এক ঘরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া ছিল। পরিবারের এক মুরুব্বি তাদের কাছে যান, যেন দুইজনের মিলমিশ করিয়ে দিতে পারেন। দুজনের কথাবার্তা শোনার পর বুঝতে পারলেন তাদের ঝগড়ার মূল কারণ হলো ‘সংসারে কার হুকুম চলবে’।
স্বামী চান তার কথা মানতে হবে, আর স্ত্রী বলেন আমার কথাই চলবে। এটাই তাদের সব ঝগড়ার মূল।
মুরুব্বি যখন স্ত্রীকে বোঝাতে গেলেন, স্ত্রী ক্ষোভ ঝেড়ে বলল— ‘ও সবকিছু নিজের মনমতো করে, আমার একটা কথাও শুনে না।’
মুরুব্বি বললেন, ‘এটা কোনো সমস্যা না, তুমি স্বামীকে কর্তা মেনে নাও, তাহলেই ঝগড়া খতম।’ স্ত্রী বলে, ‘এটা কীভাবে সম্ভব? আমার তো তাহলে কোনো স্বাধীনতাই থাকবে না।’
মুরুব্বি বললেন, ‘তোমাদের নিত্যদিনকার ঝগড়ার বাচ্চাদের জীবন ধ্বংস হচ্ছে, সংসারের সবকিছুই এলোমেলো, যদি স্বামীকে কর্তা মেনে নিলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়, তো এতে তেমন কী ক্ষতি?’
স্ত্রী বলে, ‘একথা ওনাকে গিয়ে বোঝান, উনি কেন আমাকে সহ্য করতে পারছেন না?’
মুরুব্বি যখন একথা শুনলেন, তাৎক্ষণিক দাঁড়িয়ে গেলেন। তারপর বললেন, ‘মনোযোগ দিয়ে শুনো। ভিন্ন চিন্তার দুজন মানুষের একসাথে থাকতে হলে যেকোনো একজনকে ছোট হতে হয়। দশজনের মধ্যে নয়জন নিজেকে ছোট বানিয়ে নেয়, তখনই গিয়ে একজন নেতা হয়ে ওঠে এবং একতা তৈরি হয়। আর যেখানে শৃঙ্খলা ও একতা থাকে না, সেখানে কেবলই বিবাদের জন্ম নেয়, তারপর তারা ঝড়ো গতিতে এগিয়ে যায় ধ্বংসের দিকে। যেখানে প্রত্যেকেই বড় হতে চায়, সেখানে একতা জন্ম নিতে পারে না। নয়জনের কোরবানির কারণেই দশজন সংঘবদ্ধ হতে পারে এবং তার ফলাফল পায়। কিন্তু যেখানে কোরবানি করার কেউ নেই, সেখানে দশজনেই ধ্বংসের দিকে মুখ থুবড়ে পড়ে।’
ছোট হতে রাজি না হওয়ার মনোভাবই সমস্ত খারাবির মূল কারণ। মানুষ ছোট হতে চায় না, অথচ মৃত্যু এটাই প্রতিদিন কানে কানে বলে যায়— তুমি নিজেকে যতই বড় ভাবো, আমার কাছে কিছুই না।
নিজেদের মধ্যকার একজনকে বড় মানলে, তার বিপরীতে সবাই নিজেকে ছোট করলে, এর ফলাফল হবে পুরো জাতি শৃঙ্খলাবদ্ধ ও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
মানুষ ব্যক্তিগত ‘বড়ত্ব’-কে কোরবানি দিলে জাতিগত ‘বড়ত্বের’ সন্ধান পায়। কিন্তু কোনো লোকই এই সহজ সমাধান কবুল করে নিতে রাজি নয়।
সে মিছেমিছি বড়ত্ব নিয়ে অহংকার করতে ভালোবাসে, অথচ মৃত্যু তাকে সর্বকালের জন্য ছোট বানিয়ে কবরে ঠেলে দিতে দাঁড়িয়ে আছে দরজার ওপাশেই।