আল্লাহ বান্দার দোয়া, প্রার্থনা ও আহ্বানে সাড়া দেন। এ জন্য আল্লাহর একটি গুণবাচক নাম ‘মুজিব’ (সাড়া দানকারী)। পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতে আল্লাহর এই গুণের বিবরণ এসেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর তাদের প্রতিপালক তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে বলেন, আমি তোমাদের মধ্যে কর্মে নিষ্ঠ কোনো নর বা নারীর কর্ম বিফল করি না; তোমরা একে অপরের অংশ।
(সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৯৫)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক নিকটবর্তী ও সাড়া দানকারী। ’ (সুরা হুদ, আয়াত : ৬১)
ইমাম তাবারি (রহ.) আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক নিকটবর্তী তাদের যারা একনিষ্ঠ হয়ে তাঁর ইবাদত করে এবং তাঁর কাছে তাওবায় আগ্রহী হয়। এমন বান্দা ডাকলে আল্লাহ তাঁর ডাকে সাড়া দেন। ’ (তাফসিরে তাবারি : ১২/৪৫৪)
আল্লামা সাদি (রহ.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর নৈকট্য দুই প্রকার। সাধারণ ও বিশেষায়িত। ক. সাধারণ নৈকট্য : এটা হলো জ্ঞানের মাধ্যমে আল্লাহর যে নৈকট্য সমগ্র সৃষ্টিকে ছেয়ে আছে। নিম্নোক্ত আয়াতে এই প্রকারের নৈকট্যেরই কথা বলা হয়েছে, ‘আমি তাঁর গ্রীবাস্থিত ধমনি অপেক্ষাও নিকটতর। ’ (সুরা কাফ, আয়াত : ১৬)
খ. বিশেষায়িত নৈকট্য : এই প্রকারের নৈকট্য আল্লাহ তাঁর ইবাদতকারী, তাঁর কাছে প্রার্থনাকারী ও তাঁকে যারা ভালোবাসে তাদের দান করেন। এমন নৈকট্য অর্জনের ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘তুমি সিজদা কোরো এবং নৈকট্য অর্জন কোরো। ’ (সুরা আলাক, আয়াত : ১৯)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন আমার বান্দা আমার সম্পর্কে তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, আমি নিকটেই। আহ্বানকারী যখন আমাকে আহ্বান করে আমি তাঁর আহ্বানে সাড়া দিই। সুতরাং তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমাকে ঈমান আনুক, যাতে তারা ঠিক পথে চলতে পারে। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৬)
আল্লাহ বান্দার ডাকে সাড়া দেন। কিন্তু বান্দা অনেক সময় তা বুঝতে পারে না। ফলে ধৈর্য হারিয়ে ফেলে। আবু হুরায়রা (রা.)-এর থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘বান্দার দোয়া সর্বদা কবুল হয়, যদি না সে অন্যায় কাজ অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদ করার জন্য দোয়া করে এবং (দোয়ায়) তাড়াহুড়া না করে। জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), তাড়াহুড়া করা কী? তিনি বললেন, সে বলতে থাকে, আমি তো দোয়া করেছি, আমি দোয়া তো করেছি; কিন্তু আমি দেখতে পেলাম না যে তিনি আমার দোয়া কবুল করেছেন। তখন সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং দোয়া করা ছেড়ে দেয়। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৮২৯)
বান্দার ডাকে আল্লাহর সাড়া দানের বিষয়টি পারস্পরিক। বান্দা যখন আল্লাহর আহ্বানে সাড়া দেয়, তখন আল্লাহও বান্দার আহ্বানে সাড়া দেন। তবে বান্দার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ প্রবল হওয়ায় আল্লাহ বান্দার প্রতি বেশি অগ্রসর হন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘আমি সে রকমই, যে রকম বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে। আমি বান্দার সঙ্গে থাকি যখন সে আমাকে স্মরণ করে। যদি সে মনে মনে আমাকে স্মরণ করে; আমিও তাকে নিজে স্মরণ করি। আর যদি সে জন-সমাবেশে আমাকে স্মরণ করে, তবে আমিও তাদের চেয়ে উত্তম সমাবেশে তাকে স্মরণ করি। যদি সে আমার দিকে এক বিঘত এগিয়ে আসে, তবে আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে যাই, যদি সে আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয়; আমি তার দিকে দুহাত এগিয়ে যাই। আর সে যদি আমার দিকে হেঁটে আসে, আমি তার দিকে দৌড়ে যাই। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৪০৫)