কালাশ পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের একটি ক্ষুদ্র জাতি। এরা সংখ্যায় প্রায় ৩০ হাজার। এদের নিজস্ব ভাষা, হরফ, ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে। অনেক ইতিহাসবিদের মতে, এরা গ্রিক বীর আলেকজান্ডারের সেনাদলের বংশধর। খ্রিস্টপূর্ব ৩২৭-৩২৫ বছর আগে আলেকজান্ডার ভারতীয় উপমহাদেশ অভিযানে এসেছিলেন। আলেকজান্ডার তাঁর অভিযানকারী সেনাদলের একটি অংশ নিয়ে ব্যাবিলনের (প্রাচীন ইরাকের রাজধানী) পথে যাত্রা করেন। অবশিষ্ট সেনারা ভারতীয় উপমহাদেশে থেকে যায়। থেকে যাওয়া এ সেনাদল থেকেই পরবর্তীকালে উদ্ভব হয় কালাশ জাতির।
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের চিত্রল জেলায় কালাশদের আবাসভূমি। এখানকার তিনটি নির্জন পর্বত উপত্যকায় কালাশ জাতি বাস করে। কালাশরা কথা বলে কালাশ, ফারসি ও উর্দু ভাষায়।
একসময় কালাশদের প্রায় সবাই বহু দেবতাবাদে (সনাতন, কিন্তু হিন্দু নয়) বিশ্বাস করত। বর্তমানে বেশির ভাগ কালাশ মুসলিম। একসময় কালাশদের আবাসভূমি বেশ বড় ছিল। এটি বর্তমানে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তবে আফগানিস্তানের কালাশরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর সে দেশের কালাশ এলাকার নামকরণ হয় নুরিস্তান (আলোর ভূমি) এবং সেখানকার কালাশরা নুরিস্তানি নামে পরিচিতি পায়।
প্রাচীন গ্রিক ইতিহাসে এই অঞ্চলটিকে ‘ককেসাস ইন্ডিকাস’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। এখানেই প্রবল বেগে প্রবাহিত হয়ে চলেছে কুনার নদী। স্থানটির নৈসর্গিক সৌন্দর্য এককথায় অপূর্ব। তেমনি এখানকার নারীরাও পরমা সুন্দরী। রীতিমতো দুর্গম বলে পরিচিত এই ঐতিহাসিক স্থানের সঙ্গে পাকিস্তানসহ বহির্বিশ্বের বড় একটা যোগ নেই বললেই চলে।
এই গ্রামের অধিবাসিনীদের রূপ-সৌন্দর্যের বর্ণনা ভাষায় বর্ণনা করা দুরূহ ব্যাপার। পাকিস্তানের অন্য জনগোষ্ঠীর সঙ্গে এদের সভ্যতা, সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা, ধর্ম, সমাজব্যবস্থা, চেহারা—কোনো কিছুরই সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায় না। এই একুশ শতকেও এদের জীবনযাত্রা অনেকটা প্রাচীনকালের মতো।
সেলজুক তুর্কিদের আমলে কালাশ উপজাতির বেশির ভাগ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে।
কালাশ উপজাতির অধিবাসীরা তাদের জীবনযাত্রায় আজও আলেকজান্ডারের আমলের প্রাচীনতা বজায় রেখেছে। যাতায়াতের জন্য চার চাকার মোটরগাড়ি আর দুই চাকার বাইকের পরিবর্তে তারা এখনো অশ্ব আর গোশকট ব্যবহার করে, সাঁঝবেলায় ইলেকট্রিক লাইটের পরিবর্তে জ্বলে ওঠে মশালের আলো। নেই কোনো টেলিফোন, স্মার্টফোন আর ইন্টারনেটের অস্তিত্ব। এমনকি অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধেও তারা আধুনিক মেশিনগান বা পিস্তলের পরিবর্তে প্রাচীনকালের তীর-ধনুক, ভল্ল আর অসিই ব্যবহার করে। কালাশ উপজাতির অধিবাসীরা নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করে পশুপালন, কৃষিকার্য আর হস্তশিল্প থেকে। বাণিজ্যিক লেনদেনে প্রাচীনকালের পণ্য বিনিময় প্রথা বা বার্টার সিস্টেমের চল রয়েছে।