Saturday, June 10, 2023
spot_img
Homeসাহিত্যআমিনুল ইসলামের একগুচ্ছ কবিতা

আমিনুল ইসলামের একগুচ্ছ কবিতা

কন্ট্রাস্ট কালার

যখন যমুনার ঢেউয়ে ভেসে ভেসে
জলে ভেজা চাঁদ দেখে—
অনুরাগের ধবল চিত্রকল্প-
ছায়পথ-নীহারিকাদের খেলা,
যেমন ইচ্ছে ধার নেয়
সুদমুক্ত বলাকার পাখা, কিংবা
পরীস্নানের মুদ্রায়
ধুয়ে নেয় পালকের পাল,—
তখন তার নিঃশ্বাস ছুঁয়ে-
জোছনায় উৎসাহিত আশীবিষ
বিষ ঢালে—
দুধের বাটিতে ধোয়া
নদীবর্তী হট্টিটির বাসায়।

****

বাঘ ঢুকেছে বাগানে

প্রস্তুত জমিতে বীজও দিয়ে গেছেন
তারা আমাদের পূর্বজন-স্মরণীয়;
নার্সারি হতে চারা নিয়ে আমরা
গড়ে তুলেছি বাগান;
কালো গাভির মতন দুধ দিচ্ছে গাছগুলো।

আমাদের ক্লান্তি কিংবা বেখেয়াল
অথবা অসতর্কতাও হতে পারে-
গাছের ফাঁকে ফাঁকে এবং
বাগানের আনাচেকানাচে
বেশকিছু ঝোপঝাড় গজিয়ে উঠেছে;
শেওড়ার বন নয়—তবু বনজ্ঞানে
আমাদের বাগানে ঢুকে পড়েছে বাঘ।

বাঘের ভয়ে আমরা শান্তির ছায়া
আর সুস্বাদু স্বাদ থেকে
বঞ্চিত থাকাটাই নিরাপদ ভাবছি।

বাঘের তো কত নামই হয়-
চিতাবাঘ-মেছোবাঘ-গেছোবাঘ
আর বাঘদের রাজা
রয়েল বেঙ্গল টাইগার তো আছেই;
তো আমরা এই বাঘটিকে
সন্দেহের তালিকায় রাখতেই পারি।

****

তারপরও তোমাকে ভালোবাসার কথা মিথ্যা নয়

কিন্তু তারপরও তোমার জন্য এ আমার ভালোবাসা
মিথ্যা নয়—নারী;
তোমার ওপর অত্যাচার করি
যেমনটি করি আমি
আমার নিজের ফুসফুসের ওপর
চুমু দিয়ে
বেনসন অ্যান্ড হেজেসের ঠোঁটে:
আহ সুখ!
নিজ ফুসফুসের প্রতি ভালোবাসা
আমার মিথ্যা নয়,
মিথ্যা নয়কো তোমার জন্য আমার প্রেমও;

যেখানেই যাই, এ আমার অনুভবে
জড়িয়ে থাকে তোমার ঘ্রাণ
যেভাবে ‘মোগল-যুগের তিলোত্তমা
চিরযুগের সুন্দরী’র
গায়ে লেগে থাকতো আতর-ই জাহাঙ্গীরী।

আমি জানি, আমার অফিসের বস অ্যানুয়াল ডিনারে
তোমার দিকে লালসার চোখে তাকায়
ভুলে গিয়ে যা ভোলার নয় তা-ও,
এবং সেটা জেনেও ঘৃণা লুকিয়ে দুচোখে
হাসিমুখ হ্যান্ডশেক করতে হয় তোমাকে,
হৃদয়ের গভীরে বিরক্ত হয়ে ওঠো তুমি;

আমি নিজেও লজ্জিত যে, আমার মাসতুতো ভাই
তোমার ছোটবোনকে ধর্ষণ করেছিল
তার থিসিস পেপার দেখে দেওয়ার উছিলায়;
কিন্তু তারপরও তুমিই বলো,
ওদের এসব দায় কীভাবে বইতে পারে
আমার অষ্টম এডওয়ার্ড ভালোবাসা?
কত ফাইভ স্টার হোটেল!

কত ভিভিআইপি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন
এবং কত বাগানবাড়ি!
অথচ আমাদের ছোট্ট বাসাটি!
সেটাই তো আমাদের মুসাম্মন বুর্জ।

অনেক ঘাটতি, অনেক সীমাবদ্ধতাও
দুচারটি বদাভ্যাস
বেশ কিছু উপলব্ধিগত ভুল;
কিন্তু তোমার জন্য যে ভালোবাসা
সেখানে কোনো ঘাটতি নেই;
তোমাকে ঘিরে রচিত আমার ভালোবাসার রাজ্যে
কেউ রচতে পারেনি
ভারত-পাকিস্তান দিন-রাত;

গুচ্ছ অভ্যাসের মাঝে তোমাকে ভালোবাসাই-
আমার সবচেয়ে বড় অভ্যাস,
রবীন্দ্রনাথের গান ভালোবাসো তুমি,
তাঁর সান্ধ্য উপলব্ধির মন্দিরে এসে
কড়া নেড়েছিল—
কোনো এক অমীমাংসিত উপস্থিতি,
রবীন্দ্রনাথ নাম দিয়েছিলেন—
জীবনদেবতা;
কিন্তু কোনো অলৌকিক সত্তা নয়—
রক্তেমাংসে গড়া তোমাকেই
সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে আমার,
এটা আমার হৃদয়ের চূড়ান্ত উপলব্ধি;

আমার ভালোবাসা নিয়ে এরপরও
প্রশ্ন ওঠে যদি, উঠুক—
যতবারই উঠবে সেই প্রশ্ন,
ততবারই রোদেলা কণ্ঠে বলবো
তোমাকে ভালোবাসি, তোমাকে,—
যেমন করে সত্য উচ্চারণ করেন
হৃদয় মণ্ডল স্যার
বিভ্রান্ত ছাত্রদের উপর্যুপরি লিডিং কোশ্চেনের জবাবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments