্রকাশ দেখতে ভালোবাসেন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৮১৯)

রাসুল (সা.) সুন্দর পরিবেশন পছন্দ করতেন

মহানবী (সা.) উত্তম ও উপাদেয় খাবারের সঙ্গে সঙ্গে খাবারের সুন্দর পরিবেশন পছন্দ করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ‘হালুয়া ও মধু পছন্দ করতেন।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৩৪১৫)

আল্লামা খাত্তাবি (রহ.) বলেন, হালুয়া বলা হয় এমন মিষ্টান্নকে, যাতে নকশা করা হয়। (আলামুল হাদিস : ৩/২০৫৩)। সুতরাং বোঝা যায়, মহানবী (সা.) মিষ্টি খাবারের সঙ্গে সঙ্গে খাবারের সুন্দর পরিবেশনও পছন্দ করতেন। আল্লামা ইবনে হাজার আস্কালানি (রহ.) বলেন, এই হাদিস দ্বারা খাদ্যে নকশা করার বৈধতা প্রমাণিত হয়। (ফাতহুল বারি : ৯/৫৭৩)

সাজসজ্জা যখন পরিহারযোগ্য

ইসলামের দৃষ্টিতে খাবারে সাধারণ সাজসজ্জা ও সুন্দর পরিবেশন প্রশংসনীয়। তবে এতে যে অর্থ ও সময় ব্যয় হয়, তা যদি অপব্যয়ের পর্যায়ে পড়ে এবং তাতে যদি অহংকার ও অহমিকা ভর করে তবে তা পরিহার করা আবশ্যক। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা অপব্যয় ও আত্মম্ভরিতা না করে খাও, দান করো এবং পরিধান করো। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২৫৫৯)

আর সময়ের অপচয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, অর্থহীন বিষয় ত্যাগ করা মুসলমানের সৌন্দর্যের অংশ। (সুনানে সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৩১৭)। আল্লাহ সবাইকে ভারসাম্যপূর্ণ জীবন দান করুন। আমিন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments