Friday, July 26, 2024
spot_img
Homeনির্বাচিত কলামআবার বাস-ট্রেন সংঘর্ষ: লেভেল ক্রসিংগুলো কি অরক্ষিতই থাকবে?

আবার বাস-ট্রেন সংঘর্ষ: লেভেল ক্রসিংগুলো কি অরক্ষিতই থাকবে?

নারায়ণগঞ্জ শহরের ১নং লেভেল ক্রসিংয়ে বাসের সঙ্গে ট্রেনের ধাক্কায় শিশুসহ তিনজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় কমপক্ষে ৮ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর। জানা গেছে, গত রোববার সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে আসা একটি দ্রুতগামী ট্রেন যানজটের কারণে রেললাইনের ওপর আটকে থাকা যাত্রীবাহী বাসকে ধাক্কা দেওয়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

রেলক্রসিংগুলোয় ৯৫ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী সেখানে কোনো প্রহরী না থাকা-এ কথা যেমন সত্য; তেমনি পথচারী বা বাস-ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালকরাও এর দায় এড়াতে পারেন না। সাধারণত দুই কারণে রেলপথে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়-রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় এবং ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে। ট্রেনের নিচে কাটা পড়লে রেল কর্তৃপক্ষ কোনো দায় নেয় না; উলটো মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। অন্যদিকে, রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দায় এড়ানোর চেষ্টা করা হয়।

রেলওয়ের হিসাবমতে, সারা দেশে রেলক্রসিংয়ের সংখ্যা ২ হাজার ৫৪১। এসব রেলক্রসিংয়ে গত কয়েক বছরে অন্তত হাজারখানেক দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং এতে আহত-নিহতের সংখ্যাও প্রচুর। দেশের অসংখ্য অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে নামকাওয়াস্তে একটি নোটিশ টাঙিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে রেল বিভাগ। এটি অগ্রহণযোগ্য। অবৈধ রেলক্রসিংয়ের পাশাপাশি বৈধগুলোতেও প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনা রোধে ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে রেলক্রসিংগুলো অবশ্যই সুরক্ষিত করতে হবে।

নারায়ণগঞ্জ শহরের লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার জন্য যানজট ও ভাঙা লোহার বার বা ব্যারিয়ারকে দায়ী করেছেন অনেকে। অভিযোগ রয়েছে, এখানে রেল ক্রসিংয়ের একপাশের লোহার বার বা ব্যারিয়ারটি দীর্ঘদিন ধরে ভাঙা থাকলেও এটি সংস্কারের বা নতুন করে স্থাপনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। নারায়ণগঞ্জ শহরজুড়ে যানজটের কারণে প্রায় সময়ই রেললাইনের ওপর নানা ধরনের যানবাহন আটকে থাকতে দেখা যায়। এ অবস্থায় এ দিকটায় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেওয়া জরুরি ছিল। কিন্তু তারা এক্ষেত্রে উদাসীন থেকেছেন বলেই সেখানে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, যা মেনে নেওয়া কষ্টকর।

বলার অপেক্ষা রাখে না, দুর্ঘটনার কারণে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটে। এ কারণে যাত্রী ভোগান্তির পাশাপাশি রেলওয়েকে লোকসান গুনতে হয়। দুর্ঘটনা রোধ ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে লেভেল ক্রসিংগুলো অবশ্যই সুরক্ষিত করতে হবে। বাস্তবতার নিরিখে অবৈধ লেভেল ক্রসিংগুলো উচ্ছেদ করা সম্ভব না হলে দ্রুত সেখানে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিতে হবে।

উল্লেখ্য, জনবল সংকটের কারণে সারা দেশে বিস্তৃত ২ হাজার ৯০০ কিলোমিটার রেললাইন অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। অরক্ষিত থাকায় রেললাইনকেন্দ্রিক দুর্ঘটনা যেমন বাড়ছে, তেমনি যাত্রীদের ওপর ঢিল ছোঁড়া, ছিনতাই ও চুরি-ডাকাতির ঘটনাও ঘটছে। আইন অনুযায়ী রেললাইনের দুই পাশে ২০ ফুট জায়গায় সবসময় ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকে। কাজেই আইনগতভাবে রেললাইনের ওপর দিয়ে হাঁটাচলাও অপরাধ হিসাবে গণ্য হওয়ার কথা।

অবশ্য এসব ব্যাপারে দেশের মানুষও খুব একটা সচেতন নয়। নিয়ম-কানুন ও আইন সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিয়ে লেভেল ক্রসিংগুলো সুরক্ষিত করার পদক্ষেপে নেওয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments