পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করা সব মুসলিমের কর্তব্য। এ ক্ষেত্রে সুস্থ-সবল ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সবাই অন্তর্ভুক্ত। যেমন আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘যাদের আমি কিতাব দান করেছি তারা তা যথাযথভাবে তিলাওয়াত করে, তারাই তাতে বিশ্বাস করে। আর যারা এটা প্রত্যাখ্যান করে তারা ক্ষতিগ্রস্ত।
(সুরা বাকারা, আয়াত : ১২১)
ইসলামে কোরআনের হাফেজদের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। মুমিনদের মধ্যে তাদের সর্বোত্তম বলা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে নিজে কোরআন শেখে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়। ’ (বুখারি, হাদিস : ৫০২৮)
এ ছাড়া পবিত্র কোরআন কিয়ামতের দিন ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা কোরআন তিলাওয়াত করো। কেননা তা কিয়ামতের দিন তার ধারকের জন্য সুপারিশকারী হবে। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৩০২)
কিয়ামতের দিন প্রতিটি আয়াতের বিপরীতে মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোরআন অধ্যয়নকারীকে বলা হবে, কোরআন পাঠ করতে করতে ওপরে উঠতে থাকো। তুমি দুনিয়াতে যেভাবে ধীরে-সুস্থে পাঠ করতে, সেভাবে পাঠ করো। কেননা তোমার তিলাওয়াতের শেষ আয়াতেই (জান্নাতে) তোমার বাসস্থান হবে। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৬৪)
পবিত্র কোরআন পাঠ করা ও মুখস্থ করা সব মুসলিমের কর্তব্য। কিন্তু অনেক শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী তা মুখস্থের সুযোগ পায় না। বিপুল প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে একটি আবাসিক মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন ইন্দোনেশিয়ান আলেম আবদুল কাহফি। বিশ্বের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইন্দোনেশিয়ার জাভা প্রদেশের যোগিয়াকার্তা শহরে ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইশারা ভাষায় পবিত্র কোরআন ও ইসলামের মৌলিক শিক্ষা পাঠদান করানো হয়।
রয়টার্স সূত্রে জানা যায়, শ্রবণপ্রতিবন্ধীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত মাদরাসাটির নাম দারুল আশোম। বর্তমানে এ মাদরাসায় ১১৫ শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। তাদের বয়স সাত বছর থেকে ২৮ বছর। তাদের পাঠদান করাচ্ছেন ১২ শিক্ষক। এ শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে আগামী প্রজন্মের মধ্যে ইসলামী শিক্ষার বিস্তার ঘটবে আশা প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্টরা।
আবদুল কাহফি বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়ায় অন্যান্য শিক্ষার্থীর তুলনায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান খুবই সীমিত। সাধারণত ৮ বা ৯ বছর বয়স থেকে তাদের শিক্ষা দেওয়া হয়। কারণ তারা স্কুলে ইসলামী জ্ঞানের ভালো পাঠদান পায় না। কিন্তু সমপ্রতি এ মাদরাসার প্রতি তাদের আগ্রহ ক্রমাগত বাড়ছে। ’ এদিকে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের সূত্রমতে, ইন্দোনেশিয়ায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন প্রতি ১০ শিশুর মধ্যে তিনজন স্কুলে যেতে সক্ষম হয়।
সাধারণত পবিত্র কোরআন হিফজ সম্পন্ন করতে শ্রবণপ্রতিবন্ধীদের পাঁচ বছর সময় লাগে। ইতিমধ্যে পবিত্র কোরআনের ৩০ পারা হিফজ সম্পন্ন করেছে মুহাম্মদ ফরহাদ নামের ১০ বছর বয়সের এক শিক্ষার্থী। এখন সে পুরো কোরআন না দেখেই পড়তে পারে। ভবিষ্যতে সে অন্যদের কোরআন শেখাতে চায়।
উল্লেখ্য, ইন্দোনেশিয়ায় কয়েক হাজার আবাসিক মাদরাসা (ইসলামিক স্কুল)-সহ বিভিন্ন ধর্মীয় স্কুল রয়েছে। দেশটির অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সন্তানদের শিক্ষাগ্রহণের একমাত্র উপায়।
সূত্র : রয়টার্স