Tuesday, April 16, 2024
spot_img
Homeধর্মইবাদত-বন্দেগিতে একত্ববাদের প্রভাব

ইবাদত-বন্দেগিতে একত্ববাদের প্রভাব

ইসলাম মানুষকে যে আধ্যাত্মিক জীবনের দিশা দেয়, তা পৃথিবীর অন্য ধর্মগুলোর তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন ও অনন্য। ইসলাম নির্দেশিত আধ্যাত্মিক জীবনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো একত্ববাদ। প্রকৃতপক্ষে আধ্যাত্মিক জীবনের প্রধান শর্ত একত্ববাদ। একত্ববাদের নিখাদ বিশ্বাস ছাড়া আধ্যাত্মিক সাধনা নিষ্ফল।

একত্ববাদের মর্মকথা : একত্ববাদের অর্থ হলো এক আল্লাহর ইবাদত করা, তাঁর কাছে সাহায্য কামনা করা, আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত না করা এবং অন্য কারো কাছে সাহায্য প্রার্থনা না করা। আল্লাহর বাণী ‘আমরা কেবল আপনার ইবাদত করি এবং আপনারই কাছে সাহায্য চাই’-এর দাবি এটাই, যা আয়াতকে আল্লাহ ‘উম্মুল কোরআন’ খ্যাত সুরা ফাতিহার মধ্যভাগে এনেছেন।

ইবাদতের মৌলিক উপাদান : ইবাদতে মৌলিকভাবে দুটি উপাদান থাকতে হয়। উপাস্যের জন্য উপাসকের সর্বোচ্চ বিনয় এবং তাঁর প্রতি সর্বোচ্চ ভালোবাসা। আর ইবাদতই বান্দাকে সৃষ্টির চূড়ান্ত উদ্দেশ্য। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি জিন ও মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছি আমার ইবাদতের উদ্দেশ্যে।’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ৫৬)

আর ইবাদত দ্বারা উদ্দেশ্য আল্লাহর নিষ্কলুষ ইবাদত, যেখানে অন্যের কোনো অংশগ্রহণ থাকবে না। পবিত্র কোরআনের বর্ণনা অনুসারে পৃথিবীর সব নবী-রাসুল নিজ সম্প্রদায়কে একত্ববাদের আহ্বান জানিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো। তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো উপাস্য নেই।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৫৯)

একই সঙ্গে তাঁরা তাদের তাগুতের ইবাদত ও আনুগত্য থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। চাই সেটা যে নামেই হোক এবং যে আকৃতিতেই হোক। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর ইবাদত করার ও তাগুতের বর্জন করার নির্দেশ দিতে আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসুল পাঠিয়েছি।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৩৬)

একত্ববাদে মানবতার মুক্তি : ইসলামের আগমন হয়েছে মানুষ ও মানবতাকে মুক্তি দিতে। আর ইসলাম তা করেছে নিখাদ একত্ববাদের মাধ্যমে। একত্ববাদের দাবিই হলো মানুষ কেবল আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তিনি ছাড়া সবার আনুগত্য থেকে মুক্ত থাকবে। সে মানুষ, প্রাণী, বস্তু, শক্তি, প্রবৃত্তি—সব কিছুর আনুগত্য ত্যাগ করবে। বহু মানুষ বলে, মন যা চায় করো। কিন্তু আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘মানুষ পৃথিবীতে যা কিছুর ইবাদত করে তার মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট হলো প্রবৃত্তি।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) খ্রিস্টান শাসকদেরসহ অন্যান্য আহলে কিতাব আমিরের কাছে পাঠানো চিঠি নিম্নোক্ত আয়াতের মাধ্যমে শেষ করতেন। আল্লাহ বলেন, ‘আপনি বলুন! হে কিতাবিরা, এসো সে কথায়, যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই; যেন আমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত না করি এবং কোনো কিছুকে তাঁর শরিক না বানাই আর আমাদের কেউ কাউকে আল্লাহ ছাড়া উপাস্য হিসেবে গ্রহণ না করে। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে বলো, তোমরা সাক্ষী থাকো, অবশ্যই আমরা মুসলিম।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৬৪)

একত্ববাদের চার দাবি : ইসলাম ও ইসলামী জীবনের মূলভিত্তি একত্ববাদের চারটি দাবি আছে। সুরা আনআমের চার আয়াতে আল্লাহ সেদিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন। তা হলো—

১. আল্লাহ ছাড়া কাউকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ না করা : আল্লাহ বলেন, ‘বলুন, আমি কি আল্লাহকে ছেড়ে অন্য প্রতিপালককে খুঁজব? অথচ তিনিই সব কিছুর প্রতিপালক।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৬৪)

২. অন্য কাউকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ না করা : আল্লাহ বলেন, ‘আমি কি আসমান ও জমিনের স্রষ্টা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করব? তিনিই আহার্য দান করেন, তাঁকে কেউ আহার্য দান করে না।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৪)

৩. অন্য কাউকে বিধানদাতা হিসেবে গ্রহণ না করা : ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন, তবে কি আমি আল্লাহ ছাড়া অন্যকে সালিস (বিচারকারী) মানব—যদিও তিনিই তোমাদের প্রতি সুস্পষ্ট কিতাব অবতীর্ণ করেছেন।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১১৪)

৪. কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা : আল্লাহ বলেন, ‘বলুন, আমার নামাজ, আমার ইবাদত, আমার জীবন ও আমার মরণ জগত্গুলোর প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশে।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৬২)

যখন মানুষ এসব বিষয় জ্ঞান, অবস্থা ও বাস্তবায়নের বিবেচনায় নিজের ভেতর ধারণ করে, তখনই প্রকৃতার্থে তাকে একত্ববাদের অনুসারী বলা যায়। এই একত্ববাদই ইসলামী জীবন ব্যবস্থার প্রাণশক্তি।

‘আল-হায়াতুর রব্বানিয়া ওয়াল ইলম’ থেকে  মো. আবদুল মজিদ মোল্লার ভাষান্তর

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments