আত্মত্যাগ মানুষের মাঝে সম্প্রীতি আর ভালোবাসা বৃদ্ধি করে। এর দ্বারা বান্দা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে। এ জন্য ইসলাম অন্যেকে প্রাধান্য দেওয়ার শিক্ষা দিয়েছে। আত্মত্যাগ মানুষকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়।
আত্মত্যাগের অর্থ, নিজের অন্তরে এই মানসিকতা তৈরি করা যে আমি আমার আনন্দকে বিসর্জন দিয়ে অন্যকে খুশি করব। আমি নিজে শত কষ্ট মুখ চেপে সহ্য করব, তবু অন্যকে কষ্ট দেব না। কোনো ভাইকে ক্ষতিগ্রস্ত করব না।
সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে এ শিক্ষা দিয়েছেন আমাদের প্রিয় নবী (সা.)। যাদের মাঝে এ গুণ আছে তাদের সফলকাম হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সাহাবাদের প্রশংসায় আল্লাহ তাআলা কোরআনে কারিমে আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘এবং (সাহাবারা) নিজেরা অভাবগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও অন্যদের অগ্রাধিকার দেয়। ’ (সুরা : হাশর, আয়াত : ৯)
অন্য মুসলমান ভাইকে খুশি করার জন্য ত্যাগ করতে পারা এটা আল্লাহ তাআলার বিশেষ নিয়ামত। যাকে আল্লাহ তাআলা এই নিয়ামত দান করেছেন সেই এর প্রকৃত স্বাদ আস্বাদন করতে পারবে। অন্য সব প্রাপ্তির চেয়ে তার কাছে এটাই সর্বোচ্চ মনে হবে। আর এই আনন্দ ও স্বাদ অনুভব করার কারণেই সাহাবায়ে কেরাম এত এত ত্যাগ করতে পেরেছেন। যার বর্ণনা সাহাবাদের জীবনীতে কিতাবে বিভিন্নভাবে এসেছে।
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বলল, আমি খুব ক্ষুধার্ত। তখন তিনি তাঁর সহধর্মিণীদের কাছে পাঠালেন; কিন্তু তিনি তাদের কাছে কিছুই পেলেন না। এরপর রাসুল (সা.) বললেন, এমন কেউ আছে কি, যে আজ রাতে এ লোকটিকে মেহমানদারি করতে পারে? আল্লাহ তাঁর প্রতি রহমত করবেন। তখন আনসারদের এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললেন, আমি আছি, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), এরপর তিনি তাঁকে সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে গেলেন এবং নিজ স্ত্রীকে বলেন, ইনি রাসুল (সা.)-এর মেহমান। কোনো জিনিস জমা করে রাখবে না। স্ত্রী বলল, আল্লাহর কসম! আমার কাছে ছেলে-মেয়েদের খাবার ছাড়া আর কিছুই নেই। তিনি বলেন, ছেলেমেয়েরা রাতের খাবার চাইলে তুমি তাদের ঘুম পাড়িয়ে দিয়ো, (খাবার নিয়ে) আমার কাছে চলে এসো, আর বাতিটি নিভিয়ে দিয়ো। আজ রাতে আমরা ভুখা থাকব। স্ত্রী তাঁর কথামতো তা-ই করল। পরদিন সকালে আনসারি সহাবি রাসুল (সা.)-এর খিদমতে এলেন। তিনি বলেন, অমুক ব্যক্তি ও তার স্ত্রীর প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছেন অথবা অমুক অমুকের কাজে আল্লাহ হেসেছেন। এরপর আল্লাহ অবতীর্ণ করলেন, এবং তাঁরা তাদের নিজেদের ওপর অন্যদের প্রাধান্য দেয় নিজেরা অভাবগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও। (বুখারি, হাদিস : ৪৮৮৯)