ইরান সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সমপ্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানিয়েছে, গত বছরের নভেম্বরে ইরানে যে গণবিক্ষোভ হয়েছিল তাতে ভয়ঙ্কর প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল ইরানের শাসকগোষ্ঠী। সে সময় হঠাৎ করেই তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছিল ইরান সরকার। মার্কিন অবরোধে বিধ্বস্ত অর্থনীতি টিকিয়ে রাখতে জনগণের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হয় ওই বোঝা। তবে মানুষ সরকারের এই আচরণের বিরুদ্ধে সরব হয়ে ওঠে। অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, ওই আন্দোলন দমনে নির্মম রাস্তা বেছে নেয় ইরান। এ খবর দিয়েছে ডয়েচে ভেলে।
খবরে বলা হয়, সেই ঘটনা নিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে বুধবার।
সেখানেই বলা হয়েছে, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ভয়ঙ্কর অত্যাচার করে বেআইনিভাবে স্বীকারোক্তি নিয়েছে। বিক্ষোভের পরই কয়েকশ’ আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুরো দেশে কার্যত ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউট করে দেয়া হয়। সেই পুলিশি বাড়াবাড়ির কথা উঠে এসেছে রিপোর্টে। অ্যামনেস্টি বলেছে, তারা প্রচুর বিক্ষোভকারীর সঙ্গে কথা বলেছে। দশ বছরের বাচ্চাকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তাদের রিপোর্টে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহ ছবি উঠে এসেছে। যাদের সঙ্গে অ্যামনেস্টি কথা বলেছে তারা জানিয়েছেন, যাকে খুশি নিরাপত্তা বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে। তাদের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে। খুব খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে। অনেকেই গুম হয়ে গেছেন। বিক্ষোভকারীদের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করার জন্য ভয়ঙ্কর অত্যাচার চালানো হয়েছে। অ্যামনেস্টি ৫০০ জনের তালিকা তৈরি করেছে, যাদের পুলিশি অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীদের অন্যায্য বিচার হয়েছে। অনেককে কোনো কারণ ছাড়াই মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। অসংখ্য বিক্ষোভকারীর জেল হয়েছে। পক্ষপাতপূর্ণ বিচারকদের দিয়ে বিচার করানো হয়েছে। এক মাস থেকে দশ বছর পর্যন্ত জেল হয়েছে। অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, বিভিন্নভাবে বিক্ষোভকারীদের নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের মারা হয়েছে, ইলেকট্রিক শক দেয়া হয়েছে, পানিতে চুবিয়ে রাখা হয়েছে, যৌনাঙ্গে গোলমরিচের গুঁড়ো সেপ্র করা হয়েছে, যৌন নির্যাতন করা হয়েছে এবং হাত ও পায়ের নখ উপড়ে ফেলা হয়েছে। এই বছর মে মাসে ইরানের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, বিক্ষোভের সময় ২২৫ জন বিক্ষোভকারী মারা যান। ২০১৯ সালেই জাতিসংঘের অধিকার রক্ষা কর্মীরা জানিয়েছিলেন, অসমর্থিত খবর হলো, কয়েকশ’ বিক্ষোভকারী মারা গেছেন। সংখ্যাটা তিনশ’র কম হবে না। আর ইরানের অভিযোগ ছিল, সৌদি আরব ও ইসরাইলের মদতে বিক্ষোভ হয়েছিল।