ইসলাম একটি সর্বজনীন জীবনব্যবস্থা, যেখানে একজন মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনাচারের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার কর্মনীতির সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা পেশ করে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং একজন মুসলিম তার সাংস্কৃতিক বলয় কোন মানদণ্ডে সাজাবে তার পরিষ্কার ব্যাখ্যাও ইসলাম তাকে নির্দেশ করে দিয়েছে। যেখানে মনগড়া কোনো রীতিনীতি আর আদর্শ প্রতিস্থাপনের কোনো সুযোগ নেই।
একজন মুসলিম পানি পান কোন পন্থায় করবে, খাদ্য কিভাবে গ্রহণ করবে, পোশাক কী ধরনের পরিধান করবে, আনন্দ-বিনোদন কোন পর্যায়ে কতটুকু কিভাবে করতে হবে, তার বিশদ বিবরণ ইসলাম তাকে দিয়ে রেখেছে।
কাজেই মুসলিম হিসেবে আমাদের সর্বাগ্রে কর্তব্য হচ্ছে আমাদের সাংস্কৃতিক চৌহদ্দির পরিচয় জানা।
ইসলাম যেমন সুন্দর, তেমনি তার সংস্কৃতিও আপন মহিমা ও বৈশিষ্ট্যে ভাস্বর। সংস্কৃতি শব্দ গঠিত হয়েছে সংস্কার থেকে। যার অর্থ শুদ্ধি, পরিমার্জন ও মেরামত। সুতরাং সংস্কৃতি হচ্ছে জীবনাচারের এমন সব রীতিনীতি আর আদর্শ, যা ব্যক্তি বা সমাজকে পরিশুদ্ধ করে তোলে। কাজেই একজন মুসলিম তার ব্যক্তি বা সমাজজীবনে সেই সব রীতিনীতি আর আদর্শেরই শুধু প্রতিফলন ঘটাবে, যা ইসলাম তাকে শিক্ষা দিয়েছে। ইসলাম তাকে যেভাবে যেখানে যে ধরনের কথা, কাজ, আচরণ আর আর্দশ শিক্ষা দিয়েছে, সে সবই তার সাংস্কৃতিক চৌহদ্দী। এর বাইরে কোনো রীতিনীতি আর আদর্শ কিছুতেই একজন মুসলিমের সংস্কৃতি হতে পারে না। কারণ মুসলিম সংস্কৃতিক মূল উপাদান হচ্ছে পবিত্র কোরআন ও রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ। সেই সঙ্গে ভাষা, বর্ণ ও ভৌগোলিক সীমারেখাভেদে নিজ নিজ এলাকার সব রীতিনীতি শুধু একজন মুসলিম অনুসরণ করতে পারে, যেগুলো ইসলামী নীতি-আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। কোনো অঞ্চলের নিজস্ব রীতিনীতি যদি ইসলামের কোনো বিধানের পরিপন্থী হয়, তাহলে সেসব রীতি কিছুতেই মুসলিম সংস্কৃতির অংশ হতে পারে না। তা অবশ্যই একজন মুসলিমকে পরিত্যাগ করতে হবে।
একজন মুসলিমকে তার সাংস্কৃতিক চৌহদ্দীর জ্ঞান আহরণের পাশাপাশি সেটি পরিচ্ছন্নকল্পে সর্বদা সর্বান্তকরণ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে খলিফা উমর (রা.)-এর বিখ্যাত উক্তিটি হতে পারে আমাদের তূর্যধ্বনি। তিনি বলেন, ‘আলাইকুম বিররিবাতিদ দায়িমি…’ বিরাত শব্দের ব্যাখ্যা অনেক ব্যাপক। শাব্দিক অর্থে সর্বদা যুদ্ধ প্রস্তুতিতে থাকা। তবে উমর (রা.)-এর এ বক্তব্যের উদ্দেশ্য ছিল সমাজব্যবস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিজাতীয় রীতিনীতির আগ্রাসন বারবার আঘাত হানতে থাকবে। সুতরাং সদা সজাগ থেকে সেসব প্রতিহত করতে হবে। সুতরাং কোরআন ও সুন্নাহ নির্দেশিত পথ ও মতই হতে পারে মুসলিম সংস্কৃতির একমাত্র চালিকাশক্তি। আর সুন্নাহের মানদণ্ডে উত্তীর্ণ সংস্কৃতির সঠিক চর্চা নিশ্চিত করতে পারলেই সাধিত হবে প্রকৃত সুখ আর সমৃদ্ধ সমাজব্যবস্থা।
লেখক : প্রাবন্ধিক
অনুবাদক ও মুহাদ্দিস