Thursday, June 1, 2023
spot_img
Homeবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিআবিষ্কৃত হলো বিশ্বের বৃহত্তম ব্যাকটেরিয়া, যার আকার মানুষের চোখের পাতার মতো

আবিষ্কৃত হলো বিশ্বের বৃহত্তম ব্যাকটেরিয়া, যার আকার মানুষের চোখের পাতার মতো

এখনও পর্যন্ত সমস্ত পরিচিত ব্যাকটেরিয়াকে শুধুমাত্র একটি শক্তিশালী মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করেই দেখতে পাওয়া যায়। এবার এমন একটি ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কৃত হয়েছে যা আপনি আগে কখনও দেখেননি। বৃহস্পতিবার সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, নতুন এই ব্যাক্টেরিয়াটি লেসার অ্যান্টিলেসের গুয়াডেলোপে পাওয়া গেছে। যা খালি চোখে দৃশ্যমান হওয়ার মতো যথেষ্ট বড় এবং চোখের পাতার আকারের।  থিওমারগারিটা ম্যাগনিফিকা – নামের এই ব্যতিক্রমী আকারের ব্যাকটেরিয়াটির  গড় কোষের দৈর্ঘ্য ৯,০০০ মাইক্রোমিটারের বেশি, ব্যাকটেরিয়াটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ১ সেন্টিমিটার (০.৪ ইঞ্চি)। বেশিরভাগ ব্যাকটেরিয়া প্রজাতির কোষের দৈর্ঘ্য প্রায় ২ মাইক্রোমিটার হয় , যদিও বড় কোষগুলি ৭৫০ মাইক্রোমিটার দৈর্ঘ্যেরও হয়ে থাকে। ক্যালিফোর্নিয়ার ল্যাবরেটরি ফর রিসার্চ ইন কমপ্লেক্স সিস্টেমের সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী এবং ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ এনার্জি জয়েন্ট জিনোম ইনস্টিটিউটের গবেষক জিন-মেরি ভল্যান্ডের মতে, টি. ম্যাগনিফিকা ২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। ৬,২৫,০০০ এর বেশি ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়া একটি একক T. ম্যাগনিফিকার পৃষ্ঠে অনায়াসে ফিট হতে পারে। ব্যাকটেরিয়াটি উদ্ভিদ এবং জীবন্ত প্রাণীর পৃষ্ঠে বসবাস করে।

কিভাবে ব্যাকটেরিয়াটি তার আকার বজায় রাখে?

পূর্বে মনে করা হয়েছিল যে ব্যাকটেরিয়াগুলি খালি চোখে দৃশ্যমান নয়।  তাই বোঝা যেত না এটি পরিবেশের সাথে কিভাবে যোগাযোগ করে এবং শক্তি উৎপাদন করে।

 কিন্তু থিওমারগারিটা ম্যাগনিফিকার ঝিল্লির মত একটি পদার্থ রয়েছে যা শক্তি উৎপাদন করতে পারে যাতে এটি শুধুমাত্র ব্যাকটেরিয়ামের পৃষ্ঠের উপর নির্ভর না করে তার কোষের মাধ্যমে পুষ্টি শোষণ করতে। ভল্যান্ড হার্ড এক্স-রে টমোগ্রাফি, কনফোকাল লেজার স্ক্যানিং মাইক্রোস্কোপি এবং ট্রান্সমিশন ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপির সাহায্যে 3D তে দৈত্যকার কোষগুলিকে কল্পনা করতে এবং পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন।  বেশিরভাগ ব্যাকটেরিয়ার জিনগত উপাদান তাদের একক কোষের ভিতরে অবাধে ভাসমান, কিন্তু একটি টি. ম্যাগনিফিকা কোষের ডিএনএ থাকে ছোট বস্তায় যার একটি ঝিল্লি থাকে, যাকে পেপিন বলা হয়। গবেষকরা বলছেন এটি একটি খুব আকর্ষণীয় আবিষ্কার যা অনেক নতুন প্রশ্নের সমাধান করতে সক্ষম।  ভোল্যান্ড বলছেন , এটি আসলে আরও জটিল কোষের বৈশিষ্ট্য বহন করছে , যা থেকে বোঝা যায় আমাদের দেহ বা প্রাণীজগৎ এবং গাছপালা কিভাবে তৈরী হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, গুয়াডেলোপে অগভীর গ্রীষ্মমন্ডলীয় সামুদ্রিক ম্যানগ্রোভ জলাভূমিতে ক্ষয়প্রাপ্ত ম্যানগ্রোভ পাতার উপরিভাগে পাতলা সাদা ফিলামেন্ট হিসাবে টি. ম্যাগনিফিকা  ব্যাকটেরিয়াটি আবিষ্কৃত হয়েছিল। এই বিশাল ব্যাকটেরিয়াগুলি সালফারযুক্ত জলের তলদেশে পলির উপর বৃদ্ধি পায়, যেখানে তারা সালফারের রাসায়নিক শক্তি ব্যবহার করে এবং শর্করা তৈরি করতে আশেপাশের জল থেকে অক্সিজেন ব্যবহার করে। গড় ব্যাকটেরিয়ামের চেয়ে অনেক বড় হওয়ার কারণে, একটি টি. ম্যাগনিফিকা সেল তাদের পরিবেশে একই সময়ে অক্সিজেন এবং সালফার উভয় অ্যাক্সেস করতে পারে। আকারে বড় হওয়ার কারণে তাদের শিকারী দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে চিন্তা করার দরকার নেই।

একটি মাইক্রোবিয়াল ‘ব্ল্যাক বক্স’
ক্যালিফোর্নিয়ার লরেন্স বার্কলে ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির একজন সিনিয়র বিজ্ঞানী তানজা ওয়াইকে মনে করেন যে সম্ভবত বিশ্বের অন্যান্য ম্যানগ্রোভগুলিতে বিশাল ব্যাকটেরিয়া বা সেই সম্পর্কিত কোনো প্রজাতি পাওয়া যেতে পারে।বুধবার সিএনএনকে সাক্ষাৎকার দেবার সময়ে বিজ্ঞানী ওয়াইকে বলেন, মাইক্রোবায়াল বিশ্ব হলো একটি কালো বাক্সের মত । যা দেখে আমাদের মনে হয় আমরা জীবাণু জগত সম্পর্কে কত কম জানি।  বিজ্ঞানী তানজা ওয়াইকে মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অফ এনার্জি জয়েন্ট জিনোম ইনস্টিটিউটের মাইক্রোবিয়াল জিনোমিক্স প্রোগ্রামের নেতৃত্ব দেন, তিনি এই গবেষণার সিনিয়র লেখকদের একজন। টি. ম্যাগনিফিকা প্রমান করেছে যে বড় এবং আরও জটিল ব্যাকটেরিয়া কত সহজে লুকিয়ে থাকতে পারে, অথচ আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় না।  

সূত্র : সিএনএন

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments