Saturday, July 27, 2024
spot_img
Homeধর্মইসলামে কৃষির প্রতি সবিশেষ তাগিদ

ইসলামে কৃষির প্রতি সবিশেষ তাগিদ

গত ৩ আগস্ট বাংলাদেশ গবেষণা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কৃষি খাতে শ্রমিকের কাজের মজুরি বেড়ে যাওয়াসহ নানাবিধ কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে এ খাতে কোনো শ্রমিক খুঁজে পাওয়া যাবে না। পাশাপাশি হারিয়ে যেতে পারে পারিবারিক খামার। খবরটি বিশ্ববাসীর জন্য উদ্বেগের। কারণ সভ্যতার উষালগ্ন থেকে মানবজাতির জন্য কৃষি একটি অপরির্হায ও অত্যাবশ্যকীয় খাত।

যুগের বিবর্তনে ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মানুষের জীবনযাত্রা যত উন্নত এবং আধুনিক হোক না কেন, কৃষির প্রয়োজনীয়তা অপরিবর্তনীয় থাকবে।

কৃষি খাত মহান আল্লাহর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নিয়ামত। মহান আল্লাহ তা থেকে তাঁর অসংখ্য মাখলুকের রিজিকের ব্যবস্থা করেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি লক্ষ করে না, আমি ঊষর ভূমির ওপর পানি প্রবাহিত করে তার সাহায্যে উদ্গত করি শস্য, যা থেকে তাদের গবাদি পশু এবং তারা নিজেরা আহার গ্রহণ করে। ’ (সুরা : সাজদা, আয়াত : ২৭)

খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থে কৃষির প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি নিশ্চিতভাবে জানো যে কিয়ামত এসে গেছে, তখন হাতে যদি একটি গাছের চারা থাকে, যা রোপণ করা যায়, তবে সেই চারাটি রোপণ করবে। ’ (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৪৭৯)

খাদ্যে স্বনির্ভরতা জাতিকে বড় বড় দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করে, যা অর্জনে কৃষি উন্নয়ন ও ব্যক্তিগত খামার গড়ে তোলা আবশ্যক। এ জন্য ওমর (রা.) দুর্যোগকালে প্রতিটি কৃষিযোগ্য জমিকে কৃষির আওতায় আনার জোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। এবং তাতে তাঁরা সুফল পেয়েছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ওমর (রা.) দুর্ভিক্ষের বছর পল্লী অঞ্চলের বেদুইনদের উট, খাদ্যশস্য ও তেল প্রভৃতি সাহায্য সামগ্রী পৌঁছানোর চেষ্টা করেন। এমনকি তিনি গ্রামাঞ্চলের একখণ্ড জমিও অনাবাদি পড়ে থাকতে দেননি এবং তাঁর চেষ্টা ফলপ্রসূ হলো। (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৫৬৪)

তা ছাড়া পারিবারিক খামার মানুষের দুর্দিনের সঙ্গী। যার ইঙ্গিত মহানবী (সা.)-এর হাদিসে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, সেদিন দূরে নয়, যেদিন মুসলিমের উত্তম সম্পদ হবে কয়েকটি বকরি, যা নিয়ে সে পাহাড়ের চূড়ায় অথবা বৃষ্টিপাতের স্থানে চলে যাবে। ফিতনা থেকে সে তার ধর্ম সহকারে পলায়ন করবে। (বুখারি, হাদিস : ১৯)

বর্তমান যুগেও আমরা যতই প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জন করি, আমাদের জীবন ও জীবিকা কিন্তু শতভাগ নিরাপদ নয়। বৈশ্বিক কোনো দুর্যোগের কারণে যদি শহরের বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট, গ্যাস সেবা কিছুদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে আমাদের সাজানো গোছানো এই উন্নত শহরগুলো বাসযোগ্য থাকবে না। তখন মানুষ গ্রামের সেই অযান্ত্রিক জীবনে ফিরে যেতে চাইবে এবং সেটাই তাদের জন্য নিরাপদ হবে। যাদের ফসল ভরা ক্ষেত, পুকুর ভরা মাছ আর গবাদি পশু ইত্যাদির খামার থাকবে, তারা সেই দুর্যোগের দিনেও খুব বেশি বিপদে পড়তে হবে না, ইনশাআল্লাহ।

তা ছাড়া বিশুদ্ধ নিয়তে মুমিনের কৃষিকাজও তাকে অফুরন্ত সওয়াবের দরজা খুলে দেয়। হাদিসে এসেছে, যদি কোনো মুসলমান একটি বৃক্ষ রোপণ করে অথবা কোনো শস্য উৎপাদন করে এবং তা থেকে কোনো মানুষ কিংবা পাখি অথবা পশু ভক্ষণ করে, তবে তা উৎপাদনকারীর জন্য সদকা (দান) স্বরূপ গণ্য হবে। (বুখারি, হাদিস : ২৩২০)

মহান আল্লাহ সবাইকে সুবুদ্ধি দান করুন। আমিন।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments