মানুষ কখনো কখনো হতাশা, অতিরিক্ত গুনাহের কারণে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে পড়ে। তারা মনে করে আল্লাহ তাদের ওপর খুশি নন। তাদের দোয়া কবুল হয় না। তাদের তাওবাও হয়তো কবুল হবে না।
এমন উদ্ভট চিন্তা থেকে তারা দ্বিন থেকে আরো সরতে থাকে, ইবাদত ছেড়ে দেয়, দোয়া ছেড়ে দেয়, বিভিন্ন গুনাহের কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর ওপর ভরসা না করে মাখলুকের পেছনে ছুটতে থাকে। অথচ কোনো অবস্থাতেই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়ার সুযোগ নেই।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ’ (সুরা : যুমার, আয়াত : ৫৩)
অর্থাৎ মানুষের পাপ যতই হোক না কেন, সে যদি গুনাহের পথ থেকে ফিরে এসে খাঁটি তাওবা করে এবং আল্লাহর রহমতের চাদরে আশ্রয় চায়, মহান আল্লাহ তাকে তাঁর ক্ষমা ও রহমতের চাদরে আশ্রয় দেবেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, মুশরিকদের কিছু লোক বহু হত্যা করে এবং বেশি বেশি ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। তারপর তারা মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে এলো এবং বলল, আপনি যা বলেন এবং আপনি যেদিকে আহ্বান করেন, তা অতি উত্তম। আমাদের যদি অবগত করতেন, আমরা যা করেছি, তার কাফফারা কী? এর প্রেক্ষাপটে অবতীর্ণ হয় ‘এবং যারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোনো উপাস্যকে ডাকে না (শিরকে লিপ্ত হয় না), আল্লাহ যাকে হত্যা করা নিষেধ করেছেন, তাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। আরো অবতীর্ণ হলো; ‘হে আমার বান্দাগণ, তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অন্যায় করে ফেলেছ, আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। ’ (বুখারি, হাদিস : ৪৮১০)
তাই মুমিন কখনো আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হতে পারে না। তারা সর্বদা আল্লাহর ওপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখবে। এবং আল্লাহর ওপর সুধারণা পোষণ করবে। প্রিয় নবী (সা.) তাঁর উম্মতকে এই শিক্ষাই দিয়েছেন। জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মৃত্যুর তিন দিন আগে তাঁকে আমি এ কথা বলতে শুনেছি যে তোমাদের সবাই যেন আল্লাহর প্রতি উত্তম ধারণা পোষণরত অবস্থায় মারা যায়। (মুসলিম, হাদিস : ৭১২১)
তা ছাড়া মহান আল্লাহর ব্যাপারে বান্দা যে ধরনের ধারণা পোষণ করে, মহান আল্লাহ তার সঙ্গে সে রকম ব্যবহার করেন। যারা আল্লাহর ওপর অগাধ বিশ্বাস রাখে এবং সর্বাবস্থায় তাঁর সাহায্য পাওয়ার দৃঢ় আশা রাখে, মহান আল্লাহ তাদের সাহায্য করেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ বলেছেন— আল্লাহ বলেন, ‘আমার সম্পর্কে আমার বান্দার ধারণার মতোই ব্যবহার করে থাকি। ’ (বুখারি, হাদিস : ৭৫০৫)
তিরমিজির বর্ণনায় এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমাকে আমার বান্দা যেভাবে ধারণা করে আমি (তার জন্য) সে রকম। যখন সে আমাকে মনে করে সে সময় আমি তার সঙ্গেই থাকি। সুতরাং সে আমাকে মনে মনে স্মরণ করলে তাকে আমিও মনে মনে স্মরণ করি। আমাকে সে মজলিসে স্মরণ করলে আমিও তাকে তাদের চেয়ে ভালো মজলিসে (ফেরেশতাদের মজলিসে) মনে করি। সে আমার দিকে এক বিঘত এগিয়ে এলে আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই। যদি সে আমার দিকে এক হাত এগিয়ে আসে, তবে তার দিকে আমি এক বাহু এগিয়ে যাই। সে আমার দিকে হেঁটে অগ্রসর হলে আমি তার দিকে দৌড়ে এগিয়ে যাই। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৬০৩)
অতএব আমাদের উচিত, সর্বদা আল্লাহর অগাধ বিশ্বাস ও ভরসা রাখা, যেকোনো পরিস্থিতিতে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া এবং তিনি সাহায্য করবেন এ কথা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করা। কখনো গুনাহ হয়ে গেলে খাঁটি তাওবা করে তাঁর কাছেই ফিরে আসা, তাঁর প্রতি সুধারণা পোষণ করা। মহান আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন।