ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংস ঘটনা যেভাবে বেড়ে চলেছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। প্রতিদিনই রক্তাক্ত হচ্ছে নির্বাচনের মাঠ। চলতি বছর এ নির্বাচন ঘিরে অন্তত ২০০ সংঘাতের ঘটনায় প্রায় অর্ধশত ব্যক্তির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ।
সর্বশেষ মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাথলী ইউনিয়নে একজন মেম্বার প্রার্থীর নির্বাচনি প্রচারে হামলা চালিয়ে দুই ভাইকে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের কর্মী-সমর্থকরা। এছাড়া গত দু-একদিনে দেশের আরও কয়েকটি স্থানে সংঘটিত সহিংস ঘটনায় অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন।
বস্তুত ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের নির্বাচনি প্রচারণায় এবং নির্বাচনি অফিসে হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষ পরিণত হয়েছে নিত্য ঘটনায়। এসব ঘটনায় প্রার্থীদের শুধু নির্বাচনি আচরণবিধিই লঙ্ঘিত হচ্ছে না, নির্বাচনে ভোট প্রদানের ব্যাপারে জনমনে ভয়ভীতির সঞ্চার হচ্ছে, যার প্রভাব পড়বে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপিস্থিতিতে।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কিছুটা উত্তেজনা বরাবরই থাকে। তবে এবার সহিংসতা যে পর্যায়ে চলে গেছে, তা চিন্তার বিষয়। নির্বাচনি সহিংসতা বৃদ্ধির কারণ হিসাবে বিশেষজ্ঞরা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিষ্ক্রিয়তাকেই প্রথমত দায়ী করছেন। তারা বলছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে সংঘাত, বিশৃঙ্খলা ও হতাহতের ঘটনাগুলো ঘটছে, তার দায় ইসি কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। দ্বিতীয়ত, নির্বাচনি মাঠে দলীয়ভাবে বিএনপি না থাকায় অধিকাংশ স্থানেই রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী। তারা নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছেন সংঘাতে। এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ধরে রাখতে পারছে না বলে মনে করছেন কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ।
ইউপি নির্বাচনে অব্যাহত সহিংসতার প্রেক্ষাপটে আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন করলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন মাঠ পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা। তারা বলেছেন, সহিংসতার ঘটনার জন্য দায়ী প্রার্থীদের মধ্যে দু-একজনের প্রার্থিতা বাতিলের দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হলে তা থেকে অন্যরা শিক্ষা নিতে পারেন। আমরাও মনে করি, নির্বাচন কমিশন কঠোর অবস্থান গ্রহণ না করলে সহিংসতার প্রবণতা রোধ করা যাবে না। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হোক, এটাই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা। এ প্রত্যাশা তখনই পূরণ হতে পারে, যখন রাজনৈতিক দলসহ নির্বাচনের অন্যান্য অংশীজন তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে। তবে রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন কমিশন-এ দুই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, এ দুই প্রতিষ্ঠানই চলমান ইউপি নির্বাচনে তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে না। ফলে দেখা দিচ্ছে সংঘাত-সংঘর্ষ। অথচ এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। নির্বাচনি আইন ও বিধিমালায় ইসিকে যথেষ্ট ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সহিংসতা রোধে কেন তারা কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। আগামীকাল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইউপি নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ। তৃতীয় ধাপের ভোট হবে ২৮ নভেম্বর। আমরা আশা করব, এসব নির্বাচনসহ পরবর্তী সব নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে ইসি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।