Friday, December 1, 2023
spot_img
Homeসাহিত্যআমিনুল ইসলামের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী কবিতা

আমিনুল ইসলামের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী কবিতা

বাঘ-হরিণের সংসার

শুধু এতটুকু সবুজ আড়াল—শুধু এতটুকু শুদ্ধছায়া
আড়ালে থাবার দাগ,—দৃষ্টিতে বিধ্বস্ত ছায়া।

শুধু এতটুকু তৃণভূমি—শুধু এতটুকু জলাশয়
তৃণভূমি রেঙে যায় লালে,—
খুলিতে ও কঙ্কালে ভরে ওঠে জলাশয়।

তো হরিণ যাবে কোথায়? কোথায় থাবাহীন
সেই বনভূমি?
চিড়িয়াখানার জীবন্তকবর তার নয়,
তার দৌড়;
দৌড় শেষে মৃত্যু, তবু দৌড়ই তার জীবন।

অথচ অভিযোগ—অভিযোগ—এবং অভিযোগ—
বাঘ সাম্রাজ্যবাদী—বাঘ কর্তৃত্বপরায়ণ,
বাঘের পায়ে লংঘিত সীমানা
আরে ভাই কীসের নোম্যান্স ল্যান্ড!
দ্যাখো—বাঘ কেড়ে নেয়—
মৌরসি পিপাসার ঘাট,
নৃত্যের উঠোন—ধূপছায়া স্বপ্নের আকাশ!

আহা বাঘের কী দোষ! এত এত শক্তি নিয়ে
সে তো বাঘ ছাড়া অন্যকিছু হতেও পারে না!
জলের অথই নিয়ে সমুদ্র কি হতে পারে
শান্তজলের সোনাদিঘি!
আর এত যে ডাক্তার
এবং এত যে খুলি-বিশেষজ্ঞ,
জঙ্গলের দরবারে জ্বলজ্বলে শতরত্নসমাহার,
পুরস্কৃত মেধায় তারা কি পারে বানাতে বাঘকে অ-বাঘ?

অতএব জাতিসংঘ না মানুক,
তুলে রাখুন শেয়াল সেমিনার,
একথা শোণিতসত্য,—ও হরিণের সংসার ঘ্রাণ-তফাতে।

****

বিশ্বায়িত গ্রাম

গেরস্তপাড়ায় আজ ঘুম নেই
লাঠিহাতে দিন
লাঠিহাতে রাত;
এই নিয়ে অভিযোগ
স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নিয়ে
উচ্চকণ্ঠ
ডাকাতিয়া গ্রাম।

অতএব লাঠিগুলো সন্ত্রাসের উৎস কি না
এমত তদন্ত নিয়ে তৎপর
মধ্যবর্তী জাতিসংঘপাড়া।

শ্বাসছোঁয়া দূরে—চেয়ে আছে
ভিন্নচোখে—
রাতাভিজ্ঞ লক্ষ্মীপেঁচা, সার্কাসের গাধা
আর ফর্সা-উরু মিডিয়ার মেয়ে।

****

তবুও চাই ভালোবাসা

আহ্নিকগতির রাস্তায় টায়ার পুড়িয়ে আকাল ছিঁড়েছে এই কয়মাস—
যখন শ্বাপদ নখরের সীমায় দুর্ভিক্ষের মাংস হয়েছিল এ হৃদয়;
অথচ প্রত্যাবর্তনে তেমন কোনো সংশয় ছিল না জেনেও কেন যে
আমি এটুকু সময় নিয়ে জাগলারের মতন লোফালুফি করতে পারিনি!
উল্টো আমাকে ইরাক বানিয়ে বুশ-সময় তামাশা করেছে অন্ধকারে।
আজ জরুরি দুটি রেডক্রসের হাত; এক ইরাক বুক নিয়ে পুনর্গঠিত
হতে চাই আমি—পুনর্গঠিত হতে চাই। অতএব ঐশ্বর্যের পাহাড় নিয়ে
তুমি আর থেকো নাকো দূরে। সত্য যে প্রণয়ের রাজ্যেও সাম্রাজ্য—
বাদিতার সমালোচক আমি; কিন্তু এও তো সত্য যে—গরজ বড় বালাই,
এবং শত আঘাতেও এ সত্যের রং চটেনি আজও। এই হৃদয় বাগদাদ
জাদুঘরের চেয়েও পুরোনো; লুণ্ঠন-পূর্ববর্তী অবস্থা ফিরে আসবে না,
জানি। আর খোয়া গেছে এমনকি প্রত্নধনের লিস্টও; তবু নাই মামার
ভিটায় এসে খাড়া হোক কানা মামা। ভালোবাসার স্বার্থে যে কোনো
শর্তেই রাজি আমি; রাজি এমনকি অধীনতামূলক মিত্রতার সনদে
সই দিতেও। অতএব ফিরে এসো তুমি—মার্কিনী চরণে হলেও এসো।

****

প্রেয়সীকে

রীমা, তোমাকে খুব ভালো লাগে আমার
আহা, ক্ষেপছো কেন!
সত্যিই বলছি!
কী সুন্দর তোমার অই জোড়াদিঘি চোখদুটি!

পূবের হাওয়ায় দোলায়মান কৈশোর আর যৌবনের
সবুজ আইলে দাঁড়িয়ে
এভাবেই জানিয়েছিলাম
আমার সোনালি রঙের অনুভূতি;
দুপাশের সবুজেরা
মাথা নেড়ে দিয়েছিল
সম্মতিসূচক ভোট;
তোমার আলোড়িত চোখের দিকে তাকিয়ে
আমি জেনেছিলাম—
তুমিও সবখানি বুঝেছো
রোদেলা অনুভবের ব্যঞ্জনা, স্বপ্নিল ইঙ্গিতের আড়াল।

অথচ এখন তুমি শুনতে চাও
লাভ ইউ!
ওয়াও!
আই অ্যাম ইয়োর্স!
—এইসব পরিভাষা।

আইইএলটিএসে আট নম্বর পাওয়া
এই আমি তো ওসব সম্বোধনে ডাকতেই পারি
কিন্তু বিশ্বাস করো লক্ষ্মীটি,
‘তোমাকে ভালোবাসি’—কথাগুলো
উচ্চারণের সাথে সাথে—
আমার বাদামি বিশ্বাসকে স্পর্শ করে
আমার দোআঁশ অনুভবকে দুলিয়ে
আমার গাঙ্গেয় রক্তে ঢেউ তুলে
রাতের সমুদ্রস্রোত হয়ে ওঠে শিহরণ
যেভাবে ভ্রামণিক ডিশে অভিজ্ঞ রসনার পাশাপাশি
আমার তৃপ্তিকেও উদ্দীপিত করে তোলে
গৌড়ের টাটকা মাছের ঘ্রাণ,
জামাই সোহাগা ভাতের সুগন্ধ।

এমতাবস্থায়, শুধু স্মার্ট হওয়ার বিকিনি লোভে,—
তুমিই বলো,
কেন আমি অমন বঞ্চিত হবো প্রেয়সী!

****

কবির ভোট

গাঙের দেশের কবি আমি
শব্দই আমার সব
ভালোবাসি স্রোতের সেতার
ঢেউয়ের কলরব।

ভালোবাসি পাতার বাঁশি
মাটির সুরের স্বাদ
ভালোবাসি তাজিনডঙের
ঝরনা অনুবাদ;

ভালোবাসি ঘুমের ঠোঁটে
আলিঙ্গনের গান
সে যদি হয় শাখ-ই নবাত
হাফিজ আমার প্রাণ;

ভালোবাসি মুআল্লাক্বা
হাওয়ার মাহফিল
খৈয়াম রুমি যেথায় রচে
প্রেমের অন্ত্যমিল।

কিন্তু উল্টো হায়েনারা
চালায় আগ্রাসন
বক্ষে ঘৃণা, হাতে বোমা,
মিথ্যা উচ্চারণ;
শিশুহত্যা—নারীহত্যা
হাসপাতালে বু…ম!
পশ্চিমা সভ্যতা রচে
মাৎস্যন্যায়ের ধুম;

ভয়ে পালায় আনকা হুমা
হাওয়ার গা যে লাল!
সানবার্ডেরা মরিয়া হয়ে
খুঁজছে খেজুর ডাল;

দারবিশ তো স্বর্গলোকে
হিবা কামাল খুন
কবি ফিনিসড! উদ্বেলিত
দখলবাজের নুন!

যেটুকু আজ দখলমুক্ত
সেও কারাগার
গিনিপিগ ওই মানুষগুলো
অস্ত্র পরীক্ষার;

লাইলি মজনু ঘুমিয়ে ছিল
বালুর হকিকত
কবর কাঁপে: এই কি তবে
আসলো কেয়ামত?

কেউবা আবার হাতে নিয়ে
একই রকম প্ল্যান
“আমরা আছি তোমার সাথে”
—গাইছে কোরাস গান…

সাঈদ তো ঊর্ধ্বলোকে
তারার পারাবার
চমস্কি? সে একলা মুখে
বলবে কত আর!

“গ্রাস করলে তাদের ভিটা
লুটলে তাদের ধন
বছর বছর মরে ও ঠকে
মরিয়া তাদের পণ…”

—মুখ ফসকে জাতিসংঘ
পশ্চিমাদের পুতুল
যেই বলেছে—এসব কথা
অমনি হুলস্থুল!

নেই কো আমার এফ সিক্সটিন
নেই কো টমাহক
আমি কবি আমার হাতে
পঙক্তি রচার ছক।

সৃষ্টি করাই ধর্ম আমার
সৃষ্টিই আমার প্রেম
কেন আমায় দেখতে হবে
গণহত্যার গেম?

হাততালি নয়,—হে লুণ্ঠক
হত্যাকারীর জোট
তোদের বিরুদ্ধে রেখে গেলাম
কবির একটি ভোট।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments